You must need to login..!
Description
স্টাফ রির্পোটার, বিএমটিভি নিউজঃ
নেপালকে হারিয়ে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জিতে বিশ্ব দরবারে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। বাংলাদেশের এ দলে অধিকাংশ খেলোয়াড় ছিল ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার অজপাড়াগায় কলসিন্দুরের। এই বিজয়ে কলসিন্দুরসহ ধোবাউড়ায় গ্রামে গ্রামে বইছে আনন্দের বন্যা। মেয়েদের অভিভাবকরা দেশবাসীর আনন্দে গর্ব বোধ করছে। এ বিজয়ে অনেকে আবেগে আপ্লুত হয়েছেন।
কলসিন্দুর সরকারী স্কুল এড কলেজ এর সহকারী অধ্যাপিকা কলসিন্দুর নারী ফুটবল টিমের ম্যানেজার মালা রানী সরকার বলেন, জাতীয় নারী ফুটবল দলে কলসিন্দুরের মেয়েরা খেলছে এটা অত্যন্ত গর্বের। আশাকরি আগামী দিনেও দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে তারা ভালো খেলা উপহার দেবে।
তিনি বলেন‘ অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে বাংলাদেশেরা মেয়েরা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ফুটবলে সেরা হয়েছে। তাদের জয়ে শুধু আমরা না, দেশের আপামর জনতা গর্বিত। এই মেয়েরা জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে একদিন বিশ্বকাপ জয় করে আনবে।’
নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে। এই দলে রয়েছেন ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামে বেড়ে ওঠা আট জন। তারা হলেন সানজিদা আক্তার, মারিয়া মান্দা, শিউলি আজিম, তহুরা খাতুন, শামসুন্নহার সিনিয়র, শামসুন্নাহার জুনিয়র, সাজেদা খাতুন ও মার্জিয়া খাতুন।
তাদের জয়ে উচ্ছ্বসিত মালা রানী সরকার। কত বাধা পেরিয়ে আজ তারা চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা জয় করেছেন, সেই গল্প শোনালেন তিনি।
মালা রানী বলেন, এই ফুটবল কন্যাদের তৈরি করতে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ২০১১ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে তারা আলোচনায় আসে। এরপর আরও তিন বার চ্যাম্পিয়নের ধারা অব্যাহত রাখে।’
‘অজপাড়া গাঁ কলসিন্দুরের এই মেয়েদের ফুটবল খেলাকে অনেকে ভালো চোখে দেখেনি। পরিবার থেকেও তেমন একটা সহায়তা পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে প্রাইমারি স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিকে যখন তারা ভর্তি হয়, তখন ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের বাধা আসে। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের মধ্যে শারীরিক নানা পরিবর্তন দেখা দেয়। এ সময় তাদের ফুটবল খেলা পরিবারের সদস্যরা এবং স্থানীয় লোকজন ভালোভাবে নেয়নি।’
ফুটবল খেলতে গিয়ে নানা ধরনের কটূক্তিও শুনতে হয়েছে কলসিন্দুরের মেয়েদের। মালা রানী জানান, স্থানীয়রা মেয়েদের ফুটবল খেলায় উৎসাহ দেওয়ার পরিবর্তে বাধা দিয়ে বলতো, ফুটবল খেললে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যাবে না। এছাড়াা নানা ধরনের কটূক্তিও করতো। এ সময় স্থানীয় শিক্ষক এবং সমাজ সচেতন মানুষদের সহায়তায় খেলোয়াড়দের পরিবার ও স্থানীয়দের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়।
মালা রানী বলেন, সাফ চ্যাম্পিয়নে প্রথম পাঁচ মিনিটে গোল করে শামসুন্নাহার জুনিয়র। সে ছোটবেলায় মাকে হারায়। গরিব-অসহায় পরিবারে তাকে যতœ করার কেউ ছিল না। কিন্তু ফুটবল খেলার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ ছিল শামসুন্নাহারের। আগ্রহ দেখে আমি এক বছর তার খাওয়া-দাওয়ার দায়িত্ব নিই। এভাবে নানা বাধা-বিপত্তি পেরি প্রত্যেক মেয়ে জাতীয় দলে জায়গা করে নেয়। তবে ফুটবল কন্যা সাবিনার মৃত্যুতে ভেঙে পড়ে কলসিন্দুরের মেয়েরা। সবাই সিদ্ধান্ত নেয়, তারা আর ফুটবল খেলবে না। এরপর তাদের বোঝানো হয় এবং দেশের কথা মাথায় রেখে ফুটবল খেলায় মনোনিবেশে আগ্রহী করে তোলা হয়। এভাবেই আজকের ফুটবল কন্যারা তৈরি হয়েছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ফুটবলারের মুকুট ছিনিয়ে এনেছে।’
নারী ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম আলোচিত নাম সানজিদা আক্তার। তার আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রাম, সেইসঙ্গে গোটা বাংলাদেশও। তিনি আরও বলেন, আমরা আগামীর জন্য খেলোয়াড় তৈরি করার ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়ে দুটি ফরম্যাটে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। কিছুদিন আগে আমাদের কলসিন্দুর ছোটদের টিমের মেয়ে এবং ছেলেরা জাতীয় গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় (স্কুল এবং মাদ্রাসা) দুটি ফরম্যাটেই জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়নের গৌরব অর্জন করেছে।
খোলোয়াড় তহুরা খাতুনের বাবা ফিরোজ মিয়া বলেন, খেলায় মেয়েরা জিতায় আমরা অনেক খুশি। আগে আমরা মেয়েদেরকে খেলতে দিতাম না। এখন আর বাধা দেই না। এখন বুঝতেছি এরা দেশের সুনাম করছে। বাবা হিসেবে মানুষ সম্মান করে।
ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নে অংশ নেওয়া নারী খেলোয়াড় শামসুন্নাহার জুনিয়রের চাচা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, বাংলাদেশ সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ধোবাউড়াবাসী আনন্দিত। আমরা বিশ্বাস করতে পারি নাই আমাদের মেয়েরা এভাবে সেরা হয়ে উঠবে।
মেয়েদের জয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে ফুটবল তারকা সানজিদার বাবা বলেন, বাংলাদেশ জয়লাভ করায় সানজিদার বাবা হিসেবে আমি গর্বিত। এক পর্যায়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
কলসিন্দুর মেয়েদের কোচ জুয়েল মিয়া বলেন, কলসিন্দুরের অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে চাই । আগামীদিনের খেলোয়াড় তৈরীতে ক্ষুদে ফুটবলারদের নিয়মিত অনুশীলন চলছে। ##
মতিউল আলম