চা-শ্রমিকদের মজুরি দৈনিক ১৪৫ টাকার প্রস্তাবকে চা-শ্রমিক সংঘ-এর প্রত্যাখ্যান

image

You must need to login..!

Description

বিএমটিভি নিউজঃ  শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরে ২০শে আগস্ট বিকেলে এক বৈঠক থেকে চা-শ্রমিকদের মজুরি দৈনিক ১৪৫ টাকার প্রস্তাবকে চা-শ্রমিক সংঘ প্রত্যাখ্যান করেছে। ২১শে আগস্ট গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক রাজদেও কৈরী ও যুগ্ম-আহবায়ক শ্যামল অলমিক বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এই সময়ে দৈনিক ১৪৫ টাকা মজুরির প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ৯ই আগস্ট থেকে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে দেশের ১৬৭ টি চা-বাগানের লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মবিরতি চালিয়ে আসছিলেন। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতির বাজারে একজন চা-শ্রমিক সর্বোচ্চ দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি পান।

গতকাল মৌলভীবাজার-৪ আসনের সাংসদ উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুশ শহীদ, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মৌলভীবাজার, সিলেট, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধিসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের বৈঠকে মাত্র ২৫ টাকা বৃদ্ধি করে দৈনিক ১৪৫ টাকার মজুরির ঘোষণা দেওয়া হয়। উপস্থিত শ্রমিকরা তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রতিবাদ জানিয়ে শ্রীমঙ্গল চৌমুহনায় অবস্থান নিয়ে ঢাকা-মৌলভীবাজার সড়ক প্রায় দুই ঘন্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। ২৫ টাকা মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণার সংবাদ চা-বাগানে পৌঁছামাত্র শ্রমিকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে সিলেট, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল করে রাস্তায় নেমে পড়েন এবং ইউনিয়নের নেতাদের দালালির বিরুদ্ধে সেøাগান দিয়ে ৩০০ টাকা মজুরি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে তোপের মুখে ইউনিয়নের নেতারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিতে বাধ্য হন।

চা-শ্রমিক সংঘের নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন চা-শিল্পের ১৬৮ বছরের ইতিহাসে চা-শ্রমিকদের মজুরি ১৬৮ টাকাও হয়নি। অথচ শ্রমিকদের হাড়ভাঙ্গার পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে চা-উৎপাদনে বাংলাদেশ ৯ম স্থানে উঠে এসেছে। এমনকি করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চা-শ্রমিকরা উৎপাদনে সক্রিয় থাকায় ২০২১ সালে দেশে ৯৬ দশমিক ৫০৬ মিলিয়ন কেজি চা-উৎপাদনের ফলে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়।

ফলশ্রুতিতে মালিকদের মুনাফা এবং সাহেব-বাবুদের সুযোগ-সুবিধা বাড়লেও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতির এই সময়ে শ্রমিকদেরকে দেয়া হচ্ছে দৈনিক মাত্র ১২০ টাকা। ২০২১ সালে ১ জানুয়ারি হতে চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের প্রায় ২০ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও উপযুক্ত মজুরি বৃদ্ধি করা হচ্ছে না। নেতৃবৃন্দ এর জন্য মালিকদের অতিমাত্রায় শোষণমূলক প্রবৃত্তি ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের আপোসকামিতাকে দায়ী করেন।
বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে দৈনিক তিন বেলা অতি সাধারণভাবে আহারের জন্য ১৫০(৩০+৬০+৬০) টাকায় যেখানে পেট ভরে না, সেখানে চা-শ্রমিক ইউনিয়ন দাবিই করেছে মাত্র ৩০০ টাকা। অথচ প্রতিবেশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চা-শ্রমিকরা দৈনিক ২৩২ রুপি (২৭৭ টাকা) পেয়েও মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে ৩০০ টাকা মজুরি পেলেও তো সেটা সম্ভব না। অথচ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা ২৫ টাকা বৃদ্ধিতে দৈনিক সর্বোচ্চ ১৪৫ টাকা মজুরিতেই আপোস করতে চেয়েছিলেন। নেতৃবৃন্দ বলেন অবাক করার বিষয় যে সরকার দলীয় এমপি উপাধক্ষ্য ড. মোঃ আব্দুশ শহীদ একাধিকবার জাতীয় সংসদে চা-শ্রমিকদের জন্য কমপক্ষে ৫০০ টাকা মজুরির পক্ষে বক্তব্য দিলেও আজ মালিকপক্ষের স্বার্থরক্ষায় ১৪৫ টাকা মজুরিতে শ্রমিকদের সাথে মধ্যস্থতা করেন। এই মজুরিতে বর্তমান দ্রব্যমূল্যে কি করে একজন চা-শ্রমিক তার পরিবার চালাবে? বর্তমানে মোটা চালের কেজি ৫৫/৬০ টাকা, আটা ৫৫/৬০ টাকা, ডাল ১০০/১১০ টাকা, তেল ১৯০/২০০ টাকা, ডিমের হালি ৫৫/৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, বাজারে ৫০/৬০ টাকার নিচে কোন সবজি মিলছে না সেই সময়ে দৈনিক মাত্র ১৪৫ টাকা মজুরিতে কি করে একজন চা-শ্রমিক ৬/৭ জনের পরিবার চালাবে? উল্লেখ্য বাংলাদেশে সবচেয়ে কম মজুরি পান চা-শ্রমিকরা।

নিম্নতম মজুরি বোর্ড কর্তৃক ঘোষিত ৪২ টি সেক্টরে এবং মজুরি কমিশন ঘোষিত রাষ্ট্রায়াত্ব শিল্প সেক্টরের মজুরির সাথে তুলনা করলে চা-শ্রমিকদের মজুরি অত্যন্ত কম। নেতৃবৃন্দ ধর্মঘটী শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন প্রদান এবং বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণভাবে ৬/৭ জনের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য দৈনিক ৬৭০ টাকা মজুরিসহ চা-শিল্পে নৈমিত্তিক ছুটি(বছরে ১০ দিন) কার্যকর ও অর্জিত ছুটি প্রদানে বৈষম্যসহ শ্রমআইনের বৈষম্য নিরসন করে গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন। অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মজুরি ও উৎসব বোনাস প্রদানে সকল অনিয়ম বন্ধ করে শ্রমআইন মোতাবেক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিসবুক প্রদান। এবং ৯০ দিন কাজ করলেই সকল শ্রমিককে স্থায়ী করার দাবি জানান। একই সাথে নেতৃবৃন্দ চা-শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ থেকে সকল ধরনের আপোসকামিতা ও ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে সজাগ, সচেতন থেকে ন্যায্য মজুরি আদায়ে না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানান।

প্রধান সম্পাদকঃ
মতিউল আলম

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
মাকসুদা আক্তার