গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) থেকে সংবাদদাতা ঃ গফরগাঁও উপজেলার ১৫টি বিভিন্ন ইউনিয়নে ইতিমধ্যেই শীতের ধীরে ধীরে আগমনী বার্তা শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা থেকে ভোর হতেই কুয়াশা পরিলক্ষিত হয় । গত প্রায় একমাস যাবৎ এ অঞ্চলে আবহাওয়ার যে পরির্বতন তাই মূলতঃ আসন্ন শীতকে স্বাগত জানিয়েছে । দিন দিনে প্রতিনিয়তই কুয়াশার পরিমাণ অনেকটা বৃদ্ধি পাচ্ছে । রাতে তাপমাত্রাও ক্রমশঃ হ্রাস পাচ্ছে । শীত মৌসুমকে সামনে রেখে এ অঞ্চলে ইতিমধ্যেই নানা ধরনের প্রাক প্রস্ততি চলছে আগাম ধুমধামে । অনেকে শীতের কথা মনে রেখে ইতিমধ্যেই লেপ-তোষক বানানো চিন্তা করছে । কেউবা আবার আগাম অর্ডার দিয়েছে লেপ-তোষক তৈরীর কারিগররাও ক্রমশঃ ব্যস্ত হয়ে উঠেছে । গফরগাঁও রেলষ্টেশনের শাহাদৎ কমপ্লেক্স (ইন্তুুমহাজন মার্কেটের) মের্সাস হযরত বেডিং ষ্টোরের মালিক মোঃ সোহেল মিয়া জানান , শীত ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে লেপ-তোষক বিক্রি বেড়ে গেছে । গতবারের তুলনায় এবার কিছুটা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে । গোটা ৭/৮মাস কর্মহীন থাকায় পর আসন্ন শীত মৌসুম প্রাক্কালেতারাও প্রস্তত হচ্ছে । ১০/১৫দিন পর অবশ্য তাদের ব্যস্ততা আরও বেড়ে যাবে । নিম্নশ্রেণীর লোকজনদের শীত কাটানোর একমাত্র সম্বল হচ্ছে পুরান কাপড় দিয়ে তৈরী হয় গ্রামবাংলার নকশীঁ কাঁথা । এখন থেকে তারা তাদের কাঁথা বানানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে । গ্রাম-গঞ্জে, বিভিন্ন বাড়ীঘরে পরিলক্ষিত হয় যে , অসহায় মহিলারা পুরান কাপড় সংগ্রহ করে দিন-রাত পরিশ্রম করে কাঁথা তৈরী করছে । একজন ভিক্ষুক মহিলা ইনকিলাবকে জানান যে “ ভাইরে আমাদের কপালে কি লেপ-তোষক জুটবে” ।আমরা সারা দিন বিভিন্ন বাড়ী ঘুরে ঘুরে চাল সংগ্রহ করি । এতে করে আমাদের সংসার চলে । তাই আমাদের কপালে লেপ-তোষক জুটবে না । শীতের সঙ্গে সর্ম্পক আছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী “ভাপা পিঠা” গ্রাম-গঞ্জে বাড়ী বাড়ী ভাপা পিঠার আয়োজন ছাড়াও বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে শীতের কুয়াশা মোড় সকালে ভাপা পিঠার আছে দারুন কদর । শীতের অন্যান্য পিঠারও কদর আছে গ্রামবাংলার সর্বত্র । আর মাত্র কয়েক দিন পর পুরো দমে চলতি মৌসুমের আমন ধান কাটার ধুম পড়ে যাবে । পরে জামাইদের গ্রাম অঞ্চলে নতুন ধানের শীতের পিঠা খাওয়ানোর জন্য পিঠার দাওয়াত দেওয়ার রেওয়াজ এখনও চালু আছে সর্বত্র । শীত মৌসুমকে সামনে রেখে গ্রাম-বাংলার খেজুর গাছে কলসী পাতানো শোভা পাচ্ছে । শীত মৌসুমের সঙ্গে এ অঞ্চলের ইসলাম র্ধম ভীরু লোকজন ইসলামী সম্মেলন ,র্ধম সভা বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান করার জন্য এলাকায় গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের সাথে যোগাযোগ করতে শুরু করে দিয়েছে বলে পরিলক্ষিত হয় । এ অঞ্চলে ইসলামী সভা শীতকালীন বেশী হয়ে থাকে ।এ ছাড়া শীতের সাথে গফরগাঁও শহর, গ্রাম-গঞ্জে শিল্প সংস্কৃতির ,যোগাযোগ সুগভীর । মূলতঃ সাংস্কৃতিক তৎপরতা শীতকালে বেশী হয় । আবহাওয়া শুকনো থাকার কারণে এবং শীতের আমেজের সময় সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বেশী । তাই অন্যান্য বছরের মত এবার গফরগাঁও গ্রাম-গঞ্জে সাংস্কৃতিক কর্মীরা তৎপরতা হয়ে উঠেছে । অন্যদিকে গ্রামঞ্চলে ক্লাবে নাটকের প্রস্ততি চলছে । যতই দিন ঘনিয়ে যাচ্ছে ততই শীতের জন্য নাটকের প্রস্ততি শেষ পর্যায়ে চলে আসছে ।শীত কালে খেলাধুলার উৎকৃষ্ট মৌসুম ।তাই এ অঞ্চলের ক্রীড়ামোদীরা আসন্ন মৌসুমে তাদের কার্যক্রম প্রণয়নে ব্যস্ত ।পোশাক ব্যবসায়ীরা ও বসে নেই । শীত মৌসুম সামনে রেখে পুরনো ও নতুন কাপড় বিক্রির জন্য মজুদ করে নিচ্ছে । যাতে করে শীতের শুরু চড়া দামে বিক্রি করতে পারে । সব মিলিয়ে শীত শুরু এদিন গুলোতে গ্রাম-গঞ্জে চলছে নতুন এক মৌসুম বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি । দেখার মত প্রস্ততি নিচ্ছে আসন্ন শীত মোকাবেলা করার জন্য । এদিকে গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবিদুর রহমান জানান, শীতকে কেন্দ্র করে প্রতিবারের মতো এবারেও সরকারী ভাবে কম্বল দেয়া হবে হতদ্ররিদের জন্য । জেলা প্রশাসক মোঃ এনামুল হকের সহযোগিতা কম্বল পাওয়া গেলে সাথে সাথে অসহায় হতদ্ররিদ্রদের সুচারুভাবে তা বিতরন করা হবে । বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন র্বোড গফরগাঁওয়ে আওতাধীন (পিডিবি) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোশারফ হোসেন জানান , শীতের আগমনের সাথে লোডশেডিং কমে গেছে । আশা করা যাচ্ছে যে , কিছু দিনের মধ্যে হয়ত লোডশেডিং থাকবে না । তবে পিডিবির লাইন সাধারণরত সকল গ্রাহকদেরকে ভাল সেবা দিয়ে থাকে ।