
You must need to login..!
Description
বিএমটিভি নিউজ ডেস্কঃ
সরকার পতনের একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় রাজধানীতে কালো পতাকা গণমিছিল করেছে বিএনপি। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির পৃথক আয়োজনে এই মিছিল পালন করে দলটি। শুক্রবার বিকাল ৪টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ঢাকা দক্ষিণ বিএনপি ও শ্যামলী রিং রোড থেকে ঢাকা উত্তর বিএনপি কালো পতাকা গণমিছিল শুরু করে। ‘অবৈধ, লুটেরা, ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তিকরণ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নতুন ইসি গঠন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের একদফা দাবিতে’ এই কালো পতাকা গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
মিছিলের আগে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যে দিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শুরু হয়। ঢাকা দক্ষিণের গণমিছিলে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সমাবেশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে নয় বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে ভারতকে পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির এই নেতা। মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকারের পদত্যাগ না হলে এদেশের মানুষ বাঁচবে না। দেশের স্বাধীনতা থাকবে না। আর আমাদের দেশ নিয়ে বহু দেশ মাথা ঘামাচ্ছে। তাদের কার কী স্বার্থ তা আমি জানি না।তবে একটি বিশেষ দেশ (ভারত) তারা পরিষ্কার বলছে, এখান থেকে শেখ হাসিনা সরকারকে সরানো যাবে না। এই কথাটা উদ্দেশ্যমূলক। এটা আমার দেশ, দেশের মানুষকে বুঝতে হবে-একটা সরকারকে কেনো থাকতে হবে? আর যারা বলেন এই কথা এবং যে দেশ বলেন এই কথা-তাদেরকে আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, সরকারের সঙ্গে নয়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে নয় এবং বিএনপির সঙ্গে নয়, এদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন।
এদেশের জনগণকে ভালোবাসতে শিখুন। প্রতিবেশী হিসেবে আমরা আপনাদেরকে এটা বলতেই পারি, এদেশের মানুষের সঙ্গে সখ্যতা করুন। যদি এ দেশের মানুষ আপনাদেরকে ভালো না বাসে তাহলে কখনোই এদেশ থেকে আপনারা কিছু পেতে পারেন না।আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, অনেক দেনা বাড়িয়েছেন। আর দেনা বাড়াবেন না। একদিন এই দেনার ঋণ আপনাদের শোধ করতেই হবে। আর একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আমরা আওয়ামীবিহীন নির্বাচন চাই। কিন্তু বিনা ভোটে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আর চিন্তা করবেন না। তাহলে ভুল জায়গায় চলে যাবেন। আব্বাস বলেন, এদেশের জনগণের টাকায় যারা লেখা-পড়া করে পুলিশ-প্রশাসনে চাকরি নিয়েছেন, তারা আজকে আমাদের নেতাকর্মীদের গুলি করে হত্যা করছেন। তারা সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হয়ে আমাদের কর্মীদের বিচারের নামে প্রহসন করে আজকে জেলে দিচ্ছে। ওই কর্মকর্তারা আজকে জেলখানা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় আমাদের কর্মীদেরকে হত্যা করছে। আগে হত্যা করতো গুলি ও গুম করে। এখন জেলখানায় আটকে রেখে এবং বিনা চিকিৎসার আমাদের কর্মীদেরকে হত্যা করছে। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে জেলখানায় আমাদের কয়েকজন কর্মী মারা গেছেন। এই কুশিক্ষায় শিক্ষিত লোকগুলো দেশকে আজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছেন। কারণ তারা দেশকে ভালোবাসেন না, ভালোবাসেন টাকাকে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং পাকিস্তানিরা যেভাবে লুট করেছিলো, তারচেয়ে অনেক হাজারগুণ বেশি লুট করেছেন এই সরকার এবং সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা।
ডিমের দাম এখন ৬০ টাকা হালি উল্লেখ করে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, একটা ডিম ১৫ টাকা। চিন্তা করা যায়? কেনো হয়েছে? মুরগি কি ডিম দেয়া বন্ধ করেছে। করে নাই। তাহলে কেনো হয়েছে। কারণ টাকার মূল্যমান কমে গেছে। আর আজকে দেখলাম, আগে ১০০ টাকার মধ্যে ১০০ টাকাই আমাদের ছিলো। এখন ১০০ টাকায় আমাদের ১৪ টাকা কমে গেছে! বিদ্যুতের মিটারে কারচুপির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার এভাবে দেশের মানুষগুলো অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু বানিয়ে ফেলেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এখান থেকে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ বৃষ্টির চেয়েও বড় ঢল রাস্তায় নেমেছে। আর বিএনপি মানুষের দল। মানুষ মানুষের জন্য। আর আওয়ামী লীগ দানবের দল। কিন্তু এই সরকার যে হারে অন্যায় ও অত্যাচার করেছেন। তাতে ১৮ কোটি মানুষ ক্ষমা করবেন কিনা, সেদিকে তাকান। তাই বন্দুক তাক করার চেষ্টা করবেন না। আমার ওপর গুলি চালিয়েছেন, আমি বেঁচে আছি এবং আমাদের নেতাকর্মীরাও বেঁচে আছে। তাই কেউ বন্দুকের গুলিতে পিছিয়ে যাবেন না। আর সরকারকে বলবো, মানে মানে কেটে পড়েন।
সরজমিন দেখা যায়, বেলা সোয়া ২টায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরও বৃষ্টিতে ভিজে নেতাকর্মীরা কর্মসূচির প্রাঙ্গণে অবস্থান করেন। পরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলেও মঞ্চে অবস্থান করে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতারা। এরআগে কর্মসূচিতে অংশ নিতে বেলা ১টা থেকে কালো পতাকা হাতে নিয়ে নয়াপল্টনে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে শুরু করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে কর্মসূচির প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তুলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে মিছিল পূর্ব সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিশেষ সম্পাদক ডা. আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, ইশরাক হোসেন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাদেশ ইকবাল খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।