You must need to login..!
Description
বিএমটিভি নিউজ ডেস্কঃ
নেত্রকোনার মদন উপজেলার উচিতপুর হাওরে বেড়াতে গিয়ে নৌকা ডুবে নিহত ১৭ জনের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। নিহতরা সকলেই ময়মনসিংহ সদর ও গৌরীপুর উপজেলার। ময়মনসিংহ সদর উপজেলা ‘মাদরাসায়ে মারকাজুস সুন্নাহ’সহ স্থানীয় কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। প্রতি বছরের মতো ঈদের পরপরই আনন্দ ভ্রমণে যায় । ময়মনসিংহ সদরের চরভবানীপুর এলাকার সেই রীতি জারি ছিল করোনাকালেও।
মাদরাসা প্রধান মাওলানা মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে কোনাপাড়া গ্রামের মাদরাসা শিক্ষকদের মাধ্যমে নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার ‘মিনি কক্সবাজার’খ্যাত উচিতপুর হাওরের উদ্দেশ্যে বের হয় ৪৮ জনের একটি দল। এদের বেশিরভাগই শিশু-কিশোর।
জেলার মদন উপজেলার সেই উচিতপুর পৌঁছে সেখানকার নৌঘাট ছেড়ে যাওয়ার কিছু পরেই হাওরে ডুবে যায় তাদের ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি। খবর পেয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। একে একে উদ্ধার হয় ১৭টি মরদেহ। নিখোঁজ রয়েছে আরও একজন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, অতিরিক্ত যাত্রী উঠায় এবং প্রচণ্ড ঢেউ ও বাতাসের কবলে পড়ে নৌকাডুবির ঘটনাটি ঘটে। এতে যে ১৭ জন নিহত হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৫ জনই ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরসিরতা ইউনিয়নের ভবানীপুর কোনাপাড়া, খরিচা ও গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। অপর দুইজন গৌরীপুর উপজেলার। রাকিব (২০) নামে নিখোঁজ একজনের বাড়িও কোনাপাড়া গ্রামে।
জানা গেছে, তারা নেত্রকোনার মদন উপজেলার উচিতপুরে জামিয়া আজিজিয়া মঈনুল ইসলাম মাদরাসার আমন্ত্রণে বেড়াতে যান। সেখানে বিনোদন পেতে হাওরের উদ্দেশ্যে নৌকা ভ্রমণে গিয়ে আকস্মিক এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হলো তাদের। এদিকে ট্রলারডুবিতে ‘মাদরাসায়ে মারকাযুস সুন্নাহ’র মুহতামিম হাফেজ মাওলানা মাহফুজুর রহমান, তার দুই ছেলে, দুই ভাতিজা-ভাতিজি ও ভাগ্নেসহ একই পরিবারের আটজনের প্রাণ গেছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা বাসির উদ্দিনের ছেলে ও নাতিও মারা গেছে।
বুধবার (৫ আগস্ট) বিকেলে নিহতদের পরিবারের মাঝে মর্মান্তিক দুঃসংবাদটি পৌঁছার পরপরই আত্মীয়-স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠে। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় সদরের কোনাপাড়া গ্রামে গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ছুটে গিয়ে তাদেরকে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
ওই গ্রামের ঘরে ঘরে উঠে কান্নার রোল। কেউ কেউ আবার মরদেহের অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছেন।
নেত্রকোনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরসিরতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদের কাছে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে।
চরসিরতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ জানান, খবর পেয়েই তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহগুলা গ্রহণ করেন এবং মধ্যরাতেই তা এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
নিহতরা হলেন- ‘মাদরাসায়ে মারকাজুস সুন্নাহ’র মুহতামিম হাফেজ মাওলানা মাহফুজুর রহমান (৪৫), তার দুই ছেলে হাফেজ মাহবুবুর রহমান আসিফ (১৫) ও মাহমুদুর রহমান (১২), ভাগ্নে রেজাউল করিম (১৫), ভাতিজা জোবায়ের (২০) ও জোনায়েদ (১৭), ভাতিজি লুবনা (১৩) ও জুলফা (৭), চরখরিচা গ্রামের কৃষক ইসা মিয়া (৪০) ও তার ছেলে শামীম (১০), কোনাপাড়া গ্রামের মাদরাসা শিক্ষক আজাহারুল ইসলাম (৩৮), হামিদুল (৩৫), সাইফুল ইসলাম রতন (৩০) ও জহিরুল ইসলাম (৩৫), চরগোবিন্দপুরের তালেব মেম্বারের ছেলে শহিদুল (৪০) এবং গৌরীপুর উপজেলার ধোপাজাঙ্গালিয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে শফিকুর রহমান (৪০) ও তার ছেলে সামাআন (১০)।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, ‘করোনা মহামারিতে শিক্ষকদের ভ্রমণের আয়োজন করা একদমই উচিত হয়নি। খামখেয়ালিপনার কারণেই এতগুলো মানুষের প্রাণ ঝড়ে গেলো।’ সুত্র বার্তা২৪ডট কম, প্রতিবেদক ওবায়দুল হক।