
You must need to login..!
Description
এফ আই সুমন, ঈশ্বরগঞ্জ থেকে :
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি করা সেই তদন্ত ওসি ওবায়দুর রহমানের চলছে রমরমা গ্রেপ্তার বাণিজ্য। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার তৎকালীন ওসি (তদন্ত) হিসেবে ওবায়দুর রহমান দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু ৫ আগষ্টের পর কাকতালীয় ভাবেই পদোন্নতি পেয়ে তিনি হয়ে যান ওসি। গতবছরের ৩ সেপ্টেম্বর ওসি হিসেবে যোগদান করেছেন ঈশ্বরগঞ্জ থানার। যোগদানের পর থেকেই দালালের মাধ্যমে সিন্ডিকেট তৈরি করে সাধারণ মানুষকে হয়রানী করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পাশাপাশি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ, হত্যা বেড়ে যাওয়ায় আইন শৃংখলার চরম অবনতি ঘটেছে।
জানা যায়, ফুলবাড়িয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামানের নির্দেশনায় এবং ওসি (তদন্ত) ওবায়দুর রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিলো পুলিশ। এতে অনেকেই গুরুত্বর আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করছেন। তাদের একজন আরিশ আহমেদ (১৫)। আরিশ আহমেদ ফুলবাড়িয়া উপজেলার কুশমাইল ইউনিয়নের কুশমাইল গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলামের ছেলে।
আরিশ জানায়, তার চোখ, মাথা, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ১৩টি গুলি নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছেন। তখন তার ডান চোখ গুলিবিদ্ধ হয়। এখন সে আর ওই চোখে দেখতে পায় না।
আরিশের বাবা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ হয়ে আমার ছেলে একটা চোখে দেখতে পায় না। ফুলবাড়িয়া থানার তৎকালীন ওসি এবং ওসি (তদন্ত) সহ সকল পুলিশ সদস্য ঘটনার সাথে জড়িত ছিল। বিষয়টি নিশ্চিত করে ময়মনসিংহ মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম-সদস্য সচিব ওয়ালিদ আহমেদ অলি জানান, আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ফুলবাড়িয়া থানার তৎকালীন ওসি (তদন্ত) ওবায়দুর রহমান আওয়ামী দোসরদের সাথে নিয়ে ছাত্রজনতার ওপর গুলি চালিয়েছে। ৫ আগষ্টের পর তিনি কীভাবে পদোন্নতি পেয়ে ওসি হয়েছেন বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে ওসি ওবায়দুর রহমান জানান, এই ঘটনায় তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ বিষয়ে মামলা চলমান, যেখানে তার কোনো নাম নেই। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।
আরো জানা যায়, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর কাকতালীয় ভাবেই ওসি (তদন্ত) থেকে পদোন্নতি পেয়ে তিনি হয়ে যান ওসি। তার প্রথম পোষ্টিং হয় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানায়। এ থানায় যোগদানের পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে শুরু করে। চুরি-ছিনতাই, মাদক, জুয়া, কিশোরগ্যাং, ইভটিজিং এবং ধর্ষনের মতো অপরাধ বেড়েই চলেছে। এতে উপজেলার বাসিন্দারা ভোগছে চরম নিরাপত্তাহীনতায়। ওসি হিসেবে ওবায়দুর রহমান যোগদানের পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেপ্তার এড়াতে মোটা অংকের টাকা বাণিজ্য করে চলেছেন বলে একাধিক মহল থেকে অভিযোগ ওঠেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ মাসে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় মোট ৭১ টি মামলা হয়েছে। যারমধ্যে
৩ টি হত্যা, ৪টি চুরি, নারী নির্যাতন ৯ টি, মাদক ১৫ টি, পুলিশ লাঞ্চিত ২ টি, অন্যান্য ৩৮ টি। তারমধ্যে জুয়া আইনে ৪০ জন,পুলিশ আইনে ৩৩ জন, পরোয়ানা মূলে-১০৫ জন এবং অন্যান্য ১০জনসহ মোট ২৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
উপজেলার জাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী আরমান হোসেন (২৪) হত্যা মামলা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠেছে। মামলায় উল্লেখিত আসামীদের না ধরে সাধারণ মানুষদের হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেছে পুলিশ। চার জনকে আটকের পর ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে থানা থেকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। রাজিবপুর ইউনিয়নের ২ কিশোরী ধর্ষনের ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ না নিয়ে দুই পক্ষকে থানায় ডেকে এনে মুচলেকা নিয়ে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে এঘটনায় পুলিশ টাকার বাণিজ্য করেছে বলে জানান স্থানীয়রা। উপজেলার আঠারবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমানকে আটক করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। উচাখিলা ইউনিয়নের কিশোরগ্যাংয়ের অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় গেলো জানুয়ারি মাসে দিন-দুপুরে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। ওই এলাকায় এখনো কিশোরগ্যাং আতঙ্কে দিন কাটছে মানুষের।
এছাড়াও ঈশ্বরগঞ্জ পৌর সদরের বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইকারীরা মারধর করে পথচারীদের কাছ থেকে মোবাইল, মানিব্যাগ এবং স্বর্ণলংকার সহ বিভিন্ন জিনিস ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এবিষয়ে পুলিশের কোন ভুমিকা নাই বললেই চলে। এতে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানান প্রশ্ন। থানায় দালালদের দৌরাত্ম্যে সেবাপ্রার্থীরা পড়ছেন বেকায়দায়। ওসির নিয়ন্ত্রণে থাকা দালালদের খপ্পরে থানায় সেবা নিতে আসা মানুষদের গুণতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এ সকল ঘটনার পর মানুষের জান মালের নিরপত্তা নিশ্চিতে অনতিবিলম্বে চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ, গ্রেপ্তার বানিজ্য বন্ধে পুলিশকে তৎপর হওয়ার আহবান জানায় ছাত্র-জনতা।
ঈশ্বরগঞ্জের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে পৌর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি একেএম হারুন অর রশিদ হারুন জানান, দেশে চলমান এই পরিস্থিতে সকলের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি আশা করা যায়না। ঈশ্বরগঞ্জ থানার বর্তমান ওসি যেভাবে থানা পরিচালনা করছেন এবং যেভাবে গ্রেপ্তার বানিজ্য শুরু করেছেন, এতে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। আর এমন পরিস্থিতি হলে আইনশৃঙ্খলার আরো অবনতি হবে।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুর রহমান জানান, ঈশ্বরগঞ্জের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। চুরি-ছিনতাই উদঘাটন ও ধর্ষণ মামলার আসামিসহ অপরাধীদের গ্রেপ্তারে থানা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। জনগন যদি থানা পুলিশকে সহযোগিতা করে তাহলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো উন্নয়ন হবে বলে আশা করেন তিনি। থানায় দালালের সম্পৃক্ততার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি অশ্বীকার করেন।