You must need to login..!
Description
স্টাফ রির্পোটার,বিএমটিভি নিউজঃ ময়মনসিংহের নান্দাইলে অনুর্ধ্ব-১৭ ফুটবল দলের এক কিশোরী ফুটবলার ও নান্দাইল সরকারি শহিদ স্মৃতি আর্দশ কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় নান্দাইল থানায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ওয়াহিদুল আলম ফকির ফয়সালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে নির্যাতনের শিকার ঐ কিশোরী। এঘটনায় আজ বুধবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কিন্তু পুলিশ ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ হিসেবে মামলাটি নথিভুক্ত করেন। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ভুক্তভোগী ও তার পরিবার। নির্যাতনের শিকার ঐ কিশোরী ফুটবলার বলেন, ঘটনার পরদিন আমি বাবাকে নিয়ে ওসি স্যারের কাছে গেলে ওসি স্যার আলাদা কক্ষে নিয়ে সব কিছু খোলামেলা জিজ্ঞেস করে। আমার খুব লজ্জা লাগছিল তারপরও আমি সব বলেছি।
ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা-মা বলেন, আমাদের মেয়ে ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা করে। বড় হয়ে দেশ বিদেশে খেলে অনেক মেডেল পেয়েছে। আমারা মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখি। কিন্তু হঠাৎ করে ফয়সাল নেতা আমার মেয়ের এমন সর্বনাশ করেছে। পুলিশের কাছে গেলাম বিচারের আশায়। পুলিশ আমাদের অভিযোগ অনুযায়ী মামলা নেইনি। এখন মনে হচ্ছে আমরা ন্যায় বিচার পাবো না।
এ বিষয়ে নান্দাইল মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, ওই কিশোরী অভিযোগ দিলে শনিবার ধর্ষণ চেষ্টার মামলা নেয়া হয় ফয়সাল সহ অজ্ঞাত দুইজনকে আসামী করে। আজকে বুধবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ভিকটিমের বক্তব্য শুনেই ধর্ষণ চেষ্টার মামলা নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহা.আহমার উজ্জামান বলেন, নিয়ম হচ্ছে ভিকটিমের বক্তব্য অনুযায়ী মামলা নেয়া। সেক্ষেত্রে যদি পুলিশের কোন গাফিলতি থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য গত শুক্রবার (২২ এপ্রিল) উপবৃত্তির ফাইলে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা বলে ওই কশোরী ফুটবলারকে কলেজে ডেকে নেয় যুবলীগ নেতা ফয়সাল। পরে তাকে প্রশাসনিক ভবনের পেছনে নিয়ে মুখ চেপে গলায় চাকু ধরে ধর্ষণ ও ভিডিও করে ফয়সাল। এতে থাকে সহযোগিতা করে আলামিন ও অজ্ঞাত আরো এক সহযোগি। ঘটনা কাউকে বললে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়াসহ প্রাণনাশের হুমকী দেয়া হয়। ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবারটি।
ভিকটিম কিশোরী বলেন, বিভিন্ন স্থানে খেলতে গিয়ে ফয়সালের সাথে মৌখিক পরিচয়। তবে কোন ঘনিষ্ঠতা নেই। কলেজে যাওয়ার আসার সময় খোঁজ খবর নিতো। সে বিবাহিত তাঁর একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে।
