সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাস ৪টি স্কিমের সুফল নিয়ে ময়মনসিংহে আলোচনা

image

You must need to login..!

Description

স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ 

দেশের সর্বস্তরের জনগণকে টেকসই পেনশন কাঠামোয় অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের কার্যকর বাস্তবায়ন ও বহুল প্রচারের উদ্দেশ্য সংশ্লিষ্ট সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।
বুধবার (৩০ আগস্ট) ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে; সার্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়নে জেলা পর্যায়ে অবহিতকরণ শিরোনামে এক সভার আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাফিজার রহমান এর সভাপতিত্বে অবহিতকরণ সভায় সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
সম্মানীয় অতিথি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সর্বজনীন পেনশন স্কিম কর্মসূচির ওপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাস স্কিমসহ এ কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন তিনি। উপস্থাপনায় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন
সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তার উপস্থাপনায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বৈশিষ্ট্য, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ৪টি পেনশন স্কিমে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মাসিক পেনশন চিত্র তুলে ধরেন। সর্বজনীন পেনশন স্কিমের রেজিস্ট্রেশনের ধাপসমূহের স্ক্যাচ উত্থাপন করেন।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবপেইজ প্রদর্শিত করে বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি। সম্মানীয় অতিথি বলেন, ১৭ আগস্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বজনীন পেনশন স্কিম কর্মসূচি উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহ সহ আটটি জেলাকে ভার্চুয়ালি যুক্ত করা হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। স্কিমের বিষয়ে আরো একটু বিশদভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য ও জনমনে জিজ্ঞাসা বা প্রশ্ন বা জানার ইচ্ছা বা সংশয়ের জবাবে আজকের এ আয়োজন।
তিনি আরো বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল এটি। সর্বস্তরের জনগণকে পেনশনভুক্ত করতে স্কিম গঠন করা।
সরকারি চাকুরীজীবী ব্যতীত ১৮ থেকে ৫০ বছরের ও ক্ষেত্রবিশেষে  তারও উর্ধ্ববয়সী বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য এ স্কিমগুলো প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে জাতীয় বাজেটের বরাদ্দ প্রায় ১ লক্ষ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এটা জাতীয় বাজেটের প্রায় ১৬.৫%। প্রায় ২৯% লোক সামাজিক সুরক্ষার আওতায়। বাজেটের একটা বৃহৎ অংশ সামাজিক সুরক্ষায় ব্যবহৃত হয়। সকলকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আনার জন্য এ স্কিম কর্মসূচি। এটির সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে।
সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি কমে আসবে। একটা সময় পরে সবাই সর্বজনীন পেনশন স্কিম কর্মসূচির আওতায় চলে আসবে। অবহিতকরণ সভার মুক্ত আলোচনায় আঞ্চলিক তথ্য অফিসের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ান উল্লেখ করেন, ৯ বছর চাঁদা দেওয়ার পর চাঁদাদাতা যদি মারা যান তাহলে বাকি ১ বছর কী ধরনের ব্যবস্থাপনায় চলবে। তার প্রশ্নের উত্তরে উপসচিব বলেন, জমাকৃত অর্থ নমিনিকে এককালীন মুনাফাসহ ফেরত দেওয়া হবে।
মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খুরশিদ আলম উল্লেখ করেন, প্রবাসী দেশে আসলে প্রবাস স্কিম পরিবর্তন করা যাবে কিনা। এ প্রেক্ষিতে বলা হয়, সেটা পরিবর্তনযোগ্য। বিএনএসবি’র প্রতিনিধি আবু সাঈদ খান উল্লেখ করেন, সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এ স্কিমগুলোর নিরাপত্তা কতটুকু। এতে বলা হয়, ক্রিমগুলোর গ্যারান্টর হচ্ছে সরকার নিজেই। এতে সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের  প্রভাব পড়বে না।
মুক্ত আলোচনা পর্বে জেলা তথ্য অফিসের পরিচালক শেখ মো: শহীদুল ইসলাম, ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান সংকর সাহা, কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, ময়মনসিংহ কমার্স কলেজের প্রিন্সিপাল, মিন্টু মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ নিহার রঞ্জন দাস, ঔষধ প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়ক, ব্র্যাক কো-অর্ডিনেটর জাহাঙ্গীর আলম, সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল আজিজ, এনজিও প্রতিনিধি নুরুনাহার অংশগ্রহণ করেন।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ ইউসুফ খান পাঠান বলেন, যে দেশের সামাজিক নিরাপত্তা যতটা সুরক্ষিত সে দেশের মাপকাঠি ততটা উন্নত। মানুষ নিজের চেষ্টায় যেটা পারেনা, রাষ্ট্র যদি সে নিরাপত্তা দেয় সেটাই সামাজিক সুরক্ষা। সরকারি দল বা যে রাজনৈতিক দলই থাকুক না কেন এ ধরনের কর্মসূচি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণমুখী। রাজনৈতিক স্বার্থে দেশের কল্যাণকর কর্মসূচিতে কখনোই বাধা দেওয়া উচিত নয় বা এমনটা মন্তব্য করা উচিত নয় যেটা দেশের জন্য দুর্ভাগ্য বয়ে আনে। মানুষের সেবার খাতগুলোতে দু-একটি জায়গায় আর্থিক ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম থাকলে সেটা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
প্রশাসনের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে যেন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো আরো সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। আন্তরিকভাবেই চাওয়া সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি যেন ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করে।
সর্বস্তরের মানুষ যেন এ কর্মসূচির সুযোগ ও সুবিধা পায়। জেলা প্রশাসক মো: মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আমরা যেন যে যার অবস্থান থেকে এ পেনশন কর্মসূচিকে সম্প্রসারিত করি। আপনার অধিক্ষেত্রে যারা আছেন তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করুন।  সকলকে এ পেনশনের সুবিধা সম্পর্কে জানান ও তাদের মনে যে প্রশ্নগুলো আসে সেগুলো নিরসনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। এ কর্মসূচির প্রচারের স্বার্থে এ ধরনের অবহিতকরণ সভাকে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে। এ কর্মসূচিকে প্রচার ও প্রসারিত করতে মেলার আয়োজন করা হবে। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে আমরা সম্পৃক্ত করবো। জানার বা জিজ্ঞাসা থাকলে তা নিরসনে কাজ করবো। সর্বোপুরি এ কর্মসূচির সুবিধা সম্পর্কে আলোকপাত করবো।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিং প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার রায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: মেহেদী হাসান, মুক্তিযোদ্ধাগণ, শিক্ষকবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মী, সুশীল সমাজ, এনজিও প্রতিনিধি ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন।

প্রধান সম্পাদকঃ
মতিউল আলম

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
মাকসুদা আক্তার