You must need to login..!
Description
উবায়দুল হক, বিএমটিভি নিউজঃ
ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে সড়ক ও ফুটপাতের নিচ দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন ও ঢাকনাসহ ম্যানহোল স্থাপন করা হয়। অন্তত ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৩৪৫ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই ম্যানহোলের ঢাকনাসহ বক্স সিস্টেমের ড্রেন। এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। অনেকে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। তবুও চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। এলাকার মানুষকেও সচেতন হতে হবে। চুরি ঠেকাতে স্থানীয় মানুষকে নিয়ে প্রতিরক্ষা টিম করতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগামীতে কনক্রিট দিয়ে স্ল্যাব করার চিন্তা করছি। এতে চুরি রোধ হতে পারে।
কিন্তু ম্যানহোলের ঢাকনাগুলো স্থাপনের কয়েক মাস না যেতেই ভাটিকাশর, বলাশপুর, কেওয়াটখালী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নতুন বাজার এলাকা, ব্রহ্মপল্লীসহ বিভিন্ন এলাকায় ম্যানহোলের ঢাকনা গায়েব হয়ে গেছে।সড়কগুলোতে ম্যানহোলের ঢাকনা গায়েব হয়ে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে নারী-শিশু, বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষকে। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনাও। স্থানীয়রা বলছেন- দিনে ঢাকনাগুলো স্থাপন করার পর রাতেই গায়েব হয়ে যায়।
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন (মসিক) থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, গত তিন মাসে অন্তত ৩০০ ঢাকনা চুরি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নগরীর কেওয়াটখালী এলাকায় অন্তত ২০০ ঢাকনা চুরি হয়েছে। এছাড়াও ভাটিকাশর ও বলাশপুর এলাকা থেকে ১৫০টির বেশি ঢাকনা চুরি হয়েছে। আর অন্যান্য এলাকাগুলো মিলে আরও প্রায় ১৫০টি ঢাকনা হাওয়া হয়ে গেছে।
মসিক সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে মাঝে মধ্যে দুই-একটা ঢাকনা চুরি হলেও গত তিন মাস ধরে চুরির প্রবণতা বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে সরেজমিনে ভাটিকাশর ও বলাশপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চকচকে কনক্রিটের সড়ক, টাইলস করা ফুটপাত, মাটির গভীর দিয়ে নালা ব্যবস্থা। মাঝে মাঝে ম্যানহোল। তবে বেশিরভাগ ম্যানহোলেই নেই ঢাকনা। ঢাকনাহীন এসব ম্যানহোলে গাছের অংশ, ইট কিংবা বাঁশ দিয়ে সতর্ক অবস্থা সৃষ্টি করা হলেও অধিকাংশই পড়ে আছে খালি অবস্থায়। বৃষ্টিতে কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে ঢাকা পড়েছে পানির নিচে। এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ।
ভাটিকাশর এলাকার বাসিন্দা রুমা আক্তার বলেন, পুরো সড়কজুড়ে ম্যানহোল ঢাকনাবিহীন। স্কুলপড়ুয়া তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আমার খুব দুশ্চিন্তা হয়। কয়েক দিন আগেই কয়েকজন ছেলে খেলতে গিয়ে গর্তে পড়ে গেছে।
+একই এলাকার সেজান রহমান সৈকত নামে এক যুবক বলেন, সিটি কর্পোরেশন দিনে ঢাকনা লাগিয়ে গেলে রাতেই চুরি হয়ে যায়। তাই ওই অবস্থায়ই এখন ফাঁকা পড়ে আছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে সবাইকে। মাদকসেবীরা এগুলো চুরি করে ভাঙারি হিসেবে বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে মাদক গ্রহণ করে। কর্তৃপক্ষের উচিত সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা।সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, সড়কে স্থাপন করা ঢাকনাগুলোতে খরচ ২১ হাজার টাকা এবং ফুটপাতে স্থাপন করা ঢাকনাগুলো ১২ হাজার টাকা। সড়কে স্থাপিত প্রায় ২০০ ঢাকনা ও ফুটপাতে স্থাপিত প্রায় ৩০০ ঢাকনা মিলে অন্তত ৭৮ লাখ টাকার ঢাকনা চুরি হয়েছে গত তিন মাসে।
হঠাৎ ঢাকনা চুরি বেড়ে যাওয়ায় অনেকের সন্দেহের তীর ঢাকনা স্থাপনের কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দিকে। সেই সন্দেহ আরও দানা বাঁধবে সিটি কর্পোরেশনের ঠিক পেছনে হরিকিশোর রায় সড়কটিতে গেলে। শাশীলজ জাদুঘরের পেছনে দেয়াল ঘেঁষা ফুটপাতে বেশ কয়েকটি ঢাকনা নেই ম্যানহোলের। তাতে কনক্রিটের স্লাব দিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে দুটি ঢাকনা স্থাপনা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের। লোহার ঢাকনায় এমনটিই লেখা রয়েছে। এই ঢাকনাগুলো ২০২৩ সালেই নির্মিত।
কয়েকজন নাগরিকের প্রশ্ন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ঢাকনাগুলো ময়মনসিংহ আসলো কীভাবে। ময়মনসিংহেও ঢাকনা চুরি হচ্ছে ক্রমাগতভাবেই। চুরি হওয়া ঢাকনা ফের কিনে স্থাপন করার প্রবণতা থাকতে পারে। এতে সিটি কর্পোরেশনের ব্যয় বাড়লেও অসাধুরা লাভবান হবে।
তবে এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজহারুল হকের দাবি, ঢাকনাগুলো ভেঙে টুকরো করে নিয়ে যায়। আবার এগুলো স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই।
ঢাকার ঢাকনা ময়মনসিংহে কীভাবে এলো- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হয়তো ভুলে চলে আসতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সব রাস্তা থেকে অধিকাংশ ঢাকনা চুরি হয়ে গেছে। তারা কয়েকবার স্থাপন করলেও তা আবার নিয়ে যাচ্ছে। ঢাকনাগুলোতে সিটি কর্পোরেশনের অনেক ব্যয় হলেও চোরেরা সেগুলো বিক্রি করে খুব সামান্য টাকা পায়। সামান্য টাকার জন্য সিটি কর্পোরেশনের ক্ষতি করছে। চুরি হয়ে গেলেও এটি দ্রুত প্রতিস্থাপন করা যায় না।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ বলেন, এতো পরিমাণ ঢাকনা চুরির তথ্য আমাকে কেউ জানায়নি। লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়নি। তবুও ওইসব এলাকায় টহল জোরদার করেছি। পৃথক দুটি অভিযানে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ও কিছু ঢাকনা উদ্ধারও করা হয়েছে।