খাবার খেয়েই লাখপতি হয়েছেন ময়মনসিংহের নোমান !

image

You must need to login..!

Description

উবায়দুল হক, মৌলিক চাহিদা খাবারের জন্যই মানুষের ছুটে চলা। প্রতিমাসে খাবারের পেছনের খরচ করতে হয় হাজার হাজার টাকা। এবার সেই খাবার খেয়েই লাখপতি হয়েছেন ময়মনসিংহের এক তরুণ। ভাবতে অবাক লাগলেও এটিই সত্যি। আব্দুল্লাহ আল নোমান নামের এই তরুণ খাবার খাওয়ার ভিডিও ধারণ করে প্রকাশ করেন ফেসবুক ও ইউটিউবে। অনলাইনে সেই ভিডিও দেখেন লাখ লাখ মানুষ। আর তাতেই প্রতি মাসে নোমানের আয় দেড় লক্ষাধিক টাকা। ঢাকা পোস্টে  প্রতিবেদনটি করেছে ঢাকা পোস্টের ময়মনসিংহস্থ নিজস্ব প্রতিবেদক উবায়দুল হক।

আব্দুল্লাহ আল নোমানের বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের দাপুনিয়া সরকারি পুকুরপাড় এলাকায়। ছয় ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। ২০ বছর আগে ছোটবেলায় বাবাকে হারান। বাবার পেনশনের টাকায় কোনো রকমে সংসার চালিয়েছেন মা। মায়ের চেষ্টায় পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন নোমান। এখন তিনি কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসায় ফাজিলে পড়ছেন।

২০২০ সালে করোনাকালীন সবার মতো ঘরবন্দি হয়ে পড়েন নোমানও। তখনই চিন্তা করেন ঘরে বসে উপার্জনের জন্য অনলাইনে কোনো কিছু করার। কোরিয়ান এক ব্যক্তির খাওয়ার ভিডিওতে মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ দেখে অনুপ্রাণিত হন তিনি। ভিডিও দেখে দেখে তিনিও শখের বসেই খাওয়া শুরু করেন। একসময় একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে নিজের খাওয়ার ভিডিও করে সেখানে আপলোড দিতে থাকলেন নোমান।

পথচলার শুরুটা মোটেও মসৃণ ছিল না নোমানের। শুরুতে খাওয়া-দাওয়া করে ভিডিও করা নিয়ে টিপ্পনি শুনতে হয়েছে অনেকের কাছে। অনেকেই তাকে পাগল বলতো। তবে থেমে যাননি তিনি। কিন্তু একে একে ৫০ টারও বেশি ভিডিও আপলোড করার পরও সেসব ভিডিও কাঙ্ক্ষিত ভিউ না হওয়ায় একসময় হতাশ হয়ে পড়েন নোমান। রাগে-ক্ষোভে এসব ছেড়েই দিতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে ততদিনে খাবার বাবদ তার খরচ হয়ে গেছে প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা। নতুন করে জেদ চাপলো মনে। এর শেষ দেখে ছাড়বেন তিনি। হঠাৎ একটি ভিডিও হয়ে যায় ভাইরাল। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তার। এখন তার প্রতিটি ভিডিওই ভাইরাল হয় ফেসবুক ও ইউটিউবে।

নোমানের ‘বিডি বেস্ট এভার ফুড’ নামের পেইজে ঢুকে দেখা যায়, কখনো আস্ত তিনটি দেশি মুরগি, খাসির নল্লী, দেশি চিন হাঁস ভুনার সাথে ভাত নিয়ে গপাগপ খেলে ফেলেন। আবার ১০০ কোয়েল পাখির ডিম এবং আস্ত দেশি মুরগির সাথে খাসির রান দিয়ে মজা করে ভাত খেয়ে সাবাড় করেছেন। কখনো আবার প্লেট ভর্তি ঝাল কাচা মরিচ কচকচ করে খেয়ে সাফ করেছেন নিমিষেই। এসব ভিডিও দেখে বেশ মজা পান নেটিজেনরা। মজার মজার মন্তব্য আসে সেসব ভিডিওতে। আর এভাবেই এক বছরেই বদলে গেছে নোমানের অবস্থা। বেকার নোমান এখন স্বাবলম্বী। ঘরে বসেই উপার্জন হচ্ছে ডলার।

