ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চে ড. আবদুল মইন খান দেশের মানুষের গণতন্ত্রের অধিকার কেড়ে নিয়েছে সরকার

image

You must need to login..!

Description

স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মইন খান বলেছেন, আজকে আমরা রাজপথে নেমেছি এই প্রত্যয় নিয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত না খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনবো ততক্ষণ পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে যাবো না। যতক্ষণ না পর্যন্ত এই জন প্রতিনিধিত্ববিহীন সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছে, সেই সরকার যতক্ষণ না পর্যন্ত স্বেচ্ছায় বিদায় নেবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাবো না। রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল উপজেলার বগারবাজারে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চের উদ্বোধনী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সরকার দেশের মানুষের গণতন্ত্রের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছে। তারা মানুষকে কোনো ভিন্নমত প্রকাশ করতে দেয় না। ওরা মনে করে আওয়ামী লীগ যা বলে দিবে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ সেই শুনবে। এটা কোনো দিন হতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনচেতা। এই দেশের মানুষ মোঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠিত করেছিল। দেশের মানুষ ভোটের অধিকার, গণতন্ত্রের অধিকার চায়। যে অধিকার একবার আওয়ামী লীগ ১৯৭৫ সালে সংসদের ভেতর মাত্র ১১ মিনিটের ব্যবধানে হরণ করে নিয়েছিল, সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান পূণরায় বহুদলীয় গণতন্ত্র বাংলাদেশে মানুষকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
ড. মইন খান আরো বলেন, আজকে আওয়ামী লীগের রাগ কেন বেগম খালেদা জিয়ার উপর, কারণ বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রকে ভালোবাসেন, দেশের মানুষকে ভালবাসেন। এই কারণে মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা দিয়ে তাকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তার চিকিৎসা বাধাগ্রস্থ করে, বিদেশে যাওয়ার পথ বন্ধ করেছে। মনে রাখবেন বিএনপি একটি সুশৃংখল রাজনৈতিক দল। বিগত এক বছর যাবত দেখেছেন আমরা দেশের কোটি কোটি মানুষকে সম্পৃক্ত করে রাজপথে সমাবেশ করেছি, মিছিল মিটিং করেছি। এবং এ সরকারের প্রতি সারা দেশের মানুষ অনাস্থা দিয়েছে। কাজেই এই সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। যত শিগগির তারা ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবে বাংলাদেশের জন্য তত মঙ্গল হবে। গণতন্ত্রের ঝান্ডা উঁচু করে আমরা রাজপথে রোডমার্চ করে যাব, আমাদের শান্তিপূর্ণ সংগ্রাম অব্যহত থাকবে। আমরা এই সরকারের পতন ঘটিয়ে আমরা এ দেশে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করবো এবং সেই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ যাকে ভোট দিবে তারাই সরকার গঠন করবে। আমরা এদেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করব ইনশাল্লাহ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা রোডমার্চের মতো গণসম্পৃক্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। এই কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে রাজপথের আশেপাশে যারা বসবাস করেন তাদেরকে আমরা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করছি। আমরা কোন বিশৃঙ্খলা করছি না, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি করছে। তিনি বলেন, আমাদের দাবি একটাই যে সরকারকে আমরা নির্বাচিত করি নাই, দেশের মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে নাই এ সরকারের পদত্যাগ চাই। যে সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত না, সেই সংসদ আমরা বাতিল চাই। আমরা জানি এই সরকারের অধীনে প্রত্যেকটা নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। কোনোটাই আসলে নির্বাচন হয় নাই। সেজন্য আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যেতে আমরা রাজি নই। আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার চাই। আমাদের বলা হয়, সংবিধানে নির্দলীয় সরকারের বিধান নাই। হ্যাঁ নাই, কারণ আপনারা ‘নাই’ করে দিয়েছেন। এটা ছিল এবং আদালতের রায়েও ছিল আগামী দুটি নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। কিন্তু আপনারা মানেন নাই। অন্যায়ভাবে হাইকোর্টের রায়কে বিকৃত করে আপনারা সংবিধান সংশোধন করেছেন নিজেদের পছন্দ মাফিক। আমরা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই তখন বলেন সংবিধানে নাই। আপনারা যখন ১৯৯৬ সালে চেয়েছিলেন তখনও তো সংবিধানের ছিল না, তখন চেয়েছিলেন কেন। এখন নাই এখন করেন। সংবিধান সংশোধন ছাড়াওতো হয়, যেমন হয়েছিল বিচারপতি শাহাবুদ্দিনকে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করেছিলাম। আলোচনা করে একমত হয়ে পরবর্তী পর্যায়েও করা যায়। তিনি বলেন, এই সরকার যে শুধু জনগণের ভোট নিয়ে কারচুপি করছে শুধু তা নয়, যখনি আওয়মী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই শেয়ার বাজার লুট হয়, ব্যাংকের টাকা লুট হয়ে যায়। নিজেদের লোকজনকে টাকা দিয়ে দেওয়া হয় এবং তারা সেই টাকা বিদেশে পাচার হয়।
