এনায়েতুর রহমান, বিএমটিভি নিউজঃ
ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায় মাক্স পড়া অবস্থায় ৩ যুবক এসে পাম্পে দাঁড়িয়ে থাকা আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাসে প্রেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় বাসের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা চালক মো. জুলহাস মিয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে পুড়ে আঙ্গার হয়ে যায়। এ ঘটনায় আহত হয় আরও দু’জন।
নিহত জুলহাস উপজেলার কৈয়ারচালা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল বারেকের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন যাবত বাস চালিয়ে আসছেন।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় ঘটনাস্থল ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আখতার উল আলম ঘটনাস্থল পরির্দশনে গেলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষন করে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় জানা যায়।

এ ঘটনায় একই দিন সন্ধ্যায় ফুলবাড়ীয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল আলিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার আরও জানান, ঘটনার সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা এ বাসটিতে যাত্রী শাহিদ ইসলাম বাদশা (২০) এবং তার মা মোছা. শারমিন সুলতানা রুমকি (৪৫) অবস্থান করছিলেন। রাত বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে তারা ভোরে বাড়ি ফেরার আশায় বাসের ভেতরে অবস্থান করছিল। এ সময় মাক্স পড়া অবস্থায় ৩ যুবক এসে পাম্পে দাঁড়িয়ে থাকা আলম এশিয়া পরিবহনের বাসটিতে প্রেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাটি টের পেয়ে বাসের গ্লাস ভেঙ্গে শাহিদ ইসলাম বাদশা (২০) এবং তার মা মোছা. শারমিন সুলতানা রুমকি (৪৫) বেরিয়ে আসে। এতে পড়ে গিয়ে মাথায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত যাত্রী শারমিন সুলতানা রুমকিকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। এ সময় ঘুমিয়ে থাকা চালক মো. জুলহাস মিয়া বাসের ভেতরে আটকা পড়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে সেখানেই মারা গেছে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নাশকতার উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে- বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বলে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনাস্থলে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষন করে নাশকতাকারিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। আশা করছি দ্রুত এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
স্থানীয়রা আরও জানায়, হঠাৎ দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে থাকার বিষয়টি টের পেয়ে আমরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হলে তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়।
ফুলবাড়ীয়া ফায়ার স্টেশনের অতিরিক্ত ইন্সপেক্টর ইয়াসিন ইকবার বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। এ সময় বাসে তল্লাশী চালিয়ে সিটে পড়ে থাকা অগ্নিদগ্ধ একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে একাধিকবার যোগাযোগ করেও বাসটির যাত্রী শাহিদ ইসলাম বাদশার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে তাদের বাড়ি উপজেলার চকরাধাকানাই গ্রামে। তবে সঠিক পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
নিহত বাস চালক জুলহাসের মা বলেন, আমার ছেলে তো কোন রাজনীতির সাথে জড়িত না। তাহলে কি কারণে তাকে বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হলো। আমার ছেলে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ। তার তিন লাখ টাকা দেনা আছে। সে মাসে ১৫ হাজার টাকার কিস্তি চালায়। ছেলেকে বিয়ে করিয়েছি আনুমানিক এক দেড় বছর আগে। কোন সন্তান না হওয়ার আগেই আমার ছেলেকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে।
স্ত্রী জাকিয়া আক্তার বলেন, আমার সংসারে ফুল ফেটার আগেই আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমার স্বামীকে যারা মেরেছে, তাদের ফাঁসি চাই।
বোন মযনা বেগম বলেন, আমার ভাই সেই ছোট থেকে বাস চালায়। সে সপ্তাহে একবার করে বাড়িতে আসত। আবার চলে যেত। আমার ভাই বাসেই বসবাস করতেন। আমাের তার উপার্জনের টাকাতেই চলতাম। এখন আমরা কিভাবে চলব, কে আমাদের দেখবে। আমাদের দাবি সরকার যেন আমাদের পরিবারের দায়িত্ব নেয়। সরকার দায়িত্ব না নিলে আমরা না খেয়ে মারা যাব।
এবিষয়ে ফুলবাড়ীয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুকনুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামীদের চিন্হিত করে গ্রেপ্তার অভিযান চলমান আছে।