আব্দুল্লাহ আল নোমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুই বছর আগে আমি প্রথম একটি স্মার্টফোন কিনি। তখন আমি ইউটিউব ঢুকে দেখি আমার সামনে কোরিয়ান এক ব্যক্তির খাওয়ার ভিডিও আসে। সুন্দর করে খাবার খাওয়া দেখে আমারও ভাল লাগত। সেই ভিডিও দেখে দেখে আমি খাবার খেতাম। আমার মুখে আগে থেকেই বেশ রুচি ছিল। সেইসব ভিডিও দেখতে দেখতে আমি অনেক খাবার খেয়ে ফেলতাম। সেই সাথে দেখতাম এই ধরণের ভিডিওগুলোতে প্রচুর ভিউ হয়, উপার্জনও অনেক বেশি। পরে আমিও চিন্তা করলাম যে আমারও কিছু করার দরকার। যেহেতু আমিও ভাল খেতে পারি তাই এই পথই বেছে নিলাম। এরপর আমি ভিডিও আপলোড শুরু করলাম এবং আজকে এই অবস্থায় এসে পৌঁছেছি।

তিনি বলেন, প্রথম যখন ১০ হাজার টাকা আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হল তখন আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাই। এমন খুশি যে কাউকে বুঝানো অসম্ভব। সেই টাকা তুলে পুরোটাই আমি আবারও খাওয়া ও ভিডিও বানানোর পেছনে খরচ করেছিলাম। ভিডিওগুলোর মান আরও বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। এরপরই আমার এক লাখ সাবস্ক্রাইবার পূরণ হয়ে যায় দুই-তিন মাসের মধ্যেই। এরপরই প্রতিনিয়তই বাড়তে থাকে ভিউ ও সাবসক্রাইবারের সংখ্যা। ইনকাম ১০ হাজার থেকে বেড়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা হয়েছে প্রতি মাসে।

নোমানের এই সফলতার পেছনে রয়েছে অনেক কষ্ট আর পরিশ্রম। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, যারাই কোনো সফলতা অর্জন করুক না কেন, এর পেছনে অবশ্যই কষ্টের গল্প থাকে। অনেকে ভাববে যে খাই আবার ইনকাম করি। কিন্তু এটার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কষ্ট। একেত এত খাবার খেতে হয়। তারপর আবার ভাবতে হয় পরবর্তিতে কি খাওয়া যায়, কিভাবে ডেকোরেশন করা যায়। রান্নার বিষয়টাও দেখতে হয়। ঠিকভাবে রান্না হচ্ছে কিনা সেটাও দেখতে হয়। বাজার করতে হয়। ভিডিও শেষে এডিট করতে হয়। অর্থাৎ একটা ভিডিওর পেছনে অনেক সময় দিতে হয়, পরিশ্রম করতে হয়। আমি যে এই পর্যন্ত এসেছি, আমি যে কেমন কষ্ট করেছি তা আল্লাহই জানেন। অনেক কষ্টের মধ্য দিয়েই আজ এই পর্যন্ত এসেছি।

বেকার তরুণদের উদ্দেশে নোমান বলেন, এখন সবাই চাকরির জন্য পাগল থাকে। কিন্তু বর্তমানে দেশের যে অবস্থা তাতে সবাইকে চাকরি দেয়া সম্ভবও না। যেখানে ৫ জনের আসন রয়েছে সেখানে ৫ লাখ মানুষ গিয়ে হাজির হয়। এই অবস্থায় চাকরির পেছনে এত না ছুটে যার যে যোগ্যতা আছে সেই অনুযায়ী ফেসবুক-ইউটিউবিং করে ভালো টাকা উপার্জন সম্ভব।

আয়ের টাকায় মধ্য দাপুনিয়া সরকারি পুকুর পাড় বাজারের দুতলা বিশিষ্ট একটি ভবনের ছোট্ট একটি কক্ষ ভাড়া নিয়েছেন নোমান। কিনেছেন একটি আইফোন, একটি কম্পিউটার। সেই কক্ষেই নিজের মোবাইল দিয়ে ভিডিও বানিয়ে সেখানে বসেই এডিটিং, আপলোডের কাজ করেন তিনি। উপার্জন বাড়লেও নোমানের জীবন যাপন আছে আগের মতই। খুবই সহজ-সরলভাবে আর সাদাসিধে চলাফেরা করতেই পছন্দ করেন তিনি। সুত্র ঢাকা পোস্ট।

প্রধান সম্পাদকঃ
মতিউল আলম

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
মাকসুদা আক্তার