জনতার উদ্দেশ্যে নজরুল ইসলাম খান বলেন, জীবনে কখনো শুনেছেন সেকেন্ড হোম। এ সরকারের আমলে শুনতেছি। জীবনে কখনো বেগম পাড়ার নাম শুনি নাই, এই সরকারের আমলে শুনছি। জীবনে আমরা সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার কথা শুনিনি, তবে এই সরকারের আমলে শুনছি। জীবনে আমরা কখনো শুনি নাই দুবাইতে গুলশান থ্রী, এ সরকারের আমলে শুনছি। কারা করছে এই সেকেন্ড হোম, কারা করছে বেগম পাড়া ও গুলশান থ্রি তে বাড়ি করছে, কারা সুইস ব্যাংকে টাকা রাখছে এগুলো সরকার জানে। কিন্তু কোনো বিচার করা হবে না। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী সংসদে বলে, কে টাকা পাচার করছে আপনারা ধরিয়ে দেন। আমরা যদি ধরাইয়া দিবো তাহলে আপনারা কি ঘাস কাটেন। সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিজে বলতেছে, কানাডার বেগম পাড়ার যে সব বাড়ি তার বেশিরভাগ আমলাদের, রাজনীতিবিদ না। তার মানে বাড়িগুলো কার সেটা আপনারা জানেন, কিন্তু কোনো বিচার করছেন না। কারণ এরা সব আপনাদের লোক। আমরা কষ্ট করে উপার্জন করবো, গার্মেন্টকর্মীরা কষ্ট করে পোশাক তৈরি করবে, তা বিদেশে রপ্তানি করে সেই টাকা লুট করবেন। আমাদের শ্রমিকরা মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতে, মালয়েশিয়ার জঙ্গলে, আমেরিকা, কানডায় প্রচন্ড ঠান্ডায় পরিশ্রম করে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাবে আর এগুলো বিদেশে পাচার করে বেগম পাড়া, দুবাইয়ে গুলশানে থ্রি ও সুইস ব্যাংকে টাকা জমা করবেন। আর বাংলাদেশের মানুষ বসে বসে দেখবে। এদেশের মানুষ ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে, স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে, গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছে। এবং গত কয়েক বছরে আমাদের অসংখ্য সহকর্মী জীবন দিয়েছে। শুধু এই এক দফা আন্দোলনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত আমাদের ২২ জন নেতাকর্মী খুন হয়েছে। আমাদের অসংখ্য কর্মী আহত হয়েছে, অসংখ্য গায়েবী মামলায় বিপদগ্রস্ত হয়েছে। তারপরেও আন্দোলন বসে নাই ক্রমান্বয়ে আরও জোরদার হয়েছে। আগামী দিনে আন্দোলন আরো জোরদার হবে। কারণ মানুষ বাঁচতে চায়। জিনিসপত্রের দামের কারণে এ দেশের মানুষের বাঁচার অবস্থা নাই। বন্ধুগণ যদি মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে চান তাহলে এ সরকারের পতন ঘটাতে হবে এবং নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে। এই লড়াই আমাদের সবাইকে মিলে একযোগে করতে হবে।
ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান লিটনের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু ও আলমগীর মাহমুদ আলমের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন ও শরীফুল আলম, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এরপর রোডমার্চের গাড়িবহর বগারবাজার থেকে রওনা হয়ে চুরখাই বাজার, দীঘারকান্দা বাইপাস মোড়, কেওয়াটখালি, শম্ভুগঞ্জ ব্রীজ, চায়না মোড়, শম্ভুগঞ্জ বাজার, গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইল হয়ে কিশোরগঞ্জে শেষ হয়। ১১৪ কিলোমিটার যাত্রাপথে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে বগারবাজার ও চুরখাই বাজারে, ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপি চায়নামোড়, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপি ঈশ্বরগঞ্জ এবং কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি কিশোরগঞ্জ বাইপাসে লতিফাবাদে গণসমাবেশের আয়োজন করে। এ ছাড়াও জামালপুর জেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ময়মনসিংহ শহর বাইপাস মোড়ে, শেরপুর জেলা বিএনপি শম্ভুগঞ্জ বাজারে, নেত্রকোনা জেলা বিএনপি নান্দাইল চৌরাস্তায় অবস্থান করে রোডমার্চের গাড়িবহরে যোগ দেয়। প্রতিটি সমাবেশে বিপুল সংখ্যক জনতা এবং রোড মার্চে কয়েক হাজার নেতাকর্মী মোটরবাইক, পিকআপ, মাইক্রোবাস সহকারে যোগ দেয়। ১১৪ কিলোমিটার সড়কপথের পাশে দাঁড়িয়ে সাধারণ জনতা ও পথচারিরা হাত নেড়ে রোড মার্চকে স্বাগত জানায়। অনেকেই বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে বউঝিরাও রোড মার্চে পিপড়ার সারির মতো গাড়িবহর প্রত্যক্ষ করেন। ##

প্রধান সম্পাদকঃ
মতিউল আলম

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
মাকসুদা আক্তার