You must need to login..!
Description
মো. নাসিম উদ্দিনঃ
শতবর্ষী জব্বার মন্ডলের তিন মেয়ে আর একমাত্র ছেলে নিয়ে ছিল সুখের সংসার। ১৯ বছর আগে তার প্রথম স্ত্রী দুরারোগ্য ব্যাধিতে মারা যান। এর কয়েকদিন পর মেয়ে আর ছেলে মিলে ঘরের জিনিসপত্র ভাগাভাগি শুরু করেন। এক পর্যায়ে বৃদ্ধ বাবার খোঁজ নেওয়া বন্ধ করে দেন তারা। পরে আঙ্গুরী বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে বিয়ে করেন তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রীসহ বৃদ্ধ বাবাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন ছেলে জহুরুল ইসলাম। এরপর তারা আশ্রয় নেন দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়িতে। সেখানেও টিকতে না পেরে আশ্রয় নেন রাস্তার ধারে এক ঝুপড়ি ঘরে। সেখানেই তারা দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে বসবাস করছেন।
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার হাজরাবাড়ি পৌরসভার আদিয়ারপাড়া গ্রামের দাঁতভাঙ্গা সেতু সংলগ্ন সড়কে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। এখানেই এ বৃদ্ধ দম্পতি দীর্ঘদিন ধরে খেয়ে না খেয়ে অর্ধাহারে জীবনযাপন করছেন। এ বয়সে তাদের এমন ভালোবাসা মুগ্ধ করেছে এলাকাবাসীকে। সরকারের কাছে তাদের একটাই চাওয়া, শেষ বয়সে একটু ভালোভাবে যেন তারা বসবাস করতে পারেন। এজন্য একটি নতুন ঘরের আবদার করেছেন তারা।সরেজমিনে দেখা যায়, জব্বার মন্ডল ও আঙ্গুরী বেগম দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। আয় রোজগার বলতে কিছুই নেই তাদের। জরাজীর্ণ ঘরটিও নড়বড়ে। বাঁশের খুঁটিতে ঘুণ ধরেছে। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। এছাড়া একটুখানি বৃষ্টিতে ঘরের চালা দিয়ে পানি ঢুকে সবকিছু ভিজে যায়। তবুও তারা একে অপরকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন। বর্তমানে তাদের সম্বল বলতে একটি গরু ও কিছু হাঁস-মুরগি। যা লালন-পালন করে সংসার চালাচ্ছেন তারা। সরকারিভাবে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়ায় সেই টাকায় কোনোরকম দিন চলছে তাদের।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই এ দম্পতিকে তারা দেখে আসছেন। একে অপরকে তারা আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন। রোগ-শোক কোনো কিছুই তাদের ভালোবাসা কমাতে পারেনি। তবে এখন তাদের বয়স হয়েছে। আয় রোজগার বলতে কিছুই নেই। ছেলেমেয়েরাও খোঁজ নেন না তাদের। তবে তাদের একটি ঘর হলে এ বয়সে তারা একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারেন।
জব্বার মন্ডল বলেন, স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আমি একলা (একা) হইয়া (হয়ে) যাই। তহন (তখন) ছেলেমেয়েরা আমার খোঁজ নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় আমি দ্বিতীয় কাজ (বিয়ে) করি। তবে বউ নিয়া বাড়ি গেলে ছেলে বাড়িতে উঠবার (উঠতে) দেয় নাই। পরে দ্বিতীয় বউয়ের বাড়িতে গিয়ে অনেক বছর থাহি (থাকি)। ওই বাড়িতে জায়গা কম থাহায় (থাকায়) ওইখান থেকে এনে (এখানে) চইলা (চলে) আহি (আসি)। সড়কের পাশে একটা ঘর করি। এহন (এখন) একটু বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। খুব কষ্টে দিন যাইতাছে (যাচ্ছে)। প্রতিদিন ওষুধ খাইতে হয়। টেহা (টাকা) পয়সাও নাই। কয়েকটা হাঁস-মুরগি বেঁচে কোনোরকম দিন চলে। সরকারের কাছে আমাদের শুধু একটাই চাওয়া এহন আমাদের একটা কোনোরকম থাকার মতো ঘর হলেই ভালোভাবে বাঁচতে পারি।
এ বিষয়ে জব্বার মন্ডলের ছেলে জহরুল ইসলাম বলেন, অনেক আগেই বাবা নিজ ইচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। বাবা যা বলেছেন তা সঠিক নয়।
মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম মিঞা বলেন, সম্প্রতি বিষয়টি জেনেছি। জানার পরপরই জব্বার মন্ডলের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। এ বৃদ্ধ দম্পতির কোনো কিছু প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ তাদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।##