শেরপুর পৌরসভায় কে পাচ্ছেন নৌকার টিকেট, মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আধার, কেন্দ্রে আনিস ও লিটন

image

You must need to login..!

Description

নিজস্ব প্রতিবেদক. ময়মনসিংহ ও শেরপুর প্রতিনিধি :
ঐতিহ্যবাহী শেরপুর পৌরসভার নির্বাচন চতুর্থ বা শেষ ধাপে গড়ালেও শেষ পর্যন্ত কে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগ বা নৌকার টিকেট- তা নিয়েই এখন রাজনৈতিক অঙ্গনসহ নানা মহলে চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। এ পৌরসভার দলের ৫ মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে এখন তৃণমূলে বিজয়ী আনিসুর রহমান, বর্তমান মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন ও এককভাবে মাঠে থাকা এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধারকে নিয়েই চলছে সেই জল্পনা-কল্পনাসহ নানা গুঞ্জন।

জানা যায়, এ পৌরসভায় কেন্দ্রীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে তৃণমূলের ভোটে জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আনিসুর রহমান জয়ী হলেও ‘ভোট বাণিজ্য’র অভিযোগে সেই তৃণমূল কেন্দ্রেও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠার পাশাপাশি তিনি দলে অপেক্ষাকৃত নবীন হওয়ায় তার মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে তিনি মাঠের নির্বাচনী তৎপরতা না চালিয়ে কেন্দ্রের দিকেই অধিক ঝুঁকে পড়েছেন। তাকে টিকিয়ে রাখতে দলীয় মনোনয়ন বোর্ডে থাকা নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুইপ আতিউর রহমান আতিক। আর সেই তৃণমূলে অংশ নিয়ে আনিসের চেয়ে অর্ধেকেরও কম ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান পাওয়া বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া লিটন প্রথম থেকেই মাঠে না থাকলেও মনোনয়ন বাগাতে কেন্দ্রে দৌড়-ঝাঁপের পাশাপাশি সুপারিশ পেতে দায়িত্বশীল উচ্চ পর্যায়ে থাকা বন্ধুবান্ধবদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। অন্যদিকে দলের ৫ মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে তৃণমূলে দ্বিতীয় হওয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল হাসান উৎপল ও তৃণমূলের ভোট প্রত্যাখান করা শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আরিফ রেজা নীরব থাকলেও অপরজন জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার কেন্দ্রে তৃণমূলের ভোট নিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে থেমে না থেকে নিয়মিত মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। প্রতিদিন তিনি এলাকার দলীয় নেতা-কর্মীসহ সমর্থকদের নিয়ে শহরের বিভিন্ন মহল্লায় গণসংযোগ করছেন। ভোটারদের হাতে তুলে দিচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারণার লিফলেট। এছাড়া দু’একদিন পরপরই তিনি কোন না কোন মহল্লায় নির্বাচনী সভাও করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে তাকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমান ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ছানুয়ার হোসেন ছানুসহ দলের একটি শক্তিশালী অংশ সমর্থন দেওয়ায় এবং তাদের নিয়ে সম্প্রতি শহরের নতুন বাস টার্মিনাল এলাকায় বৃহৎ সমাবেশ করার পর থেকে শহরের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে ইতোমধ্যে তার পক্ষে আঞ্চলিকতার বিশেষ ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে বিভিন্ন মহল্লাসহ খোদ শহরে তার পক্ষে সাড়াও মিলছে বেশ। তিনি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ একাধিক দফায় সাধারণ সম্পাদক এবং প্রেসক্লাবের দু’দফায় সভাপতির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ছাত্রজীবন থেকে ছাত্র রাজনীতির হাত ধরে তিলে তিলে নিজেকে গড়ে তোলায় এবং শহরের বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত থাকার সুবাদে তার ব্যাপক জনবান্ধব পরিচিতি যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে ক্লিন ইমেজ। আর এসব মিলে নির্বাচনী মাঠে এককভাবে বিচরণ করা রফিকুল ইসলাম আধারই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতাসহ মাঠ পর্যায়ের অবস্থা বিবেচনায় তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনিই হবেন এ পৌরসভার পরবর্তী মেয়র। অন্যদিকে বর্তমান মেয়র গোলাম কিবরিয়া লিটন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হওয়ার পাশাপাশি একসময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকার পাশাপাশি তুলনামূলক ক্লিন ইমেজের অধিকারী হলেও এ দফায় নির্বাচন করবেন না-এমনটা জানান দিয়েছিলেন দু’বছর আগে এবং ওই সময় থেকেই নাগরিকত্ব নিতে যাতায়াত বাড়িয়েছেন আমেরিকায়। আর সে সূত্রেই হয়তো পৌরসভার নানা সমস্যা সমাধানে দায়িত্বশীল ভূমিকা না রাখার পাশাপাশি দল ও সাধারণ মানুষের সাথে খুব একটা যোগাযোগ না রাখায় অনেকেই নাখোশ তার প্রতি। এরপরও নির্বাচনী মাঠে তার পক্ষে নেই কোন তৎপরতা। আর আনিসুর রহমান আনিস তৃণমূলে জয়ী হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে তৎপর থাকলেও রাজনীতিতে নবীন ও রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে খোদ রাজনৈতিক অঙ্গনেই তার উত্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেকেই। এছাড়া ভোটবাণিজ্যের অভিযোগে তৃণমূল প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠায় কেন্দ্রেও রয়েছেন কোণঠাসা। তারপরও দলীয় মনোনয়ন বাগাতে আনিস ও লিটনের পক্ষে কেন্দ্রে চলছে ব্যাপক লবিং। অবশ্য সেই লবিং থেকে বিরত নেই মাঠে থাকা আধারও। এখন শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন বা নৌকার টিকেট কার ভাগ্যে জুটেÑ সেটাই দেখার বিষয়।