You must need to login..!
Description
স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থপনা বিভাগাধীন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো আয়োজনে প্রথম ডিজিটাল ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ বিষয়ে একটি মতবিনিময় সভা ও পাইলট শুমারির উদ্বোধন হলো। গত ৯ মে ময়মনসিংহে জেলা পরিষদ মিলনায়তন, এ মতবিনিময় সভায় পাইলট শুমারির উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান এমপি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শফিকুর রেজা বিশ্বাস ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিভাগীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়, ময়মনসিংহ এর যুগ্মপরিচালক আক্তার হোসেন স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। স্বাগত বক্তব্যে যুগ্মপরিচালক জানান সময় ও যুগের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে সময়োপযোগী, নির্ভুল তথ্য প্রদান এবং সরকার ঘোষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে অবদান রাখার অভিপ্রায়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রথম ‘ডিজিটাল শুমারি’ পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে ১ম আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ সালে। এর পর ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১ ও ২০১১ সালে যথাক্রমে ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম আদমশুমারি ও গৃহগণনা অনুষ্ঠিত হয়। এবার ৬ষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা অনু্ষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ অনুযায়ী পূর্ববর্তী ‘আদমশুমারি’ বর্তমানে ‘জনশুমারি’ হিসেবে অভিহিত। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর সফল আয়োজন বিষয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এরপর ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১ প্রকল্প’ এর প্রকল্প পরিচালক মোঃ দিলদার হোসেন জনশুমারি ও গৃহগণনা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা করেন। তিনি জানান, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের ন্যায় ৬ষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনায় ১০ বছর পর্যাবৃত্তি অনুসরণপূর্বক ২০২১ সালে পরিচালনা করা সম্ভব না হলেও আগামী ১৫-২১ জুন, ২০২২ সময়ে মূল শুমারির তথ্যসংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। উল্লেখ্য, শুমারির বার্তা সর্বসাধারণের নিকট পৌঁছানোর লক্ষ্যে শুমারির প্রাক্কালে অর্থাৎ ১৪ জুন ২০২২ তারিখ বা তৎপূর্বে যেকোন সুবিধাজনক সময়ে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন, যা ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর মাধ্যমে মূলত দেশের প্রতিটি গৃহ, খানা ও ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করা হবে। শুমারির সামগ্রিক কার্যক্রম ৪ টি পর্যায়ে সম্পন্ন করা হবে, যথা: (১) শুমারির প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড (২) মূল শুমারি পরিচালনা (৩) শুমারি পরবর্তী যাচাই জরিপ পরিচালনা এবং (৪) আর্থ-সামাজিক ও জনতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা। পাইলট শুমারি হলো প্রস্তুতিমূলক কর্মকান্ডের সর্বশেষ ধাপ। শুমারির চূড়ান্ত প্রস্তুতির ড্রেস রিহার্সেল তথা শুমারির সকল প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য ১০ থেকে ১৬ মে ২০২২ সময়ে ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা ও শেরপুর- এ ৩টি জেলাসহ সারাদেশে মোট ২৮টি জেলা শুমারি এলাকায় একযোগে পাইলট শুমারি অনুষ্ঠিত হবে।
এবারের শুমারিতে GIS (Geographic Information System) বেইজড ডিজিটাল ম্যাপ ব্যবহার করে CAPI (Computer Assisted Personal Interviewing) পদ্ধতিতে ডিজিটাল ডিভাইস ‘ট্যাবলেট’-এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। নির্ধারিত সময়ে সাময়িকভাবে নিযুক্ত প্রায় ৩.৭০ লক্ষ তথ্যসংগ্রহকারী (স্থানীয় শিক্ষিত যুবক/যুব মহিলা) নির্ধারিত গণনা এলাকার তথ্য ট্যাবলেটের মাধ্যমে সংগ্রহ করবে। IT Infrasrtucture যেমন: CAPI App, ক্লাউড সার্ভার, ওরাকল এক্সাডাটা সার্ভার, লোড ব্যালেন্সার, 10Gbps ইন্টারনেট, ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল ইত্যাদি প্রস্তুত ও ইনস্টল করার কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহে ব্যবহৃত ট্যাবলেটসমূহ MDM (Mobile Device Management) software ব্যবহার করে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত সকল পর্যায়ে encrypted অবস্থায় থাকবে। প্রস্তুতকৃত অ্যাপ এর সাহায্যে দৈনন্দিন তথ্য সংগ্রহের পরিমাণ যেকোনো পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করা যাবে যা নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। সর্বোপরি, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ফলে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ সহজতর হবে এবং স্বল্পতম সময়ে শুমারির রিপোর্ট প্রকাশ সম্ভব হবে।
