নান্দাইলে কাবিটা প্রকল্প কাজে অনিয়মের অভিযোগ বরাদ্দের ১৮ লাখ টাকা ফেরত

image

You must need to login..!

Description

মোঃ রফিকুল ইসলাম খোকন, নান্দাইল ( ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের বিপরীতে কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্পে বরাদ্দের ১৮ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা যায় , বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এবং কাজে অনিয়মের অভিযোগে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প ব্যাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারে কাবিটা প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পের কাজের মেয়াদ শেষ হয় গত ৩০ জুন। প্রকল্প সভাপতি গণ কাজ সঠিক ও নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বাস্তবায়ন নির্দেশিকা-২০২১ অনুযায়ী নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন। কেউ কেউ কাজ শুরু করার জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তিতে বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করেন। কিন্তু প্রকল্পের কাজের মেয়াদ অনেক আগে শেষ হয়ে গেলেও তারা পুরোপুরি কাজ শেষ করতে পারেননি। এমনকি বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও সভাপতিরা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করেননি।
জানা যায়, কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ মহাসড়ক হইতে রসুলপুর পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার করার কথা থাকলেও কাজ সম্পন্ন না করায় বরাদ্দকৃত ৮ লাখ টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে। গাঙ্গাইল ইউপির ঘাটা হাওলাপুরী মসজিদ হইতে জাহানারার বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পের দায়িত্ব পান আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান নয়ন। যথাযথ ভাবে কাজ সম্পন্ন না করতে পারায় তার জন্য বরাদ্দকৃত টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে।
রাজগাতি ইউনিয়নে পূর্বদরিল্লা গ্ৰামের সিদ্দিকের বাড়ির সামনে হইতে পাঁচদরিল্লা হারিস মাস্টারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ করা হলেও কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে। এই প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কাশেম মিয়া। নান্দাইল ইউনিয়নের সাভার গ্ৰামের সাহেদ আলীর বাড়ী হইতে খালেকের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দের মধ্যে কোন কাজ না করে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা ছাড় করা হলেও পুরো কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় বাকি টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে। এই কাজের দায়িত্ব ছিল ৩ নং ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন কাজল।
মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের দত্তপুর গ্ৰামের রহিম উদ্দিনের সামাজিক কবরস্থানে মাটি ভরাট প্রকল্পেও বরাদ্দ করা হয়েছিলো আড়াই লাখ টাকা, যার মধ্যে এক লাখ ২৫ হাজার টাকার চেক ছাড় হলেও কাজ সম্পন্ন না করেও বাকি টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয়। এই প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন ২ নং ইউপি চেয়ারম্যান তাসলিমা আক্তার।
সিংরইল ইউনিয়নের কিসমত কচুরী হাফিজিয়া মাদ্রাসার মাঠে মাটি ভরাট প্রকল্পে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলে সেখান থেকে ছাড় করা হয় এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রাকিব মিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠায় বাকি টাকা ফেরত পাঠানো হয়। চরবেতাগৈর ইউনিয়নের চর লক্ষীদিয়া গ্ৰামের সাহেদ আলীর বাড়ী হতে নতুনচর পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও সেখান থেকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা ছাড় করা হয়। প্রকল্প সভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আরিফ হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠায় বাকি টাকা ফেরত পাঠানো হয়। সব মিলিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচির প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে।

বরাদ্দের টাকা ফেরত এবং অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে চাইলে প্রকল্প সভাপতিদের কেউ কিছু বলতে রাজি হননি।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, বিগত সরকারের আমলে এ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় সবগুলোতেই চেয়ারম্যান-মেম্বার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। আওয়ামী লীগের সাবেক দুই এমপির আশীর্বাদ পুষ্ট এসব চেয়ারম্যান-মেম্বাররা বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিলেন।
উপজেলা প্রকল্প ব্যাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আহসান উল্লাহ বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) ৪র্থ পর্যায়ে প্রকল্পের বরাদ্দ গত ১৩ জুন জেলা প্রশাসক থেকে ১৭টি অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদনের পর বেশ কয়েকবার বন্যা এবং প্রকল্প স্থানে ফসল থাকায় এ সময় কাজ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে কাজ আরও পিছিয়ে যায়।

তিনি বলেন, প্রকল্প সভাপতিদের বারবার তাগিদ দেওয়ার ফলে প্রকল্পের বেশির ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে যেগুলো সম্পন্ন হয়নি সেগুলোর অর্থ ফেরত দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পাল বলেন, প্রকল্প নিয়ে নানা অভিযোগ আসার সরজমিনে পরিদর্শন করে যে সমস্ত প্রকল্পের কাজ প্রাক্কলন মোতাবেক পাওয়া যায়, সেগুলো অর্থ ছাড় করা হয়। আর যেসব কাজ প্রাক্কলন থেকে কম আছে, সে সমস্ত প্রকল্পের অর্থ ফেরত দেয়া হয়েছে।###

প্রধান সম্পাদকঃ
মতিউল আলম

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
মাকসুদা আক্তার