চাঞ্চল্যকর ৪ খন্ড লাশের রহস্য উন্মোচন, হত্যাকারী চাচাসহ গ্রেফতার ৩ ও আলামত উদ্ধার আপন চাচা ও চাচার শ্যালক যেভাবে হত্যা করে ভাতিজা সৌরভকে

image

You must need to login..!

Description

মতিউল আলম, ময়মনসিংহ
গত ২ জুন সকালে ময়মনসিংহ সদরের মনতলা ব্রীজের নীচে সুতিয়া নদী থেকে উদ্ধারকৃত চাঞ্চল্যকর ৪ খন্ড লাশের রহস্য উদঘাটন করেছে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ। খন্ডিত দেহটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ওমর ফারুক সৌরভের। সৌরভকে হত্যাকারী আপন চাচা ইলিয়াছ ও চাচার শ্যালক ফারুকসহ ৩ জনকে গ্রেফতার ও খুনের আলামত উদ্ধার করেছে ময়মনসিংহ ডিবি ও কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নির্মম হত্যা্র বর্ণনা দিয়েছে গ্রেফতারকৃতরা । আজ সকালে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপারের কার্য্যালয়ে পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুইয়া এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

পুলিশ সুপার জানান, গত ২ জুন সকাল অনুমান সাড়ে ৮টায় কোতোয়ালী মডেল থানার মনতলাস্থ সুতিয়াখালী নদীর ব্রীজের নিচে পানিতে ভাসমান অবস্থায় একটি লাগেজ ও পাশেই স্থলভাগে একটি মানুষের মাথা দেখতে পেয়ে স্থানীয় জনতা থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। ঘটনাস্থল হতে মানুষের মাথা ও পাশেই পানিতে ভাসমান লাগেজ উদ্ধার করে লাগেজ খুলে চার টুকরা পুরুষের খন্ডিত অংশ পাওয়া যায়। থানা পুলিশের পাশাপাশি পুলিশে অন্যান্য বিশেষায়িত ইউনিট পিবিআই, সিআইডি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লাশের পরিচয় সনাক্তের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাৎক্ষণিক লাশের পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। লাশের পরিচয় সনাক্তের জন্য বিভিন্ন ইলেট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ জেলা পুলিশ অফিসিয়াল ফেসবুকে সংবাদ পোষ্ট করা হয়। ঘটনাস্থলে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতসহ আনুষক্সিগক অন্যান্য কার্যাদি সম্পন্ন করে লাশের ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহের নিমিত্তে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়।

পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হত্যাকান্ডের বিষয়ে সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ মর্গে উপস্থিত হয়ে ভিকটিম এর মুখমন্ডল, পড়নের কাপড়-চোপড় এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট দেখে পরিচয় সনাক্ত করেন। সনাক্তকৃতদের পরিচয় থেকে জানা যায় ভিকটিমের নাম ওমর ফারুক সৌরভ (২৪), পিতা-মোঃ ইউসুফ আলী, মাতা-মাহমুদা আক্তার পারুল, সাং-তারাটি, থানা-ঈশ্বরগঞ্জ, জেলা-ময়মনসিংহ বর্তমান সাং-পোষ্টার কলোনী, থানা-মতিঝিল, ডিএমপি ঢাকা ।

এই সংক্রান্তে ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে কোতোয়ালী মডেল থানার মামলা নং-০৬, তারিখ-০২/০৬/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩০১/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০ রুজু করা হয়। মামলা দায়ের পর ময়মনসিংহ জেলার কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশের একটি চৌকশ টিম উক্ত ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও আসামী গ্রেফতারের জন্য মাঠে নামেন। তথ্য প্রযুুক্তি ও নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে উক্ত হত্যাকান্ডের মূল হত্যাকারী ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানার তারাটি গ্রামের মৃত হাসেম আলীর ছেলে বর্তমান ঠিকানা ময়মনসিংহ কোতোয়ালীর গোহাইলকান্দির নিহতের চাচা ইলিয়াছ আলী (৫৫)কে ধোবা্উড়া উপজেলার সীমান্ত থেকে, চাচার শ্যালক ঈশ্বরগঞ্জ থানার চর হোসেনপুর গ্রামের মৃত আক্তারুজ্জামানের পুত্র আহাদুজ্জামান ফারুক(৩০)কে ঢাকা থেকে এবং লাশ বহনকারী গাড়ীর ড্রাইভার নান্দাইলের আব্দুল হান্নান আকন্দ (৬৫)কে ময়মনসিংহ থেকে গত ৪ জুন থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেন ।

