শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদভারে মূখরিত ময়মনসিংহের শিক্ষাঙ্গন

image

You must need to login..!

Description

স্টাফ রিপোর্টার,বিএমটিভি নিউজঃ ‘আজকের দিনের যে অনুভূতি তা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। আমি আমার জীবনে মনে হয় কখনোই এত আনন্দিত হইনি, এত উচ্ছ্বসিত হইনি। ১৮ মাস পরে আমার সন্তানরা আমার কাছে এসেছে, তাদের সামনাসামনি দেখছি। এই দিনটির প্রতীক্ষায় এত দীর্ঘ সময় আমরা ছিলাম।’

দীর্ঘ ৫৪৩ দিন পর সন্তানতুল্য ছাত্রীদের কাছে পেয়ে এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করছিলেন ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার।
তিনি বলে চলেন, আজ মনে হচ্ছে ঈদের দিনেও এত আনন্দ পাইনি। কোনো ভালো লাগার সঙ্গে এটি তুলনা করা যায় না। এই অনুভূতিটা আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক সবার জন্যই। যেন বাঁধভাঙা বন্যার মতন উচ্ছ্বাস বের হয়ে আসছে। এই দিনটা সবার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে আজীবন।

শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে স্কুলটিতে ছিল ভিন্ন আয়োজন। বেলুন দিয়ে বানানো হয়েছে গেট, ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে অভ্যর্থনা। এতদিন পর বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষকদের এমন আয়োজন বাড়তি আনন্দ দিয়েছে শিক্ষার্থীদের।

সরেজমিনে রোববার (১২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৭টায় দেখা যায়, পুরো ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ ছিল হাসি-আনন্দে ভরপুর। প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মুখে ছিল মাস্ক। স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করেই ছিল হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। থার্মোমিটার দিয়ে শিক্ষকরা নিজেরাই শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা মেপেছেন।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাবাসসুম তহুরা বলে, এত দিন পর স্কুলে এসে সত্যি অনেক ভালো লাগছে। বন্ধ থাকাকালীন আমাদের অন্য রকম এক মানসিকতা ছিল, আজ নিজের ভেতরে প্রফুল্লতা ফিরে পেলাম। স্কুলে এসে স্যার-ম্যামদের কাছ থেকে এমন সারপ্রাইজ পাব, তা ভাবতে পারিনি।

আরেক ছাত্রী নওরিন বলে, এত দিন আমরা অনলাইন ক্লাস করলেও শিক্ষক ও বান্ধবীদের কাছে পাইনি। তাই সে সময়টায় কোনো আমেজ ছিল না। আজ আবারো সেই পুরোনা আমেজ ফিরে পেলাম। এখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সবকিছু করছি। দোয়া করি শিক্ষার্থীরা সুস্থ থাকুক। আশা করি আর স্কুল বন্ধ হবে না।

ময়মনসিংহের আরেক স্বনামধন্য সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে গিয়েও দেখা গেছে লাইন ধরে ঢোকানো হচ্ছে ছাত্রদের। তারপর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে প্রবেশ করানো হচ্ছে শ্রেণিকক্ষে। দূরত্ব বজায় রেখে বেঞ্চে বসানো হয়েছে।

জিলা স্কুলের ছাত্র মোমেন মাহমুদ বলে, সবকিছুই যেন নতুন মনে হচ্ছে। এখন পড়ায় মন বসবে। অনলাইন ক্লাস করতেও মনটা এই ক্লাসরুমেই পড়ে থাকত। খুব মিস করতাম বন্ধুদের। অবশেষে আজ স্যার-বন্ধুদের কাছে পেয়েছি। আমরা খুবই আনন্দিত।

কথা হয় এসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সঙ্গেও। ছেলে-মেয়েদের স্কুলমুখী করতে পেয়ে খুশি তারাও। আছমা আক্তার নামের এক অভিভাবক বলেন, দেশে সবকিছুই খুলে দেওয়া হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু আমরা এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। আশা করছি, ছেলে-মেয়েরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে তাদের কিছুই হবে না।
জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহসিনা খাতুন বলেন, ছেলেদের তিন ফুট দূরত্বে বসানো হচ্ছে। তাদের মনকে উৎফুল্ল রাখার জন্য খেলাধুলারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিফট ভাগ করে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। আগে চার শিফটে ক্লাস করানো হলেও এখন আট শিফট করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা স্কুলে ফেরায় যে শুধু শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই খুশি, তা নয়। একই রকম উচ্ছ্বাস কর্মচারীদেরও মাঝেও। অনুভূতি জানতে চাইলে রেজিয়া খাতুন নামের এক আয়া বলেন, এতদিন স্কুলটিতে ছিল শুধুই শূন্যতা। সব সময় ছাত্রীদের জন্য মন পুড়েছে। আজ আবার তাদের পেয়ে কী যে আনন্দ লাগছে, তা বোঝাতে পারব না। তাদের ছাড়া তো কিছু ভালো লাগে না।

স্কুলের সামনে গত সাত বছর ধরে চটপটি বিক্রি করেন রুবেল মিয়া। শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষ করেই ছুটে আসত তার দোকানে। কিন্তু গত দেড় বছরের বেশি সময় তাদের সঙ্গে দেখা হয়নি। তিনি বলেন, এত দিন ব্যবসায়ও খারাপ অবস্থা ছিল। আজ আবার তারা আসছে। আমারও খুব খুশি লাগছে।

জানা গেছে, জেলায় ২ হাজার ১৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৬৫ জন। এ ছাড়াও মাধ্যমিক ৬৬৫টি ও উচ্চমাধ্যমিক ৭৭টি বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা রয়েছে ৩৮৮টি। প্রায় ১২ লাখের মতো শিক্ষার্থী পর্যায়ক্রমে ক্লাসে ফিরবে।