বিএমটিভি নিউজ ডেস্কঃ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১০ তারিখের ঢাকায় সমাবেশ নিয়ে সরকারের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। সেদিন নাকি তারা উড়ে যাবে। জনগণের প্রতি তাদের আস্থা নেই। চোরের মন পুলিশ পুলিশ। নয়াপল্টনে এর আগে অনেক সমাবেশ করেছি, তখন তো সমস্যা হয়নি। এখন কেন এত সমস্যা?
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজশাহীর হাজী মুহম্মদ মহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে (মাদরাসা মাঠ) বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, যে দেশে গণতন্ত্রকে প্রতিদিন হত্যা করা হচ্ছে, সেই দেশের সরকার প্রতিদিন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের কথা বলছে। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরা কোন দেশে বাস করছি, যে দেশে প্রধানমন্ত্রী খারাপ কাজ করলেও সমালোচনা করা যায় না। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্র একটাই- যেমন করেই হোক ক্ষমতায় বসে থাকা।
তিনি বলেন, এই দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৬৯ সালে যখন আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন শুরু হয়, তখন এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামসুজ্জোহা নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন। রাজশাহীর মাটি বিএনপির ঘাঁটি। রাজশাহীর মাটি উর্বর। জিয়াউর রহমানের বাড়িও রাজশাহীর বগুড়াতে। পদ্মা, মহানন্দা নদী বেষ্টিত জনতা আজ রুখে দাঁড়িয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীর জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনকে অন্যায়ভাবে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে সরকার। ২৫ জনকে যাবজ্জীবন দিয়েছে। তাতে কি আপনারা ভয় পাবেন? তাতে কি পাবনার লোক ভয় পাবেন?
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ এখন আর রাজনৈতিক দল নেই। লুটেরাদের দলে পরিণত হয়েছে। তাই এই সরকারকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। ব্যাংক খালি করা হচ্ছে। রিজার্ভ খালি করা হচ্ছে। সেখানে ৩৭ জন কৃষককে ২৫ হাজার টাকার জন্য জেলে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই সরকার আমাদের রাজনৈতিক কাঠামো নষ্ট করেছে। আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে ১১ জনকে গান পাউডার দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৪ বছরে ১৯ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। মেগা উন্নয়নের কথা বলে, বিনা পয়সার সার দিবে, চাল দেবে, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। এখন আমাদের ছেলেরা চাকরি পায় না। কিন্তু তারা তাদের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ঘুম হারাম করে ফেলেছে। তারা আতঙ্কে ভুগছে। আমরা তো নয়া পল্টনে অসংখ্য সমাবেশ করেছি, যেখানে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন। তখন কোনো সমস্যা হয়নি। এখন তারা জঙ্গি নাটক শুরু করেছে। নিজেদের প্রয়োজনে জঙ্গি বানায়। নিজেরাই বাস পুড়িয়ে অগ্নিসন্ত্রাস করে। আর দোষ চাপায় বিএনপির ওপর। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ এখন রাজনৈতিক দল নয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৪/১৫ বছরে আওয়ামী লীগ লুটেরা দলে পরিণত হয়েছে। সব সেক্টরে দুর্নীতি করে লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। নিজেরা সম্পদ লুট করে পাহাড় বানাচ্ছে আর সাধারণ মানুষকে গরিব করছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। করোনা মহামারীর এই সময়ে দেশে ১২ হাজার মানুষ কোটিপতি হয়েছেন। অন্যদিকে সাড়ে তিন কোটি মানুষ গরীব থেকে আরো গরীব হয়েছে। দেশের মানুষের কোন উন্নয়ন হয়নি। সব নিজ দল ও বিত্তশালীদের উন্নয়ন হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের টাকা নামে বেনামে ঋণের নামে লুট করছে। আওয়ামী লীগ দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। যে দেশের গণতন্ত্রকে প্রতিদিন হত্যা করা হচ্ছে, সেই দেশের সরকার প্রতিদিন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের কথা বলছে। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরা কোন দেশে বাস করছি, যে দেশে প্রধানমন্ত্রী খারাপ কাজ করলেও সমালোচনা করা যায় না। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্র একটাই- যেমন করেই হোক ক্ষমতায় বসে থাকা।
মির্জা ফখরুল বলেন, অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এরপর নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। যেই সরকার নতুন স্বপ্ন দেখাবে। এখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং নিহত সহযোদ্ধাদের রক্তের বদলা নিতে হলে আমাদেরকে জেগে উঠতে হবে। দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।