ময়মনসিংহে ডিবি’র অভিযানে রহস্যজনক হত্যাকান্ডে গ্রেফতার হওয়া আসামীর স্বীকারোক্তি

image

You must need to login..!

Description

 

বিএমটিভি নিউজ ডেস্কঃ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে অজ্ঞাত যুবক হত্যাকান্ডের মামলার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ডিবি পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে। এ ঘটনায় লিয়াকত আলী ও নিহতের স্ত্রী সাবিনা খাতুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিয়ে ডিবি পুলিশ ও আদালতে পৃথকভাবে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে। নিহত ব্যাক্তির নাম হযরত আলী। সে শেরপুরের নালিতাবাড়ির বাশকান্দা গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে। স্ত্রীর পরকীয়া প্রকাশ পাওয়ায় স্বামী হযরত আলীকে কৌশলে ডেকে নিয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়।
ডিবির ওসি সফিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানান, গত ৩০ আগষ্ট দুপুরে হালুয়াঘাটের আঁতলা বিলে অজ্ঞাতনামা এক ব্যাক্তির যুবকের লাশ হালুয়াঘাট থানা পুলিশ উদ্ধার করে। পরে লাশের ময়না তদন্তের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায় পুলিশ। মৃত ব্যক্তির পরিচয় উদঘাটিত হলে জানা যায় মৃত ব্যক্তির নাম মোঃ হযরত আলী। তার পিতার নাম-গোলাম মোস্তফা। সে নালিতাবাড়ির বাঁশকান্দা পূর্বপাড়া বাসিন্দা। এ ঘটনায় ছোট ভাই আবু নাসের বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে হালুয়াঘাট থানার মামলা নং-২৮, তারিখ- ৩১/০৮/২০২১ ইং, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আহমার উজ্জমান ক্লুলেস এই মামলাটিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে মামলাটির তদন্তভার দেন জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবিকে। ডিবির ওসি সফিকুল ইসলাম পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় মামলার স্বল্প সময়ের মধ্যে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন ও ঘাতকদের গ্রেফতারে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্তে মাঠে নামেন। ডিবির এলআইসি বিভাগ তদন্ত করে হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারী মোঃ লিয়াকত আলী ও সাবিনা খাতুনকে গ্রেফতার করে। মামলার মূল রহস্য উদঘাটিত হলো। গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে ওসি সফিকুল ইসলাম বলেন, আসামী লিয়াকত আলী ঢাকা উত্তরা এলাকায় থাকিয়া রাজমিস্ত্রী ও রিক্সা চালাতো। ১০ বছর আসামী সাবিনা খাতুন তার প্রথম স্বামী জনৈক সাইদুর রহমানকে শারিরীক অক্ষমতার অপবাদে তালাক দিয়ে তার দুলাভাই গ্রেফতারকৃত ঢাকায় লিয়াকতের কাছে চলে যায়। লিয়াকতের বাসায় থেকে সাবিনা বিভিন্ন বাসা-বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করত। এ সময় লিয়াকত ও সাবিনার মধ্যে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ পরকীয়ার কারনে লিয়াকতের সংসারে অশান্তি দেখা দিলে ২ বছর আগে সাবিনা
ঢাকা থেকে তাদের বাড়ীতে চলে আসে। গত ৮/৯ মাস আগে সাবিনাকে তার পিতা-মাতা হযরত আলীর কাছে বিয়ে দেয়। এর পরও লিয়াকতের সাথে সাবিনার বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ সম্পর্ক চলতে থাকে। প্রায় ১ মাস আগে লিয়াকত ও সাবিনার অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি হযরত আলীর কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে। এ ঘটনায় হযরত আলীকে হত্যার পরিকল্পনা করে লিয়াকত ও সাবিনা। এ পরিকল্পার অংশ হিসাবে ২৯ আগষ্ট সাবিনা মিথ্যা অজুহাতে তার স্বামী হযরত আলীকে পরকীয়া প্রেমিক দুলাভাই লিয়াকতের কাছে গোরকপুর বাজারে পাঠায়। দুলাভাই লিয়াকত তার শালিকার স্বামী হযরত আলীকে নিয়ে
বেড়াতে যাওয়ার অজুহাতে ঘটনাস্থলে নিয়ে গলায় গামছা পেচিয়ে ও কাদা মাটির মধ্যে চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে লাশের পরিচয় গোপন করার জন্য হযরত আলীর লাশে কাদা মেখে রাখে। হযরত আলীর ব্যবহৃত মোবাইল সেট, পরিহিত লুঙ্গি, শার্ট, গেঞ্জি খুলে কাদা মাটিতে পুতে রাখে। একই সাথে লিয়াকত তার প্রেমিকা সাবিনার কাছে হযরত আলীকে হত্যার বিষয় মোবাইল ফোনে জানায় ও সতর্ক থাকতে বলে। পরে লিয়াকত আত্মগোপনে চলে যায়।
ওসি আরো জানান, গ্রেফতারের পর ঘটনাস্থল থেকে আসামী লিয়াকতের দেখানো মতে কাদামাটিতে পুতে রাখা মৃত হযরত আলীর মোবাইল সেট, পরিহিত লুঙ্গি, শার্ট, গেঞ্জি ও হযরত আলীকে গলায় পেচিয়ে শ্বাসরোধে ব্যবহার করা গামছা উদ্ধার করা হয়। তাদেরকে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হলে গ্রেফতাকৃতরা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে।

প্রধান সম্পাদকঃ
মতিউল আলম

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
মাকসুদা আক্তার