স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ পাগলা থানার অটোরিক্সা চালক নাছির উদ্দিন (৪৫)কে হত্যা করে অটোরিক্সা ও মোবাইল সেট ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার, ছিনতাইকৃত অটোরিক্সা ও মোবাইল সেট উদ্ধার করেছে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন পাগলা থানার কন্যামন্ডল আদর্শ গ্রাম মৃত হযরত আলীর ছেলে মকবুল হোসেন (৫৫), কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া ছোট আজলদি ধামর বাড়ীর আবুল হাসেমের ছেলে জাবেদ (২৫), ছোট আজলদি কোণপাড়ার মৃত সুরুজ আলীর ছেলে কাজল মিয়া (৬০), সম্মানিয়া গ্রামের আহছান উল্লাহ র ছেলে মোঃ শরীফ (৩২) ও হাছেন উল্লাহর ছেলে সোহেল মিয়া (২২)।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি সফিকুল ইসলাম শনিবার দুপুরে জানান, গত ২৯ অক্টোবর সোয়া ১২টায় ময়মনসিংহ জেলা পাগলা থানার খুরশিদ মহল ব্রীজের পূর্ব ঢালে রাস্তার দক্ষিন পাশে ঝোপঝাড়ের আড়ালে রেখে যাওয়া একজন অজ্ঞাতনামা পুরুষ ব্যক্তি, বয়স অনুমান ৪৫ বছর এর লাশ পাওয়া যায়। ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার, মাছুম আহাম্মেদ ভুইয়া্ নিহত ব্যক্তির পরিচয়, হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারের জন্য ডিবিকে নির্দেশ দেন। ডিবির একটি চৌকস টিম হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য পাগলা থানা পুলিশের সহিত যুগপথভাবে অভিযান চালায়। অভিযানে নিহত ব্যক্তি -গফরগাঁও উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহিম,মোঃ নাছির উদ্দিন (৪৫)। তিনি দুই সন্তানের পিতা।অটোরিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রতিদিনের ন্যায় গত ২৯ অক্টোর বিকেল বেলা যাত্রী বহনের জন্য বাড়ী থেকে অটোরিক্সা নিয়ে বের হয়। রাত গড়িয়ে সকাল হলেও নাছির দ্দিন (৪৫) বাড়ী ফিরে না আসায় পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীরা চারদিকে খোঁজাখুজির একপর্যায়ে ৩১ অক্টোবর দুপুরে ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার খুরশিদ মহল ব্রীজের পূর্ব ঢালে রাস্তার দক্ষিন পাশে ঝোপঝাড়ের আড়ালে লাশ পাওয়ার সংবাদ পেয়ে পরিবারের লোকজন এসে লাশ সনাক্ত করে।এতদসংক্রান্তে নিহত নাছির উদ্দিন (৪৫) এর ছোট ভাই নুরুল আমিন (৪০) বাদী হয়ে অভিযোগ দায়ের করলে পাগলা থানার মামলা নং-০১,তারিখ ০১ নভেম্বর ২০২২, ধারা- ৩৯২/৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়। অজ্ঞাতনামা আসামিরা ২৯ অক্টোবর ঘটনাস্থলে নাছিম উদ্দিন (৪৫) কে হত্যা করে তার অটোরিক্সা ও ব্যবহৃত মোবাইল সেটটি ছিনিয়ে নেয়।
ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ড ও অটোরিক্সা ছিনতাইয়ের কাজে জড়িত আসামি মকবুল হোসেন (৫৫), জাবেদ (২৫), কাজল মিয়া (৬০), শরীফ (৩২) ও সোহেল মিয়া (২২),কে গ্রেফতার করে। আসামি মকবুল হোসেন এর হেফাজত হতে নিহত নাছির উদ্দিন (৪৫) এর মোবাইল সেটটি উদ্ধার হয়। আসামীদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামি মকবুল হোসেন (৫৫) একজন পেশাদার ও অভ্যাসগত অপরাধী। দীর্ঘদিন যাবৎ সে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় চালককে কখনো মারপিট করে, কখনো নেশাজাতীয় বিষ প্রয়োগে অচেতন করে অটোরিক্সা ছিনতাই করে আসছে। মোঃ মকবুল হোসেন (৫৫) এর বিরুদ্ধে একাধিক চুরি, ডাকাতি, অস্ত্র ও হত্যা মামলা রয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়ার পুলেরঘাট বাজারে আসামি মকবুল হোসেন (৫৫) একটি সেলুনে চুল কাটার কাজের আড়ালে অপরাধ চক্রের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ও পরিকল্পনায় জড়িত থাকে।
গত ২৭ অক্টোবর আসামি মোঃ মকবুল হোসেন (৫৫) গ্রেফতারকৃত অন্যান্য আসামিদেরকে কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার পুলেরঘাট বাজারে ডেকে এনে চালক হত্যা ও অটোরিক্সা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। ২৯ অক্টোবর দুপুর আড়াইটায় পুলেরঘাট বাজারে আসামি মোঃ মকবুল হোসেন (৫৫), জাবেদ (২৫), কাজল মিয়া (৬০), শরীফ (৩২) গন একত্রিত হয়ে প্রথমে হোসেনপুর এবং পরবর্তীতে সন্ধ্যা অনুমান ৭টায় গফরগাঁও জামতলা চৌরাস্তায় আসে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আসামিরা যাত্রীবেশে হোসেনপুর যাওয়ার কথা বলে রাত ৮টায় নাছির উদ্দিন (৪৫) এর চালিত অটোরিক্সায় উঠে। রাত অনুমান পৌণে ৯টায় হোসেনপুর ব্রীজ এর পূর্ব ঢালে নির্জন জায়গায় পৌঁছে নাছির উদ্দিন (৪৫) এর গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ রাস্তার দক্ষিন পাশে ঝোপঝাড়ের আড়ালে রেখে দিয়ে অটোরিক্সা ও নাছির উদ্দিন (৪৫) এর ব্যবহৃত মোবাইল সেটটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।আসামি মোঃ সোহেল মিয়া (২২) এর হেফাজত হতে ছিনতাইকৃত অটোরিক্সাটি উদ্ধার করা হয়। আসামিদেরকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে। কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল জেলার সাথে ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী অপরাধ প্রবন এলাকায় এধরনের অপরাধচক্র যাতে সংঘটিত হতে না পারে সেজন্য পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।
আসমি মোঃ মকবুল হোসেন (৫৫) এর পিসি/পিআর-১। ময়মনসিংহ এর পাগলা থানার ,এফআইআর নং-১১, তারিখ- ১৬ মার্চ, ২০১৫, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০, ২। ময়মনসিংহ এর পাগলা থানার ,এফআইআর নং-১, তারিখ- ০১ আগস্ট, ২০১৩, ধারা- ১৯ ১৮৭৮সালের অস্ত্র আইন মামলা রয়েছে।##
মতিউল আলম