শফিকুল ইসলাম ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ
এমএস কেসি এগ্রো কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তা মো. আতিকুল্লাহ বাহার বাংলাদেশের আধুনিক কৃষি উদ্ভাবনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি একজন উচ্চশিক্ষিত, বাস্তবমুখী এবং উদ্ভাবনী কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে ইতিমধ্যে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন।
২০১০ সালের আগস্ট মাসে যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষা ও পেশাগত অভিজ্ঞতা অর্জনের পরও দেশের টানে ফিরে আসেন তিনি। কৃষির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ থেকেই তিনি কৃষি খাতে আত্মনিয়োগ করেন। যদিও তার একাডেমিক পটভূমি ছিল ফ্যাশন মার্কেটিং, তবুও কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে দেশের কৃষিকে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকারে তিনি নিজেকে গড়ে তোলেন একজন মডার্ন এগ্রিপ্রেনার হিসেবে।
দেশে ফিরে এসে তিনি তার নিজস্ব জমি ও পরিবারের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেন কেসি এগ্রো কমপ্লেক্স। শুরুতে গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প, মাছ ও মুরগির খামার এবং একটি বায়োগ্যাস প্লান্টের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি ইউনিট গড়ে তোলেন। প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু বাধা এলেও তিনি দৃঢ় মনোবল ও পরিকল্পনার মাধ্যমে দ্রুতই সফলতার পথে এগিয়ে যান।
২০১৯ সাল থেকে তিনি বিশেষভাবে ডেইরি খাতে মনোনিবেশ করেন। দুধ সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনের ক্ষেত্রে তিনি ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন। বর্তমানে তার উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে প্রায় ২০০টি খামার সরাসরি উপকৃত হচ্ছে। প্রতিদিন কেসি এগ্রো কমপ্লেক্স থেকে প্রায় ৩,০০০ লিটার দুধ সংগ্রহ ও বাজারজাত করা হচ্ছে।
২০২৩ সালে তিনি বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পরিচালিত দুগ্ধজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ইউনিট প্রকল্পে যুক্ত হন। প্রাথমিক ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন করে অনুমোদন পাওয়ার পর তিনি ২০টি দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেন এবং নিজস্ব মিষ্টির ব্র্যান্ড চালু করেন। ঢাকার উত্তরায় এই ব্র্যান্ডের প্রথম শাখা ইতোমধ্যেই সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
বর্তমানে তার ব্র্যান্ডটি ট্রেডমার্ক নিবন্ধিত এবং বিএসটিআই অনুমোদিত। তার উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি দেশের খাদ্যশিল্পে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, আন্তর্জাতিক ফুড চেইন Pizza Inn তার উৎপাদিত চিজ ক্রয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যা বাংলাদেশের দুগ্ধজাত পণ্যের রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
বর্তমানে মোঃ আতিকুল্লাহ বাহার ঢাকার উত্তরায় একটি দুধের পাইকারি বাজার (Wholesale Hub) স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন, যা দুধের গুণগত মান সংরক্ষণ, বিপণন ও খামারিদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এলডিডিপি (LDDP) প্রকল্পের আওতাধীন এই উদ্যোগ এখন বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে। শিক্ষিত, উদ্ভাবনী ও পরিশ্রমী উদ্যোক্তা হিসেবে মোঃ আতিকুল্লাহ বাহার বাংলাদেশের কৃষিকে আধুনিক, টেকসই ও রপ্তানিমুখী খাতে রূপান্তরিত করার অন্যতম প্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন।