এনায়েতুর রহমান. বিএমটিভি নিউজ।
বাবার কাছে মেয়েদের নালিশের শেষ নাই। ভাই-বোনের ঝগড়াসহ হাজারটা নালিশ যায় বাবার কাছে। কিন্তু শিশু সায়মা তার বাবাকে হারিয়েছে জুলাই আন্দোলনে। এখন তার নালিশ দেয়ার একমাত্র জায়গা বাবার কবর। ভাই-বোন ঝগড়া করে বোন সায়মা বিচার দিতে যায় বাবার কবরে। সেখানে গিয়ে ডাকতে ডাকতে বলে, ‘আব্বু তুমি আস ভাইয়া আমাকে মারছে’।
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার রহিমগঞ্জ ইউনিয়নের চর ঢাকিরকান্দা গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে নিহত কৃষক সাইফুল ইসলাম (৩২)। গত বছরের ২০ জুলাই ছাত্র জনতার আন্দোলনে ফুলপুর ব্রীজ সংলগ্ন স্থানে ধান বিক্রি করতে যান তিনি। এ সময় তার একদিকে আন্দোলনকারীদের মিছিল অন্যদিকে পুলিশ ও আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের অস্ত্রসহ অবস্থান। মাঝখানে পড়ে যান তিনি। এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ গুলি চালায় আন্দোলনকারীদের ওপর। সকলেই পালাতে সক্ষম হলেও পালাতে পারেনি কৃষক সাইফুল। ঘটনাস্থলে দু’জন গুলিবিদ্ধ হন। আর সাইফুলের কপালে গুলি লেগে ঘটনাস্থলে মারা যান। দুই মেয়ে ও এক ছেলে তার। গরীব হলেও সুখের সংসার ছিল তার। তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে মিম (৭) প্লেতে পড়ে, মেঝো ছেলে রামিম (৫) নূরানী মাদ্রাসায়, ছোট মেয়ে সাইমা আক্তার (৩) সবার ছোট। এজন্য বাবার একটু বেশি আদুরে ছিল সে।
সরজমিন তার বাড়িতে দেখা যায়, অবুঝ এতিম শিশু সায়মা আক্তার মাকে বলে, আম্মু আব্বুকে বলেছি। আব্বু বলেছে আসবে, ভাইয়াকে মারবে। সন্তানের এমন কথা শুনে অসহায় মা চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি। কান্না করতে করতে সায়মাকে জড়িয়ে ধরেন। নিহত সাইফুলের স্ত্রী রহিমা কাঁদতে কাঁদতে স্বামীর স্মৃতিচারণ করেন।
রহিমা খাতুন বলেন, রাতে ঘুমাইতে গেলে বাবা বলে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েন সায়মা। সরকার থেকে আর্থিক যে সহায়াতা পেয়েছি তা দিয়ে তিন সন্তানের নামে জমি কিনে দেওয়া হয়েছে। ঘর করার জন্য ধান বিক্রি করতে গিয়ে জীবন দিলেন আমার স্বামী, আমি হলাম বিধবা সন্তানরা হলো এতিম। একটু বৃষ্টি হলেই সেই ঘরের চালা দিয়ে পড়ে পানি। ঘরটাই করা হলো না এখনো।
নিহত সাইফুলের পিতা তৈয়াব আলী (৬০) বলেন, তিন নাতি-নাতিন নিয়ে সময় চলে যায় আমার। কিন্ত বাবা হারা সন্তদেরকে কি আমি বাবার আদর ভালোবাসা দিতে পারবো? আমার ছোট নাতিটা মনে পড়লেই বলে আব্বা কবে আসবে, কখন আসবে। আমার হাত ধরে টানতে বলে চলো আব্বুকে ডেকে নিয়ে আসি। এই বলে কবরের কাছে নিয়ে যায়। আমার এই ছেলেটা বাড়ীর কাজকর্ম করতো। বাজার সদাই করত। এখন এই বয়সে আমাকে এসব করতে হয়।
জেলা প্রশাসক ময়মনসিংহ মুফিদুল আলম বলেন, নিয়মিত নিহত পরিবারের খোজ খবর রাখছি। ঘর করার জন্য ধান বিক্রি করতে গিয়ে নিহত কৃষক সাইফুলের ঘরের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, অনুমোদন হয়ে আসলেই ঘর করে দেয়া হবে।