ধৃত আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ধৃত আসামী ইলিয়াছ ও নিহত ওমর ফারুক সৌরভ পরস্পর আপন চাচা ভাতিজা। আসামি ইলিয়াছ এর মেয়ে ইভা আক্তারকে নিহত ওমর ফারুক সৌরভ (২৪) গোপনে বিবাহ করে। ইভার নিহত ওমর ফারুক সৌরভ এর সাথে বিবাহের পূর্বে অন্যত্র বিবাহ হয়েছিল। বিষয়টি পরবর্তীতে ইভার বাবা মা জানলে তার চরম ক্ষিপ্ত হয় এবং এই বিবাহ কোনক্রমেই মেনে নিবে না বলে জানায়। এই ঘটনা নিয়ে ইলিয়াছ এর আপন ভাই ইউসুফ (নিহতের এর বাবা) এর সাথে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। দুইজনের মধ্যে বাক বিতন্ডা হয় এবং ওমর ফারুক সৌরভকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আসামী ইলিয়াছ তার মেয়ে ইভাকে গত মে মাসের মাঝামাঝি পড়াশুনার জন্য কানাডা পাঠায়। গত ২ জুন বিকালে নিহত ওমর ফারুক সৌরভ ময়মনসিংহ আসে এবং চাচাতো ভাই আসামী ইলিয়াছ এর ছেলে মৃদুল (১৭) কে ফোন দিলে, মৃদুল সৌরভকে কোতোয়ালী মডেল থানার গোহাইলকান্দি (প্রাইমারী স্কুল সংলগ্ন) তাদের বাসায় আসতে বলে। সৌরভ বাসায় গেলে চাচা ইলিয়াছ বাসার নিচ তলায় একটি ভাড়া করা কক্ষে নিয়ে হাত পা বাঁধে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইলিয়াছ এর শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক (৩০) কে ফোন করে ময়মনসিংহ বাসায় ডেকে নিয়ে আসে এবং এক পর্যায়ে দুজন মিলে সৌরভকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে মাথায় ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে লাশ বাথরুমে রাখে। লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা মাফিক ময়মনসিংহ গাঙ্গীনারপাড় হতে ট্রলি ব্যাগ (লাগেজ), পলিথিন ও হ্যান্ডগ্লাভস কিনে বাসায় নিয়ে যায়। বাথরুমে রাখা সৌরভ এর মৃত দেহের শরীর হতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা এবং দুই পায়ের ঊরু বিচ্ছিন্ন করে পলিথিনে প্যাকেট করে লাগেজের মধ্যে রাখে। মাথাটি স্বচ্ছ পলিথিনে মুড়িয়ে একটি শপিং ব্যাগে রাখে। গত ২ জুন রাত অনুমান সাড়ে ১২টায় লাগেজ ও শপিং ব্যাগে রাখা মৃতদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে আসামী ইলিয়াছ আলী ও আহাদুজ্জামান ফারুক একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে প্রাইভেটকারের ব্যাগ ডালার ভিতরে নিয়ে কোতোয়ালী মডেল থানাধীন মনতলা ব্রীজের উপর হতে সুতিয়াখালী নদীতে ফেলে দেয়। মামলাটি কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ তদন্ত করছে। হত্যাকান্ডে আরো কেউ জড়িত থাকলে তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে। প্রয়োজনে কানাডা থেকে ইভাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে পুলিশ সুপার জানান।

মতিউল আলম

প্রধান সম্পাদকঃ
মতিউল আলম

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
মাকসুদা আক্তার