You must need to login..!
Description
এফ আই সুমন, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে রাজিবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নামজারি, জমা খারিজ ও খাজনা আদায়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। করদাতাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে গ্রাহকের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে অল্প টাকার খাজনার রশিদ। তার এমন কার্যকলাপে অতিষ্ট হয়ে এলাকার শতাধীক ভুক্তভোগীর স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর জমা দেন। সেই অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয় বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর কাছে।
জানা যায়, দীর্ঘ প্রায় সাত বছর যাবৎ নিজ এলাকা ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত আছেন তহশীলদার সানোয়ার হোসেন। তিনি ওই সাত বছরে উপজেলার উচাখিলা, সোহাগী ও রাজিবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে তহশীলদারের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখান থেকে নানা অনিয়ম করে বর্তমানে রাজিবপুর ভূমি অফিসের দায়িত্ব পালন করছেন। সেখানেও অনিয়ম করায় স্থানীয় শতাধিক লোকের স্বাক্ষরে গত বুধবার একটি অভিযোগ দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা বরাবর।
অভিযোগে জানা যায়, তহশীলদার সানোয়ার হোসেন সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। যেখানে নামজারি করতে সরকার নির্ধারিত ১ হাজার একশত টাকা নেয়ার কথা সেখানে ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে একটু বেশী দামের জমি হলেই আরো বেশি টাকা পর্যন্ত আদায় করে নিচ্ছে। এরপরও টাকা দিয়েও মিলছেনা কাঙ্খিত সেবা। আজ কাল পরশু করেই পার করে দিচ্ছেন মাসের পর মাস। অভিযোগে আরো জানা যায়, কর দাতারা কর দিতে আসলে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে সামান্য কিছু টাকা সরকারি খাতে জমা দেখিয়ে খাজনা রশিদ ধরিয়ে দেয় তহশীলদার সানোয়ার হোসেন।
জানা যায়, তহসিলদার সানোয়ার হোসেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংলগ্ন গ্রামের বাড়ি থাকায় বেশ দাপটের সহিত দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় উপজেলা (ভূমি) অফিসের প্রায় সব কর্মকর্তা কর্মচারীদের বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ইচ্ছামতো দূর্নীতি করে যাচ্ছেন। তার দাপটে কর্মচারীরা মুখ খুলতে নারাজ। তবে এবিষয়ে স্থানীয়রা বলেন সাত বছরে ঈশ্বরগঞ্জের চাকুরীরত অবস্থায় লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। নিজ বাড়ি ভূমি অফিসের কাছাকাছি হওয়ায় কাউকে তোয়াক্কা না করে নামজারি, জমা খারিজ, খাজনা আদায় সহ ভূমি সংক্রান্ত সকল কাজে সরকারি নিয়ম না মেনে ওই টাকা হাতিয়ে নেন।
রাজিবপুর ইউনিয়নের মাইজহাটি গ্রামের উজ্জ্বল এবং মাহফুজ বলেন, ২০ শতক জমির খারিজ করতে নায়েবের কাছে যান। পরে নায়েব তাঁদেরকে অফিস সহায়ক আহাম্মদের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। এরপর খারিজের জন্য আহাম্মদ তাঁদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা দাবি করলে ১৮ হাজার টাকায় নির্ধারণ হয়। এরপর তাঁরা আহাম্মদকে প্রথমে ১৫ হাজার পরে আরও তিন হাজার টাকা দেন।
এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজিবপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন বলেন, নামজারী করতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে মোটা অংকের টাকা লাগবে বলে জানায় তহশীলদার ও তার সহকারী আহাম্মদ আলী এবং হিরক। তহশীলদার সরাসরি গ্রাহকের কাছে টাকা না চেয়ে তার দুই সহযোগী হীরক ও আহাম্মদ আলীর হাতে টাকা দিতে বলে।
এবিষয়ে তহসিলদার সানোয়ার হোসেন জানান, তার বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ উঠেছে সবগুলোই মিথ্যা এবং বানোয়াট। অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে আগামী ২৭ নভেম্বর ঈশ্বরগঞ্জ সহকারী কমিশনার ভূমি তাকে তলব করেছেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুর রহমান বলেন, তহশীলদার সানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তকে আগামী ২৭ নভেম্বর অফিসে আসার জন্য নোটিশ করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তহশীলদার ও তার সহকারীরা দোষী প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।##