যেভাবে  বনের রাজা  হয়ে ওঠেন খোরশেদ

যেভাবে বনের রাজা হয়ে ওঠেন খোরশেদ

BMTV Desk No Comments

স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ

সালটা ১৯৮৮ কিংবা ১৯৮৯। বেপরোয়া জীবনযাপন। বিভিন্ন অপকর্মের নালিশ। এ কারণে বাড়ি থেকে বের করে দেয় বাবা। এরপর শুরু হয় ডাকাতি। একই সঙ্গে শুরু করেন বনের গাছ কেটে বিক্রি। এভাবে বেশ কয়েক বছর কেটে যায়। এরপর ডাকাতি ছেড়ে বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এভাবেই বনের রাজা হয়ে ওঠেন। তার কাছে বনের গাছ হয়ে ওঠে সোনার হরিণ। নাম খোরশেদ আলম। ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার রাঙামাটিয়া ইউনিয়নের বাবুলের বাজার এলাকার জালাল উদ্দিনের ছেলে। চার ভাই তারা। চাচা লালু মেম্বার রাঙামাটিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এর প্রভাবে ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতির পদ বাগিয়ে নেয়। এরপর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।সন্তোষ বিট বা আশপাশের এলাকায় খোরশেদের নাম সবার মুখে। নিজের জমিতে কেউ বাড়ি-ঘর নির্মাণ করতে চাইলে তাকে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এমনকি কাঁচা টয়লেট তৈরি করতে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। সূত্র জানায়, ১৮ থেকে ২০ বছর বয়স থেকে খোরশেদ আলম বেপরোয়া জীবনযাপন শুরু করে। বিভিন্ন অপকর্মের নালিশ আসায় বাবা বাড়ি থেকে বের করে দেন। তখন থেকে বনের গাছ কাটা ও ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ে খোরশেদ। বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে বনে যায় রাজা। ১৯৯০ সালের পর রাতের আঁধারে বনের গাছ কেটে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা শুরু করে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে চলে গাছ নিধন।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর শুরু হয় ভিন্ন এক রাজত্ব। ছিদ্দিখালী এলাকায় মিল ভাড়া নিয়ে প্রকাশ্যে বনের গাছ কেটে বিক্রি করেতো সে। ২০১৮ সালে বাবুলের বাজার এলাকায় নিজেই বনের জমিতে স’ মিল বসিয়ে গাছ বিক্রি করা শুরু করে। বিভাগের কর্মকর্তাদের হাত করে এখনো চলছে সেই স’ মিল। এভাবেই করেছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। তার দখলে রাঙামাটিয়া মৌজায়, বাবুলের বাজার এলাকায় ৮৮৮২ দাগে ১৭ শতাংশ, ৭১১৯ দাগে ৩২.৫ শতাংশ, ৯০১৯ দাগে ৩২.৫ শতাংশ ৭১১৯ দাগে ১৯.৫ শতাংশ জমি। এসব জমির বাজার মূল্য ৫ কোটি টাকা। বাবুলের বাজার, সাগরদিঘী বাজারে প্রায় অন্তত ১৫টি দোকান আছে। যার বাজার মূল্য অন্তত ১০ কোটি টাকা। শ্বশুরের নামে সাগরদীঘি ৫ শতাংশ জায়গায় একটি দোকান আছে। যার মূল্য আনুমানিক সোয়া কোটি টাকা। এদিকে, হাতীলেইট বাজারের মাঝখানে ২৬ শতাংশ, বাবুলের বাজারে ২০ শতাংশ, হাতীলেইট গয়লা স্কুলের কাছে ৪ একর জমির বিশাল মাছের খামার। বাবুলের বাজারের পশ্চিম পাশে বনের ৫ একর জমি। যা অবৈধ টাকা দিয়ে নিজের নামে করে নেয়। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে অন্তত ৪০টি মামলা হয়। কিন্তু তার কিছুই হয়নি।
সূত্র জানায়, খোরশেদ অন্তত ৩০ একর বনের জায়গা দখল করেছে। প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকায় লোকজন প্রাণ ভয়ে তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন। স্থানীয় আলাল উদ্দিন বলেন, আমি একবছর আগে একটি পাকা ঘর তুলতে চাইলে খোরশেদ চাঁদা দাবি করে। তাকে চাঁদা দিয়ে কাজ শুরু করি। পরে আবারও এক লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে মামলা হবে বলে হুমকি দেয়। আমি টাকা না দেয়ায় বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘর ভেঙে দিতে চান। স্থানীয়রা বাধা দিলে বন বিভাগের লোকেরা ৯ জনকে আসামি করে ৩টি মামলা করে। এখনো সেই মামলা চালিয়ে যাচ্ছি। চাঁদার টাকা থেকে বন বিভাগের কর্মকর্তারা ভাগ পান।

গয়লাপাড়া এলাকার আব্দুর রহিম তরফদার বলেন, নিজের রেকর্ডীয় জমিতে ঘর তুলতে গেলে খোরশেদ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বন কর্মকর্তা ভেকু নিয়ে ভেঙে দিতে আসে। পরে স্থানীয়দের নিয়ে বাধা দিলে আমার বিরুদ্ধে মামলা দেয়। এ বিষয়ে সন্তোষপুর বিট কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক বলেন, বন কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের সঙ্গে খোরশেদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমি এখানে যোগদান করেছি আনুমানিক এক বছর হবে। এ সময়ে বনের গাছ কাটার জন্য খোরশেদের নামে দু’টি মামলা দিয়েছি। স’ মিলের বিষয়ে তিনি বলেন, বনের জমিতে স’ মিলটি উচ্ছেদ করার চেষ্টা চলছে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নুরুল করিম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। বনের জমি থেকে স’ মিলটি উচ্ছেদের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হবে।

এনায়েতুর রহমান,
Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *