You must need to login..!
Description
এনায়েতুর রহমান,ফুলবাড়ীয়া (ময়মনসিংহ) থেকে : এই তো কিছুদিন আগেও যে টাকা রোজগার করে সংসার চালাত, সে এখন শিকলবন্দি। ঘরের ভেতর পাঁয়ে শিকল পড়ে ‘ তার মুখে এলোমেলো নানান কথা শুনা যায়। হঠাৎ তারেকের এমন মানসিক অসুস্থতায় অসহায় পরিবার চিকিৎসার খরচ জোগাতে পারছেন না। দিনমজুর বাবা ছেলের কথা মনে করে শুধু কাঁদেন। আর্থিক সহযোগিতা পেলে চিকিৎসায় আবারও কর্মমুখী হতে পারে তারেক।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার চান্দের বাজার পাঁচ কুশমাইল আলী সরকার ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন তারেক (২১) এর বাড়ী। তার বাবার নাম হাছেন আলী। পেশায় একজন দিনমজুর ৩শ টাকা রোজ বেতনে একটি সুপারির দোকানে কাজ করেন হাছেন আলী। তারেক দেড় বছর আগেও সুস্থ ছিল। তারেকের শিকলবন্দি জীবন নিয়ে কথা হয় পরিবার ও স্থানীয়দের সাথে।
হাছেন আলীর প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার সময় এক ছেলে এক মেয়ে রেখে যান। সন্তানদের দেখাশোনার জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করেন হাছেন আলী। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস ২য় স্ত্রীও মারা যায়। দ্বিতীয় স্ত্রী মারা যাওয়ার সময় তারেক সহ ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রেখে যান। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, তারেকের মা হারা দশ মাসের ছোট ভাইকে দত্তক দিয়ে দেয় পরিবার। সহায় সম্বল বলতে বসতবাড়ীর জমিটুকু। প্রাথমিক বিদ্যালয় গন্ডি পার হতেই ভালুকজান মোটর সাইকেলের গ্যারেজে কাজে যোগদেয় তারেক। গ্যারেজে কাজ ছেড়ে প্রায় ৩ বছর আগে ফুফাত ভাই হালিমের সাথে ঢাকার কালিগঞ্জে প্যান্ট তৈরির কারখানায় কাজ শুরু করেন। দুই বছর কাজ শিখে নিজেই অন্য একটি কারখানায় যোগদেয় সে। সেখানে বছর খানেক কাজ করার পর বাড়িতে এসে অভিভাবকদের বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তারা তারেক কে নিজের পায়ে দাঁড়াতে বলে। তারেক আবারও কালিগঞ্জে যায় এবার বাড়িতে এসে তার পাগলামী শুরু হয়। তার উল্টা পাল্টা আচরন করায় স্বজনরা তাকে কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ময়মনসিংহ এর সহযোগী অধ্যাপক মনোরোগ বিভাগ ডাক্তার এম এ এস পাঠান এর তত্বাবধানে ৩২ দিন চিকিৎসা শেষে বাড়িতে আনা হয়। বাড়িতে এসে তারেক বলে আমি এখন সুস্থ, আমার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা ঋণ হয়েছে এসব দিতে হবে আমি কাজে যাবো। সে আবারও ঢাকার কালিগঞ্জে যায় সেখানে গিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অন্য কোথাও চলে যায়, পরিবার তাকে না পেয়ে খুঁজাখুজি শুরু করে। শেষ পর্যন্ত গত ঈদুল আজহার ৮ দিন আগে তারেক কে নারায়নগঞ্জ থেকে বাড়িতে নিয়ে আসে স্বজনরা। কিন্তু তারেক আগের চেয়ে বেশি পাগলামি শুরু করায় প্রতিবেশিরা ভয় পেতে থাকে। সম্প্রতি তারেক ঘরের জিনিসপত্র ভাংচুর করে তার বাবা ও ভাইকে মারতে যায়। এ অবস্থায় তারেকের পরিবার খুবই দু:চিন্তায় পড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত জানমাল ক্ষতি ও মানুষের ভয়ে তাকে শিকলবন্দি করা হয়। মানুষের সাহায্য ছাড়া তারেক কে সুস্থ করা যাবে না বলে তার বাবা, ভাই ও পরিবার পরিজনরা জানিয়েছেন।
তারেকের চাচা খাইরুল ইসলাম বলেন, হাছেন আলী একজন দিনমজুর। দিন আনে দিন খায়, তার সাধ্য অনুযায়ী টাকা দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। তারেক গোসল করতে গেলে পানি থেকে উঠে না। ভালো রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করে না। মাঝে মাঝে ঘর থেকে বাহির করা হয়। ঘরের পাশে একটি খুঁটিতে শিকল বন্দি করে রাখা হয়েছে। তাকে খাবার দেওয়া হয় সেখানেই। মা নাই, বাবা মানুষের কাজ করে, তাকে নিয়ে আমরা খুব কষ্টে আছি।
তারেকের বাবা হাছেন আলী বলেন, আমার কষ্টের শেষ কোথায়। মা হারা সন্তান অনেক কষ্টে বড় করেছি। আমার চোখের সামনে আমার ছেলে পাগল হয়ে গেছে, বাবা হয়ে আমার আর সহ্য হয় না। আপনাকে মেরেছে কি না জানতে চাইলে বলেন, চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, ছেলে কী বাবাকে মারতে পারে? ও বুঝে নাই। যেভাবেই হোকে আমি ওর চিকিৎসা করাতে চাই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদুল করিম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন, এ বিষয়টি আমি জানতাম না, খবরটি শোনার পর আমি স্ব প্রণোদিত হয়ে খোঁচ খবর নিচ্ছি। উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে ও আমার দপ্তর থেকে সকল সহযোগীতা করা হবে।##
এনায়েতুর রহমান