মোঃ রফিকুল ইসলাম খোকন নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতি, নিয়োগ বাণিজ্য এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এ সব অভিযোগের দ্রুত তদন্ত ও অধ্যক্ষের বিচারের দাবিতে ২৫ অক্টোবর শনিবার সকাল ১১টায় মাদ্রাসা সংলগ্ন নান্দাইল- হোসেনপুর সড়কে বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে অধ্যক্ষ আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ তুলে লিখিত বক্তব্য রাখেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল হান্নান , বিদ্যুৎসাহী সদস্য আশিকুর রহমান, দাতা সদস্য সাইফ উদ্দিন খান ফয়সল, অভিভাবক সদস্য ফজলুল করিম, সাবেক ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক ও আশিকুর রহমান (কাজল) সহ শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
আব্দুল হান্নান লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন , অধ্যক্ষ আব্দুল হাই ১৯৮৬-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত নিভিয়াঘাটা ফাযিল মাদ্রাসায় জাল সার্টিফিকেট ব্যবহার করে আরবি প্রভাষক পদে চাকরি নেন। পরে ১৯৮৯ সনে আচারগাঁও দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী মৌলভী পদে যোগদান করেন। অত্র মাদ্রাসাটি দাখিল পর্যায়ে থাকাকালীন ১৯৯৫ সালে মাদ্রাসা জনবল নিয়োগ নীতিমালায় তাঁর কামিল যোগ্যতা না থাকা সত্বেও জাল-জালিয়াতী করে সহকারী মৌলভী থেকে সুপার পদে উন্নীত হন। এ সময় কাটলিপাড়া আলিম মাদ্রাসার ভুয়া ইনডেক্স ব্যবহার করে অভিজ্ঞতা সনদ দেখান, যেখানে তার কোনো কর্মতৎপরতা ছিল না। কিন্তু দীর্ঘ সময় (১৯৯৫-২০০১) তিনি সহকারী মৌলভী পদে (২০০১-২০০৫) আরবি প্রভাষকের পদ না থাকা সত্ত্বেও প্রভাষক পদের বেতনভাতা উত্তোলন করেছেন, যা সরাসরি সরকারি অর্থ আত্মসাতের সামিল। এছাড়া সহকারী মৌলভী পদে থাকাকালীন মাদ্রাসার দুই শিক্ষককে (এমদাদুল্লাহ ও মনোয়ার) ভুয়া অধ্যক্ষ সেজে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০০৫ সালে আচারগাঁও মাদ্রাসাটি আলিম স্তরে উন্নীত হলেও জ্যেষ্ঠ সহকারী মৌলভীদের পদোন্নতি না দিয়ে অধ্যক্ষ তার আপন ভাগিনা আনিছকে আরবি প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেন। এছাড়াও, নীতিমালা লঙ্ঘন করে অফিস সহকারী কে শিক্ষক পদে পদোন্নতি এবং বিএড পাশের আগেই শিক্ষকদের এমপিওতে বিএড গ্রেড যুক্ত করার অভিযোগও উঠেছে। শুধু তাই নয় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের টিউশন ফি’র টাকা আত্মসাৎ, নাজমা খাতুন নামে এক শিক্ষিকার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ৮ মাসের বেতন ভাতা উত্তোলন এবং করোনাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ১৮-২০ লক্ষাধিক টাকা খরচ দেখিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন। এমনকি ২০১৩ সালে মাদ্রাসার বিআরএসকৃত ১০ শতাংশ জমি মাত্র ৬ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দেন, যার বাজার মূল্য ছিল প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। এক্ষেত্রে সরকারি কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতিও নেওয়া হয়নি। এছাড়াও, মাদ্রাসার ৪০ শতাংশ জমি ২ লক্ষ টাকায় বন্ধক রেখে সেই টাকা উন্নয়ন কাজে ব্যয় না করারও অভিযোগ উঠেছে।
অধ্যক্ষ আব্দুল হাই এসব দূর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে বহুতল ভবন নির্মাণ সহ নামে-বেনামে পৌর শহরে এক একরের উপর সম্পদ গড়ে তুলেছেন। শুধু তাই নয়,্ মাদ্রাসার অফিস সহকারী নওমুসলিম আনোয়ারুল ইসলামকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করে নিজের দুই মেয়ে সাবিকুন্নাহার ও আয়শা আক্তারকে অবৈধভাবে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ করেন ।আদালতে মামলা চলমান থাকলেও অধ্যক্ষের মেয়েরা বেতনভাতা উত্তোলন করছেন।
এ বিষয়ে অভিযোগকারীরা উক্ত অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল হাইকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি এবং আত্মসাৎকৃত সকল অর্থ মাদ্রাসার কোষাগারে ফেরত দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হাইয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, মূলত সম্প্রতি মাদ্রাসার জনবল নিয়োগকে কেন্দ্র করে একটি অসাধু চক্র তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।###