শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষের কষ্ট-দুঃখ লাঘব করাই আমাদের রাজনীতি-এমরান সালেহ প্রিন্স

শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষের কষ্ট-দুঃখ লাঘব করাই আমাদের রাজনীতি-এমরান সালেহ প্রিন্স

BMTV Desk No Comments

স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজ
শীতের ভোর, চারপাশ কুয়াশায় ঢাকা।আজ ফজরের নামাজ শেষে হালুয়াঘাটের ধারাবাজারে কৃষি শ্রমিক হাটে ধান কাটার কাজে নিজেদের শ্রম বিক্রি করতে সমবেত হন শতশত কৃষি শ্রমিক। ঠিক সে সময় কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সেখানে হাজির হন বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব ও ময়মনসিংহ-১ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স।

শীতের সকালে হাটে উপস্থিত কৃষিশ্রমিকদের জন্য তিনি নিজ উদ্যোগে আয়োজন করেন গরম ভাপা পিঠা ও গরম চায়ের নাস্তা। ঘুরে ঘুরে তিনি সকলের হাতে নাশতা তুলে দেন । হঠাৎ করে প্রিন্সের এই আয়োজনে এবং তার এমন মানবিক আচরণে শ্রমিকদের মাঝে দেখা যায় তীব্র আনন্দ। অনেকে বলেন, “ শ্রমিকের কষ্ট বুঝে শীতের ভোরে কোনো নেতাকে এসে গরম পিঠা খাওয়াতে দেখিনি। শুধু আজ নয় , ধান কাটার অন্য মৌসুমেও কয়েকবার প্রিন্স সাহেব এসে আমাদের খোঁজ খবর নিয়েছেন ।”

ভাপা পিঠা আর গরম চায়ের আড্ডায় কৃষি শ্রমিকরা এমরান সালেহ প্রিন্সের সাথে নিজেদের সুখ-দুঃখ, শ্রমের কষ্ট, মজুরি বৈষম্য ও পরিবারের বাস্তব সমস্যা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন।

এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা শ্রমিকদের হাতে ধানের শীষ ও প্রিন্সের ছবিযুক্ত গেঞ্জি উপহার দেন। শ্রমিকরা সেখানেই গেঞ্জি পরে প্রিন্সকে সঙ্গে নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল বের করেন। তারা স্লোগান দিতে থাকেন—“কৃষকের মার্কা—ধানের শীষ! শ্রমিকের মার্কা—ধানের শীষ!”
“ভোট দেব কিসে?—ধানের শীষে!” “ প্রিন্স ভাইয়ের সালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন!” “দুর্দিনের প্রিন্স ভিএসআই , আমরা তোমায় ভুলি নাই!” মিছিলে শ্রমিকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

এর আগে ধারা বাজারে সমবেত কৃষি শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন—“বাংলাদেশের মাটির শক্তি কৃষক–কৃষি শ্রমিক। এই শ্রমিকদের ঘামেই দেশ চলেছে, অথচ তাদের জীবনমান আজও অবহেলা, দারিদ্র্য আর অনিশ্চয়তার মধ্যে বন্দী। যে শ্রমিক সোনার ফসল ফলায়, সেই শ্রমিকই বছরের পর বছর অভাবে দিন কাটায়—এটা দেশের জন্য লজ্জা।”

তিনি অভিযোগ করেন,“গত দেড় দশক ধরে ফ্যাসিস্ট সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট আর সিন্ডিকেটের কারণে কৃষি শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া নিরীহ মানুষ সবচেয়ে বেশি নিপীড়িত হয়েছে। মাঠে ফসল ফলানো মানুষ ন্যায্যমূল্য পায় না, অথচ লুটপাটের রাজনীতিতে জড়িত একদল ব্যক্তি হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে। গরিব মানুষের কষ্টের ঘাম শোষণ করেই তাদের রাজনৈতিক প্রাসাদ দাঁড়িয়ে আছে।তাদের মেগা দুর্নীতির মেগা প্রজেক্টের যাঁতাকলে পিস্ট হয়ে গ্রামের ঘরে ঘরে ছিলো নিরন্ন বুভুক্ষু মানুষের বোবা কান্না ”

জীবনমান উন্নয়ন ও সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রিন্স বলেন,“বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে কৃষি শ্রমিকসহ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নই হবে প্রথম অগ্রাধিকার। জনগণের ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দৈনিক মজুরি ন্যূনতম জীবিকা–সম্মত পর্যায়ে উন্নীতকরণ, কৃষি শ্রমিকদের জন্য বিশেষ কল্যাণ তহবিল গঠন. চিকিৎসা, বাসস্থান, বয়স্কভাতা ও শিশুশিক্ষায় আলাদা সুবিধা প্রদান, মৌসুমভিত্তিক বেকারের দিনগুলোতে সরকারিভাবে সহায়তা দেওয়া, প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষি সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন করে কৃষক–শ্রমিকদের সমস্যা তাৎক্ষণিক সমাধান করার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া হবে । “

“আপনারা মাঠে ঘামে ভিজে যে পরিশ্রম করেন, সেই শ্রমেই বাংলাদেশ চলে। আমরা খেয়ে পড়ে বাঁচি । এই শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষের কষ্ট-দুঃখ লাঘব করাই আমাদের রাজনীতি।এই দেশ শুধু বড়লোকের নয়—এ দেশ আপনাদের ঘাম, আপনাদের শক্তি, আপনাদের শ্রমের উপর দাঁড়িয়ে আছে।যে রাজনীতি মানুষকে মূল্য দেয় না, সেই রাজনীতি আমরা করি না। সুষম উন্নয়ন, ন্যায্য অধিকার এবং সম্মানের জীবন—এটাই আমাদের অঙ্গীকার।”

তিনি জানান—বিএনপি জনগণের রায় নিয়ে সরকার গঠন করে -“প্রান্তিক কৃষকরা একটি ফসলের উৎপাদন খরচ পূর্ণমাত্রায় পাবেন।দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য বন্ধ করে সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনবে।কৃষিশ্রমিকসহ দরিদ্র পরিবারে খাদ্যদ্রব্যের একটি অংশ বিনামূল্যে দেওয়া হবে। সরকার গঠনের প্রথম ১৮ মাসে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। শিক্ষিত বেকার যুবকদের বেকার ভাতা দেওয়া হবে। গ্রামীণ এলাকায় বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদান করা হবে।”

হালুয়াঘাট–ধোবাউড়ার উন্নয়ন বিষয়ে প্রিন্স বলেন—“আলোকিত হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া গড়ার যে স্বপ্ন, সেটা শুধু আমার নয়—দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের স্বপ্ন। অতীতে কে কোন প্রতীকে ভোট দিয়েছে তা আমি জানতে চাই না। সামনে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে হালুয়াঘাট- ধোবাউড়ার উন্নয়ন, সমৃদ্ধি , শান্তি ,সম্প্রীতি ,কর্মসংস্থানের লক্ষে “ধানের শীষ”কে গণঐক্যের প্রতীকে পরিণত করতে হবে।”

শেষে তিনি বলেন,“এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের দায়িত্ব আমি আমার কাঁধে নিলাম-আর দায়ীত্ব দিলাম আপনাদের কাঁধে।”

মতিউল আলম

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *