
You must need to login..!
Description
মতিউল আলম, বিএমটিভি নিউজঃ অজ্ঞাত কিশোরী হত্যার ২৪ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করল ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। জমি নিয়ে বিরোধে সহোদর ভাইকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেলেন ধোবাউড়ার টাংগাটি মধ্যপাড়ের আবদুর রাজ্জাক মন্ডল (৬০)। রাজ্জাক চাকুরীর দেয়ার প্রলোভনে নরসিংদীর মাধবদী থানার খিলগাঁও গ্রামের দুলাল মিয়ার কন্যা রিবা আক্তার (১৫)কে বিয়ে করেন। চতুর রাজ্জাক ভাই আমিনুল ইসলামকে ফাঁসাতে তার ২ সহযোগীর মাধ্যমে ধর্ষনের পর রিবা আক্তারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে রিবার লাশ আমিনুলের বাড়ির পাশে ফেলে রাখে।
ডিবির ওসি মোঃ সফিকুল ইসলাম জানান, গত ১৫ মার্চ জেলার ধোবাউড়া থানার টাংগাটি গোয়াতলা পাকা রাস্তার পাশে অজ্ঞাত কিশোরী লাশ পাওয়া যায়। ডিবি পুলিশ কিশোরীর লাশ পাওয়ার সংবাদে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। প্রথমে লাশের পরিচয় উদঘাটন করে। নিহত তরুনী রিবা আক্তার (১৫) বর্তমান ঠিকানা গাজীপুর জিএমপি, গাছা থানার বড়বাড়ী গাছা রোডের আলী আকবর এর বাড়ীর ভাড়াটিয়া। তার বাবা দুলাল একজন অটো চালক।
তিনি আরো জানান, ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার, মুহাম্মদ আহমার উজ্জামান হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে ডিবিকে দায়িত্ব দেন। ডিবি ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে গত ১৬মার্চ বিকালে আব্দুর রাজ্জাক-কে গাজীপুর গাছা থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। আব্দুর রাজ্জক মন্ডল (৬০) ময়মনসিংহ ধোবাউড়ার টাংগাটি মধ্যপাড়ের মৃত-তৈয়ব আলীর পুত্র। সে গাজীপুর সিটির গাছা থানার গাছা রোড, বড়বাড়ীর শামীম-এর বাড়ীর ভাড়াটিয়া।
গ্রেফতারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন রাজ্জাক। রিবা আক্তারকে সংবাদকর্মী হিসেবে চাকুরী দেয়ার প্রলোভন দিয়ে আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল (৬০) ২ মাস পূর্বে রিবা আক্তারকে বিবাহ করেন।
রিবা আক্তার বিবাহ পরবর্তী সময়ে আব্দুর রাজ্জাক এর নিকট চাকুরী ও স্ত্রীর মর্যাদা পেতে চাপ প্রয়োগ করে। অপরদিকে আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল এর সহোদর ভাই আমিনুল ইসলাম এর সাথে পৈত্রিক সম্পত্তি ও জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের কারনে আমিনুল ইসলামকে হত্যা মামলার মতো গুরুতর অপরাধে ফাঁসিয়ে দিতে ও রিবা আক্তার এর চাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য হত্যার পরিকল্পনা করে।
হত্যাকান্ড সংঘটিত করতে আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল তার সহযোগী খুঁজতে গিয়ে আমিনুল ইসলাম এর সাথে জমিজমার বিরোধে জড়িত অপর দুই জনকে নিয়ে রিবাকে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। আমিনুল ইসলামকে ফাঁসিয়ে দেয়ার সুযোগ পেয়ে হত্যাকারীরা পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৪ মার্চ ১১টায় আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল রিবা আক্তার (১৫)কে গাজীপুর হতে ধোবাউড়া তার নিজ বাড়ীতে বেড়াতে আসার কথা বলে রওয়ানা করে এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ধোবাউড়ার গোয়াতলা কংশ নদীর তীরে এসে পৌঁছে। হত্যাকান্ডের পূর্ব পরিকল্পনা মতে রিবা আক্তার এর জন্য অপেক্ষমান থাকা পলাতক দুই হত্যাকারীকে কংশ নদীর পাড়ে পেয়ে আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল রিবা আক্তারকে তাদের নিকট হস্তান্তর করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রিবাকে পালাক্রমে ধর্ষণের পরে গলায় ওড়না প্যাচিয়ে শ্বাসরোধ করে রিবাকে হত্যা করে। হত্যার পর রিবা এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি আব্দুর রাজ্জাক নিয়ে যায়। আমিনুল ও তার পরিবারকে হত্যাকান্ডে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে আব্দুর রাজ্জাক রিবা এর পরনে থাকা প্যান্টের পকেটে আমিনুল ইসলাম এর ছেলে শহিদুল্লাহ ও রিবা আক্তার এর জন্ম সনদের দুইটি ফটোকপির কাগজ রেখে দেয়। আব্দুর রাজ্জাক অপর দুই হত্যাকারীর সহায়তায় নদীরপাড় হতে ধরাধরি করে রিবা আক্তার এর লাশ আমিনুলএর বাড়ীর নিকটবর্তী রাস্তার পাশের ধান ক্ষেতে রেখে দেয়। আব্দুর রাজ্জাক এর ভাড়াটিয়া বাসা হতে রিবা আক্তার এর লাশের পরিহিত প্যান্টের পকেটে পাওয়া জন্ম নিবন্ধনের একটি ফটোকপি ও রিবা আক্তার এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। এতদসংক্রান্তে ধোবাউড়া থানার মামলা নং-০৮, তারিখ-১৬/০৩/২০২২, ইং ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়েছে। পলাতক আসামীদেরকে গ্রেফতারে একাধিক টিম অভিযান পরিচালনা করছে।