ব্রহ্মপুত্র নদ খনন নিয়ে অভিনব প্রতিবাদঃ মৃতের চিৎকার

image

You must need to login..!

Description

বিএমটিভি নিউজ ডেস্কঃ  মৃতের চিৎকার, শিরোনামে ব্রহ্মপুত্র নদ খনন নিয়ে অভিনব প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন সংগঠন। আজ শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাচারিঘাট বাণিজ্য মেলা সংলগ্ন, ব্রহ্মপুত্র নদে নেমে হাঁটুজলে নেমে গান গেয়ে-কবিতা পাঠের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো হয়।

 

ব্রহ্মপুত্র নদের করুণ পরিণতির কারণে সরকার নদটি খননের উদ্যোগ নেয়। খননের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। নদ সরু হয়ে হচ্ছে আর জেগে উঠছে চর। এর প্রতিবাদে এ্ ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

আয়োজকরা বলেন, আমাদের চোখের সামনে ব্রহ্মপুত্র নদ ধুকছে পিপাসায়। বুকে তার হাহাকার। খননের নামে লীলাযজ্ঞে ব্রহ্মপুত্র নিজেই হতবিহ্বল। আমরা সেই ব্রহ্মপুত্রের বুকে কিছুক্ষণ অবস্থান নেন। হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে গাওয়া হয় নদী ও জলের গান। পাঠ করা হয় কবিতা। একদিকে চলে গান-কবিতা, অন্যদিকে হাঁটুজলে গইর পারা হয়।

বিভিন্ন প্রতিবাদ লেখা ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।। চিল্লানী (চিৎকার করে) দিয়ে আহাজারী করা হয়। সবকিছু করা হয় ব্রহ্মপুত্রের মাঝখানে, হাঁটুজলে। ফুলপাখি-গাছ-নদী মরে গেলে থাকে তার নিঃশব্দ কান্না। যেমন মৃত লাশের পাশে বসে স্বজনরা আহাজারি তেমনি ‘মৃত ব্রহ্মপুত্র বুকে অবস্থান নিয়ে চিৎকার’ করে সচেতন নাগরিকরা।

আয়োজনের উদ্যোক্তা শামীম আশরাফ বলেন, শিল্পের মানুষের চিন্তা নিয়ে সমন্বিতভাবে মৃতের চিৎকার কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। হাজার কোটি টাকা বাজেট হওয়ার পরও, কাজ হওয়ার পরও কেন নদে হাঁটু পানি। এই মৃত নদের চিৎকার অনেকের কাছে হয়তো পৌঁছাবে না। কিন্তু শিল্পের ভেতর দিয়ে দায়িত্বশীলসহ সবার কাছে নদের আর্তনাদ পৌঁছে দিতেই আমাদের এই চিৎকার।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া জনউদ্যোগ ময়মনসিংহ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, দুই হাজার ৭৬৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার খনন প্রকল্প চলছে ব্রহ্মপুত্রে। গত বছর মে মাসে এক সভায় প্রকল্প পরিচালক বলেছিলেন এই চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ে নদে বার্জ, লঞ্চ-স্টিমার চলবে। কিন্তু আমরা দেখছি ঠিক উল্টো। এখন অনেক স্থানে হেঁটে পার হওয়া যায়। হাঁটুর নিচে পানি থাকে। ১০ ইঞ্চি পানিও কোথাও কোথাও নেই। যেখানে শুষ্ক মৌসুমেও কমপক্ষে ১০ ফুট পানি থাকার কথা। আমার মনে হয় নদ খনন করে যৌবন ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে এটিকে মেরে ফেলার একটা পরিকল্পনা হচ্ছে। তাই আমরা এই খনন কাজের প্রতিবাদ করছি এবং ধারাবাহিক আন্দোলন করে যাব। যাতে সরকারের অর্থের অপচয়টা না হয়, যথাযথভাবে যেন নদ খনন হয় এবং ব্রহ্মপুত্র যাতে তার যৌবন ফিরে পায়।

বঙ্গবন্ধু শিশু একাডেমি ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কবি শরিফুল ইসলাম সরকার বলেন, আমি নিজেই ব্রহ্মপুত্রকে খরস্রোতা নদ হিসেবে দেখেছি। কিন্তু এই নদ খননের নামে টাকা অপচয় করা হচ্ছে, বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে অসাধু ব্যক্তিরা দখলের চক্রান্ত করছে। প্রধানমন্ত্রী এই নদ খননের জন্য যে বাজেট দিয়েছেন তার সঠিক ব্যবহার করা হচ্ছে না। আমার অবস্থান থেকে এসবের প্রতিবাদ জানাতেই এখানে এসেছি। কারণ আমরা সেই পুরোনো নদ আবারও ফিরে পেতে চাই।

জানা গেছে, দখল, দূষণ আর পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ২০১৯ সালের শেষের দিকে শুরু হয় খননকাজ। প্রায় দুই হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নদের ২২৭ কিলোমিটার খনন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ)। খননের পর যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের সংযোগস্থল জামালপুরের কুলকান্দি থেকে কিশোরগঞ্জের টোক পর্যন্ত নদটি ৩০০ ফুট প্রশস্ত ও শুষ্ক মৌসুমে ১০ ফুট গভীর থাকবে এমনটি কথা ছিল।

প্রধান সম্পাদকঃ
মতিউল আলম

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
মাকসুদা আক্তার