স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ
টানা দ্বিতীয়বার সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করেছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল।এবারের চ্যাম্পিয়নশিপে খেলায় বাংলাদেশ দলের হয়ে অংশ নিয়েছিল ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছয়জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সাবেক শিক্ষার্থী চারজন এবং দুইজন বর্তমান শিক্ষার্থী। বর্তমানে জাতীয় নারীদলে ৮ জন খোলোয়াড় রয়েছে। এই দলের অন্যতম খেলোয়াড় সানজিদা ও তহুরাদের এমন কৃতিত্বে আনন্দে ভাসছে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুরসহ এলাকাবাসী । তারা কখন বাড়ি ফিরবে এই অপেক্ষার প্রহর গুনছে তাদের তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পরিবার, আত্মীয় স্বজনসহ এলাকাবাসী
এবার সাফজয়ী এই ফুটবলাররা হলেন- শামছুন্নাহার সিনিয়র, শামছুন্নাহার জুনিয়র, তহুরা, সানজিদা, শিউলি আজিম ও মারিয়া মান্দা। তাদের মধ্যে তহুরা ভুটানের বিপক্ষে তিন গোল ও ভারতের বিপক্ষে দুই গোল করে টুর্নামেন্টে মোট ৫টি গোল করে অনন্য রেকর্ড সৃষ্টি করে।এ নিয়ে তহুরা আন্তর্জাতিক নারী ফুটবলে ৫৫ গোল পূর্ণ হলো। ৭বার হ্যাট্রিক করেছে।
এছাড়া নেপালে এবার শাসুনাহার জুনিয়র ১ গোল দিয়েছেন। তবে ফাইনাল খেলায় সানজিদা ছাড়া অংশ নিয়েছিলেন বাকি পাঁচজন।তবে সবাই দুর্দান্ত খেলেছে ।
মেয়েদের এই বিশ্বজয়ী অর্জনে দেশের সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলসিন্দুর এলাকাটির নাম এখন সারাদেশে অতি পরিচিত লাভ করেছে। তাই মেয়েদের এমন অর্জনে আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে ভাসছে কলসিন্দুর এলাকাসহ পুরো ধোবাউড়া উপজেলা।
সূত্র মতে, ময়মনসিংহ মহানগর থেকে ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য ঘেঁষা ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর এলাকা উন্নয়ন ও শিক্ষাদীক্ষায় এখনো অনেক পিছিয়ে। এই এলাকায় মুসলমান ও হিন্দুদের পাশাপাশি বসবাস করেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন। মেয়েদের খেলাকে ঘিরে গত বুধবার পুরো উপজেলায় ছিল সাজ সাজ রব। ফলে ওইদিন বিকেল থেকে টেলিভিশন এবং মোবাইলের দিকে নজর ছিল সব বয়সী মানুষের। বাড়িঘরের পাশাপাশি হাট-বাজার ও দোকানপাটেও টিভির সামনে ছিল উৎসুক মানুষের চোখ। মেয়েদের এই অর্জন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে বড় পাওয়া বলে মনে করছেন গ্রামবাসী।
এদিকে মেয়ের কৃতিত্বপূর্ণ অর্জনে আনন্দে আত্মহারা সাফজয়ী ফুটবল দলের সদস্য সানজিদা আক্তারের বাবা মো. লিয়াকত আলী।তিনি বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো খেলায় নেপালকে হারিয়ে ফাইনাল জিতেছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। এটা দেশের জন্য অনেক বড় অর্জন। আমি এই দলের একজন খেলোয়াড়ের বাবা হিসেবে অনেক গর্বিত। একটা সময় মেয়ে খেলাধুলা করে বলে পাড়া-প্রতিবেশীরা নানা বিরূপ মন্তব্য করতেন জানিয়ে লিয়াকত আলী বলেন, সবার মুখে মুখে এখন সানজিদার প্রশংসা।
একই ধরনের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তহুরার বাবা কৃষক মো. ফিরোজ মিয়া। তিনি বলেন, সাফ জয়ের খবর পেয়ে নিজেকে গর্বিত বোধ করছি। এলাকার সবাই খুব খুশি। এখন সবাই মেয়েদের অপেক্ষায় আছে।আমার মেয়ের জন্য আজ আমাদের মুখ উজ্জ্বল হয়েছে। আমি যেদিকে যাই সবাই এটা তহুরার বাবা কেউ কেউ মেসির বাবা বলে ডাকে। সব জায়গাতেই আমাদেরকে এখন মূল্যায়ন ও সম্মান করে । এটা আগে পেতাম না।
কলসিন্দুর নারী ফুটবল টিমের কোচ মো. জুয়েল সরকার বলেন, নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শিরোপা জিতেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। এই দলের ছয়জনই কলসিন্দুর এলাকার সন্তান। মেয়েদের এমন অর্জনে আমিসহ দেশবাসী গর্বিত।##
মতিউল আলম