You must need to login..!
Description
মতিউল আলম, বিএমটিভি নিউজঃ করোনার শুরুতেই কেউ মারা গেলে লাশ নিতে ভয় পেত। বাবা বা সন্তানের লাশ ও ছেলে বাবার লাশ নিতে চাইত না। সেই পরিস্থিতিতে ময়মনসিংহের কিছু স্বেচ্ছাসেবী এগিয়ে আসে। যাদের কথা ময়মনসিংহবাসী চিরদিন স্মরণ রাখবে। করোনার শুরু থেকে অদ্যবধি ময়মনসিংহে যে মানুষটি ও তার সহযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে করোনায় মৃত লাশ দাফন কাফন ও সৎকার করে আসছে। সেইসাথে করোনায় আক্রান্ত শ্বাসকষ্ট রোগীকে বিনামুল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করে আসছেন সেই মানুষটি হলেন আলী ইউসুফ।
সারাদেশে করোনা রোগী ও মৃতের সংখ্যা যখন হুহু বাড়ছে। ময়মনসিংহ এর ব্যতিক্রম নয়। করোনা মহামারির কারণে সিলিন্ডারের আকাল পড়ছে, বেড়েছে দামও। বহু দরিদ্র রোগী অর্থাভাবে অক্সিজেন না পেয়ে মারা যাচ্ছেন। জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন দিতে হবে, এমন অনেক রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় পাওয়া যাচ্ছে না, তার আগেই অক্সিজেনের অভাবে প্রাণহানি ঘটছে।
এ অবস্থার মধ্যে ময়মনসিংহ নগরীর মুদ্রণ ব্যবসায়ী স্বেচ্ছাসেবী আলী ইউসুফ ও তার দল প্রতিদিনই দিচ্ছেন বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা। তাদের একটি হেল্পলাইন নম্বর রয়েছে। করোনা ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহের জন্য ওই নম্বরে ফোন করলেই ২৪ ঘন্টা আলী ইউসুফ বা তার দল দ্রুত অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রোগীর বাড়ি পৌছে যাচ্ছেন। ২০২০ সালের মে মাসে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে যাত্রা শুরু করেন আলী ইউসুফ। একটি সিলিন্ডার দিয়ে শুরু করলেও এখন তাঁদের সিলিন্ডারের সংখ্যা ৪২টি। রাতে কিংবা দিনে, যেকোনো সময় রোগীর বাড়ি কিংবা হাসপাতালে অক্সিজেন পৌঁছে দেন তাঁরা।
এর সাথে যুক্ত হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধাও। গতবছর ঘোষণা দিয়েও রোগীদের অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা দিতে পারেননি। কারন এখনো তাদের কেনা হয়নি অ্যাম্বুলেন্স। এ অবস্থায় গত জুলাইয়ে করোনা রোগিদের ফ্রী হাসপাতালে পৌঁছে দিতে ভাড়ায় একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়েছেন তাঁরা। কোনো করোনা রোগী হাসপাতালে যেতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবী আলী ইউসুফ বা তার দলের সদস্যরা অ্যাম্বুলেন্সে করে ফ্রী পৌঁছে দিবেন হাসপাতালে।
আলী ইউসুফ পেশায় একজন মুদ্রণ ব্যবসায়ী। ময়মনসিংহ নগরীর ছোট বাজারে তার একটি প্রিন্টিং প্রেস রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃৃতিক আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত আছেন। তবে করোনার প্রায় দেড় বছরে তাঁর পরিচয় একটাই তিনি একজন স্বেচ্ছাসেবী। বর্তমানে ইউসুফ ও তাঁর দল অক্সিজেন সেবা ছাড়াও করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন কাফন ও সৎকারের কাজও করছেন।
আলী ইউসুফ বলেন আমার একার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব হতো না। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ যারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আমার সাথে কাজ করছেন তাদের সহযোগিতা ছাড়া এত বড় কাজ করা সম্ভব হতো না্। আলী ইউসুফ বানানোর জন্য তাদের অবদান অনেক। এই কাজে যুক্ত আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল কান্তি পাল, আশরাফ উদ্দিন , সাফরান আাহমেদ, মেহেদী হাসান , সাব্বির আহমেদ শাকিল, বিনায়ক দত্ত, অলক সরকার, তানিয়া ইয়াসমিন, রায়হান আকন্দ ও সজল।
ময়মনসিংহ নগরীর ছোট বাজার এলাকার সোহানের পরিবারের সকলেই করোনায় আক্রান্ত। এ অবস্থায় শনিবার সকালে তাদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে ০১৬১০৫৪৫৫১৬ মুঠোফোন নাম্বারে ফোন করলে ইউসুফ আলী ও তার দল ছুটে যান অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে। এছাড়াও একই দিন সকালে নগরীর জিলা স্কুলের সামনের এক নারী করোনা রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন এমন ফোনে ওই নারীর বাসায় অক্সিজেন নিয়ে দ্রুত ছুটে যান তারা। এভাবেই এক বছরের বেশি সময় ধরেই শহরের করোনা রোগীদের জন্য বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছেন আলী ইউসুফ ও তার দল।
আলী ইউসুফ জানান, ৪২টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের কোনোটিই তিনি নিজের টাকায় কেনেননি। শহরের একাধিক ব্যক্তি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান তাঁকে এই সিলিন্ডারগুলো কিনে দিয়েছেন। প্রথমে দুটি সিলিন্ডার দিয়েছে ময়মনসিংহের বহুরূপী নাট্য সংস্থা। আর গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এমদাদুল হক চৌধুরী একটি সিলিন্ডার দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আশপাশের দানশীল মানুষের কারণেই কাজটা সহজ হয়েছে। দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থান করা অনেকেই আমাদের অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়েছেন। এখন প্রতিদিনই অক্সিজেনের জন্য অনেক ফোন আসে। ০১৬১০৫৪৫৫১৬ নম্বরে যোগাযোগ করলেই আমাদের দলের সদস্যরা দ্রুত অক্সিজেনের সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
আলী ইউসুফ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের করোনা মৃত ব্যক্তিদের সৎকার ও দাফন কাফনের ব্যবস্থা কমিটির সমন্বয়কারী। তিনি বলেন, এই কমিটি গঠনের পর অদ্যবধি করোনা যত লাশ সৎকার ও দাফন কাফন করা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবীদের নিজ খরচে। সিটি করপোরেশন অর্থ ব্যয় করেনি।
স্বেচ্ছাসেবীদের এমন সেবামূলক কাজের বিষয়ে ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা রোগীদের জন্য বিনা মূল্যে অক্সিজেন সরবরাহের মতো মহৎ কাজে সর্বদাই নিয়োজিত থাকায় আলী ইউসুফ ও তার দলের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রতি আমরা সবাই কৃতজ্ঞ।