বাবা মুদির দোকান করে। পরিবারের সাত সদস্যের সংসার। ফয়সাল ওইদিন শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কল করে বলে উপবৃত্তির জন্য স্বাক্ষর লাগবে। স্বাক্ষর না দিলে উপবৃত্তি আর পাবনা। তাই কল পাওয়ার সাথে সাথে বাবা-মাকে বলে কলেজে আসি। কলেজে ঢুকে ফয়সালকে কল দেই পরে সে প্রশাসনিক ভবনের পেছনে যেতে বলে। সেখানে গিয়ে বলি লোক কোথায় ফয়সাল বলে খেতে গেছে। সেই কথা বলেই মুখ চেপে ধরে মাটিতে ফেলে দিয়ে ঝাপটে ধরে। আমি চিৎকার করা শুরু করলে ফয়সাল আমাকে চাকু মেরে দেয়ার হুমকী দেয় এবং ধর্ষণ করে। মাটিতে ফেলে দেয়ার সময় আলামিন আমার পা ধরে রাখে। ভিডিও করে অজ্ঞাত আরেক ছেলে। প্রতি সপ্তাহে ফয়সাল তার সাথে সময় কাটাতে বলে। অন্যথায় ভিডিও ছেড়ে দেয়ার পাশাপাশি হত্যার হুমকী দেয়। বিষয়টি কলেজের পিয়ন আব্দুর রহিম দেখলেও সহযোগিতা করেনি।
এরপর বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি মা-বাবাকে বলি। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। পুলিশ আমাদের সাথে অবিচার করেছে। তারা ধর্ষণ চেষ্টার মামলা নিয়েছে। ওসি স্যারকে সমস্ত কিছু খোলে বলার পরও কেন এমন হলো বুঝতে পারছিনা।
ভুক্তভোগী আরো বলেন, তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করার সময় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেচ্ছা বেগম ফুটবল টুর্ণামেন্ট দিয়ে খেলা শুরু হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত টুর্নামেন্টে ময়মনসিংহ বিভাগের হয়ে খেলি ও আমার দল রানার্সআপ হয়। এসময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমাদের নগদ অর্থ ও রুপার মেডেল তুলে দেন ক্রীড়া উপমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেল। বর্তমানে আমি অনুর্ধ্ব-১৭ নারী ফুটবল টিমের একজন সদস্য। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (ফুটবল) উত্তরা আনোয়ারা স্পোর্টিং ক্লাব ও ময়মনসিংহের কালিঝুলি স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় খেলে মেডেল ও সনদ অর্জন করি।
ভুক্তভোগী ঐ কিশোরী বলেন, আমার স্বপ্ন জাতীয় দলের হয়ে খেলে দেশের জন্য জয় ছিনিয়ে আনা। এই অবস্থায় আমি খুবই আতংকিত ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। লোক লজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলতেও পারছি না। আমি সুষ্ঠ বিচার চাই। আমি বাঁচতে চাই।
ভিকটিমের বাবা-মা আরও বলেন, ছোট বেলা থেকেই আমাদের মেয়ে খুব মেধাবী। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও সে খুব ভালো। কিন্তু ফয়সাল আমাদের সব সর্বনাশ করে দিছে। এখন লজ্জায় বাহিরে যেতে পারি না। কয়েকদিন ধরে দোকানও বন্ধ রয়েছে।
কলেজের পিয়ন আব্দুর রহিম বলেন, মেয়েটা কলেজে ঢুকার পর ফয়সাল থাকে জড়িয়ে ধরলে মেয়েটি চিৎকার করে। চিৎকার শুনে আমি কাছে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু ফয়সাল আমাকে চাকু দেখালে আমি বাহিরে বের হয়ে মোবাইলে টাকা ভরে অধ্যক্ষ স্যারকে কল দেই। পরে অধ্যক্ষ স্যার তাদেরকে বাহিরে বের করে দিতে বলে।
ওই দিন নিরাপত্তাকর্মীর কাছে বিষয়টি শুনে ছেলে মেয়েকে কলেজ থেকে তাড়িয়ে দেয়ার কথা বললেও পরবর্তীতে কোন খোঁজ খবর নেননি কলেজের অধ্যক্ষ বাদল কুমার দত্ত। তবে তিনি বলেন, ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত। এটা কোন ভাবেই কাম্য নয়। ফয়সাল মাঝে মধ্যে কলেজে আসতো কোন কাজ থাকলে। তার সাথে কলেজের তেমন কারো সখ্যতা নেই। সে এমন কাজ করে থাকলে তাঁর বিচার হওয়া উচিত।