স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ
নেত্রকোণার পূর্বধলায় ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর অজ্ঞাতনামা নারীর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায়, ২৪ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন এবং মূলহোতাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৪, ময়মনসিংহ। র্যাব-১৪ এর অভিযান চালিয়ে গত ২০ নভেম্বর ভোরে গাজীপুর জেলার মীরের বাজার এলাকা থেকে হত্যাকান্ডের মূলহোতা আসামী মো: নিজাম (৩০) কে গ্রেফতার করে। সে নেত্রকোণার পূর্বধলা থানার আগিয়া গ্রামের মো: চাঁন মিয়ার ছেলে । প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী বর্ণিত হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করে এবং হত্যাকান্ড সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
মিডিয়া অফিসার সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো: আনোয়ার হোসেন জানান, গত ১৯নভেম্বর সকাল ৯টার দিকে নেত্রকোণার পূর্বধলা থানার খলিশাউড় ইউনিয়নের বালুচড়া বাজারের তালতলা মোড় এলাকার রাস্তার পাশের কলা গাছের নিকট থেকে এক অজ্ঞাতনামা মহিলা (২৬)-এর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। লাশের পেটে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। আঘাতের ফলে লাশের পেট থেকে ভুড়ি বের হয়ে আসে। পরবর্তিতে পূর্বধলা থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার পূর্বক লাশের ময়না তদন্তের জন্য নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
চাঞ্চল্যকর এই অজ্ঞাতনামা মহিলার লাশ হত্যার ঘটনা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে গুরুত্বের সাথে সংবাদ প্রচারিত হয়। ফলশ্রুতিতে র্যাব-১৪ ছায়া তদন্তশুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে।
র্যাব তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় অজ্ঞাত মহিলার পরিচয় সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। অজ্ঞাতনামা ভিকটিমের নাম- মোছাঃ কমলা খাতুন(২৬), পিতা-মাতাব উদ্দিন, সাং-রাত্রা কাকৈরপাড়া, পোস্ট-কেট্রা, থানা-দূর্গাপুর, জেলা-নেত্রকোণা। পরবর্তিতে ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও ঘটনার সাথে জড়িত আসামী গ্রেফতারে র্যাব জোর তৎপড়তা চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১৪ এর অভিযানে র্যাব-১৪ এর অভিযান চালিয়ে গত ২০ নভেম্বর ভোরে গাজীপুর জেলার মীরের বাজার এলাকা থেকে হত্যাকান্ডের মূলহোতা আসামী মো: নিজাম (৩০) কে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামী নিজাম, আসামীর স্ত্রী ও ভিকটিম কমলা খাতুন একইসাথে গার্মেন্টসে কাজ করতো। সেই সুবাদে আসামীর সাথে ভিকটিম কমলা খাতুনের প্রায় চার মাসের পরিচয়। পরবর্তিতে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আসামী নিজাম বিবাহিত এবং দুই সন্তানের পিতা হওয়া সত্ত্বেও কমলাকে বিয়ের চাপ দেয়। কিন্তু কমলা তাকে বিয়ে করতে রাজি না হলে নিজামের মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হতে থাকে। ফলশ্রুতিতে আসামী নিজাম কমলাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। হত্যার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামী নিজাম ভিকটিম কমলাকে তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণার দুর্গাপুর পৌছে দেওয়ার জন্য কৌশলে রাজি করায়। ঘটনার দিন সকালে আসামী নিজাম গার্মেন্টসে কাজ করে বাসায় ফিরে আসে। এরপর বাসা থেকে বের হওয়ার সময় হত্যার উদ্দেশ্যে বাজারের ব্যাগে একটি কাপড়ে মোড়ানো ধারালো দা নিয়ে নেয়। পথিমধ্যে আসামী নিজাম ভিকটিম কমলাকে দুর্গাপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাস্তা থেকে তুলে নেয় এবং দুর্গাপুর যেতে থাকে। এরপর নেত্রকোনার পূর্বধলা থানার তালতলা বাজার এলাকার রাস্তার পাশে পৌছালে আসামী নিজাম ভিকটিম কমলাকে কৌশলে গাড়ি থেকে রাস্তায় নামায় এবং কমলাকে আসামী নিজাম রাস্তা থেকে নিচে নামতে বললে কমলা তাতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে আসামী নিজাম ক্ষিপ্ত হয়ে জোর করে ধাক্কা দিয়ে কমলাকে নিচে নামায়। তখন কমলা ভয়ে চিৎকার করতে উদ্যত হলে আসামী নিজাম তার গলা চেপে ধরে। তখন ভিকটিম বাচাঁর জন্য ছটফট করলে উপর্যুপরি গলা চেপে কমলার মৃত্যু ঘটায়। এরপর ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিতকল্পে আসামী তার সাথে নিয়ে আসা ধারালো দা দিয়ে ভিকটিমের পেটে গুরুতর জখম করে পেট থেকে ভুড়ি বের করে ফেলে। ঘটনার সাথে তার সংশ্লিষ্টতা এড়াতে ও পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে সে দ্রুত গাজীপুর চলে যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
মতিউল আলম