জীবন দিয়েছেন, ইজ্জত দেননিঃ আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কেউ রইল না

জীবন দিয়েছেন, ইজ্জত দেননিঃ আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কেউ রইল না

BMTV Desk No Comments

উবায়দুল হক ঃ জীবন দিয়েছেন, তবু ইজ্জত দেননি গার্মেন্টসকর্মী শামসুন্নাহার (৪৫) । পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তার সন্তানরা মা হারিয়ে চারদিকে ঘোর অন্ধকার দেখছেন । মায়ের আয়ে পড়াশোনা ও সংসার চলতো। তারা বলেন, আল্লাহ ছাড়া আমাদেরকে দেখার আর কেউ রইল না।’ ‘আমার আম্মু অনেক কষ্ট করে আমাদের বড় করেছেন। আম্মুর আয় দিয়েই আমরা আমাদের পড়াশোনার খরচ চলতো। এতদূর আসতে পেরেছি শুধু আম্মুর কারণে। আম্মু আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই বলছিলেন চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় নিহত গার্মেন্টসকর্মী শামসুন্নাহানের (৪৫) ছোট ছেলে কলেজ ছাত্র সাজ্জাদুল ইসলাম সাকিব।
নিহতের পরিবার জানায়, এক যুগ আগে কিশোরগঞ্জের শাহজাহানের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে শামসুন্নাহারের। এরপর দুই ছেলে ও এক মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে গাজীপুরে গিয়ে গার্মেন্টেসে শ্রমিকের কাজ শুরু করেন শামসুন্নাহার। চাকরি থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সন্তানদের খরচ জুগিয়েছেন তিনি। মেয়ে সুইটি আক্তারকে বিয়ে দিয়েছেন এবং দুই ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন।

বড় ছেলে মো. সজীব সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে তৃতীয় সেমিস্টার ও ছোট ছেলে সাজ্জাদুল ইসলাম সাকিব কিশোরগঞ্জ পলিটেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র।

সজীব বলেন, আমাদের দুই ভাইকে নিয়ে আম্মুর অনেক স্বপ্ন ছিল। যে পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি পুরোটাই আম্মুর অবদান। তার স্বপ্ন ছিল আমরা পড়াশোনা শেষ করে অনেক বড় হব, অনেক কিছু করবো। কিন্তু আম্মু মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের স্বপ্নও নিয়ে গেছে। আম্মুর এই মৃত্যুর জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর এমন কাজ করার সাহস না পায়।
এর আগে, শুক্রবার (১৬ জুন) রাতে গাজীপুরের শ্রীপুরের রিদিশা গার্মেন্টসে কাজ শেষে হাইওয়ে মিনিবাসে বাসায় ফিরছিলেন ওই নারী। পথে ভালুকা সিডস্টোর এলাকায় অন্য যাত্রীরা নেমে যান। এ সময় ওই নারী একা থাকায় চলন্ত বাসেই ধর্ষণের চেষ্টা চালান চালক ও দুই সহকারী। প্রতিরোধের চেষ্টা করেন নারী। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা প্রথমে তাকে মারধর করেন, তারপর চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেন। চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়ায় ওই নারী মাথায় গুরুতর আঘাত পান। তাকে স্থানীয়রা প্রথমে ভালুকা সিডস্টোরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি ও পরে সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ভোরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শামসুন্নাহারকে প্রথমে সার্জারি ১০ নম্বর ওয়ার্ড ও পরবর্তীতে নিউরোসার্জারি বিভাগ থেকে আইসিইউতে স্থানান্তর করার পর রোববার বেলা পৌনে ১১টায় তিনি মারা যান।

ভালুকা থানা পুলিশের ওসি কামাল হোসেন বলেন, ঘটনার পরপরই অভিযান চালিয়ে চালক রাকিব (২১), সহকারী আরিফ (২০) ও সুপারভাইজার আনন্দ দাসকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন বিকেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে আসামিদের কারাগারে পাঠিয়েছেন।ওসি আরও জানান, মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়ের পক্ষ থেকে চিকিৎসা ও দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।###

LATEST POSTS