এরপর ড. দিপংকর রায়, উপসচিব, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এর সঞ্চালনায় ১ম ডিজিটাল ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ বিষয়ে একটি উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় কর্মশালায় উপস্থিত সকল স্তরের অতিথিগণ একটি সফল ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’ নিশ্চিত করার বিষয়ে করণীয় বিভিন্ন দিক নিয়ে নিজ নিজ মতামত ব্যক্ত করে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পপনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান বলেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসাবে নিয়মিত মান সম্মত ও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান প্রণয়নে কাজ করে যাচ্ছে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা প্রণয়নে নিয়োজিত পরিকল্পনাবিদ, নীতি-নির্ধারক, সরকারি-বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, এনজিও এবং সর্বোপরি জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য আর্থ-সামাজিক, জনতাত্ত্বিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, স্থূল জাতীয় উৎপাদন, জাতীয় আয় নিরূপণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, সংকলন ও প্রকাশের গুরুদায়িত্ব জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে বিবিএস নিয়মিতভাবে পালন করে থাকে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ বিবিএস এর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত একটি জাতীয় দায়িত্ব। প্রধান অতিথি আরো বলেন, এ কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে ভবিষ্যতে জনসংখ্যাসহ অন্যান্য ডাটা রিয়েল টাইমে সরবরাহ করার সক্ষমতায় ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবে বিবিএস। ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানাবেষ্টিত অঞ্চলের সকল গৃহ, সাধারণ, প্রাতিষ্ঠানিক ও বস্তি খানা, ভাসমান জনগোষ্ঠী, জনতাত্ত্বিক ও আর্থ-সামাজিক তথ্য, যেমন- গৃহের সংখ্যা ও ধরন, বাসস্থানের মালিকানা, খাবার পানির প্রধান উৎস, টয়লেটের সুবিধা, বিদ্যুৎ সুবিধা, রান্নার জ্বালানির প্রধান উৎস, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, বৈদেশিক রেমিট্যান্স, খানা সদস্যদের বয়স, লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা, ধর্ম, প্রতিবন্ধিতা, শিক্ষা, কর্ম, প্রশিক্ষণ, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার, ব্যাংক/মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, জাতীয়তা, নিজ জেলা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য সঠিক পরিসংখ্যান প্রয়োজন। একটি সফল জনশুমারি আয়োজনের জন্য প্রত্যেক দপ্তরের সকল কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং সর্বস্তরের জনগণকে তিনি অনুরোধ জানান।
উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন এনডিসি, বলেন টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) এর ২৩১টি ইন্ডিকেটর এর মধ্যে ১০৫টির ডাটা বিবিএস সরাসরি প্রস্তুত করার পাশাপাশি জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসাবে বিবিএস অন্য সকল ইন্ডিকেটরের ডাটা প্রস্তুতকরণেও স্টেকহোল্ডারগণকে সহযোগিতা করছে। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ সফল হওয়ার মাধ্যমে দেশের সকল পরিকল্পনার সুষ্ঠু সম্পাদন ও বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিশেষ অতিথি ইকরামুল হক টিটু, মেয়র, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সকল উন্নয়ন পরিকল্পনার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন জরুরি এবং তা নিশ্চিত করতে সঠিক পরিসংখ্যান জরুরি। বিশেষ অতিথি জনাব মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলেন, সকল দপ্তর ও সর্বস্তরের জনগণের সহযোগিতা না পেলে সুষ্ঠু জনশুমারি ও গৃহগণনা সম্ভব নয়। তিনি সকলকে এ জাতীয় দায়িত্বে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান রাখার আহ্বান করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার, মোঃ শফিকুর রেজা বিশ্বাস, বলেন, জনশুমারি ও গৃহগণনা বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পরিচালিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যাপকভিত্তিক পারিসংখ্যানিক কার্যক্রম। একটি দেশের আর্থসামাজিক ও জনতাত্ত্বিক ইন্ডিকেটরসমূহ সকল পরিকল্পনার পুর্বশর্ত। ময়মনসিংহ বিভাগের সকল জেলাসহ সারাদেশে “জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ সফলভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বর্তমানে প্রায় সকল শুমারি ও জরিপ কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতি পরিচালনা করছে। এর ফলে পরিসংখ্যানের গুণগত মান আরো নিশ্চিত হচ্ছে। তিনি সকলকে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ সফলকরণে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার অনুরোধ করেন। উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে আরো বক্তব্য রাখেন,ময়মনসিংহ রেঞ্জ, ডিআইজি, ব্যারিস্টার মোঃ হারুন অর রশিদ বিপিএম ও ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক, মোহাম্মদ এনামুল হক।
বক্তাগণ উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কর্মপরিকল্পনায় সঠিক তথ্যের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে 'জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ এর সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের জন্য সকলকে আহ্বান জানান। মতবিনিময় কর্মশালা শেষে মন্ত্রী ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এর ৭নং ওয়ার্ডের মৃত্যুঞ্জয় রোড এলাকার একটি হাউজহোল্ড (খানা) হতে পাইলট শুমারির তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।