You must need to login..!
Description
নিজস্ব প্রতিবেদক, বিএমটিভি নিউজঃ ময়মনসিংহের ত্রিশালের সরকারি নজরুল একাডেমীর প্রধান শিক্ষক মো. মেজবাহ উদ্দিন এক ছাত্রীকে কু-প্রস্তাব ও অশালীন কথাবার্তা বলায় আত্মহত্যার চেষ্টা করলে মামলায় গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হওয়ায় প্রধান শিক্ষকের স্থলে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নতুন একজনকে দায়িত্বে দিয়ে চলে শিক্ষা কার্যক্রম। কিন্তু মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার তথ্য গোপন করে প্রধান শিক্ষক পদে বহালের একটি আদেশ এসেছে।
এদিকে একটি প্রভাবশালী মহল প্রধান শিক্ষক মো. মেজবাহ উদ্দিনকে পুনরায় বসানোর জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে।
অপরদিকে নারীকে কুপ্রস্তাব দিয়ে যৌন হয়রানি করা এবং আর্থিক অনিয়মে সম্পৃক্ত প্রধান শিক্ষক মো. মেজবাহ উদ্দিনকে পুনরায় চাকরিতে বহালের চেষ্টার খবরে ত্রিশালের শিক্ষক, ছাত্র, সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। তাকে জোরপূর্বক প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসানো হলে যদি কোনে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তার জন্য যারা তাকে বসানোর নেপথ্যে থাকবেন তারাই দায়ী থাকবেন বলে একাধিক ব্যক্তি জানান।
জানা যায়, উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য গেলে কু-প্রস্তাব ও অশালীন কথা বলেন প্রধান শিক্ষক মো. মেজবাহ উদ্দিন। ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর স্কুলছাত্রী কিশোরীর বোনের দায়ের করা মামলায় এটিই বলা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয় ধর্ষণের কারণে অসুস্থ্য হয়ে চিকিৎসাধীন থাকায় ষষ্ঠ শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি ছাত্রীটি। কিন্তু সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হতে গিয়ে শিক্ষককের কু-নজর পড়লে বিষয়টি পরিবারের কাছে জানায়। ছাত্রীটির বোন তাকে নিয়ে ভর্তির জন্য বিদ্যালয়ে গেলে টালবাহানা শুরু করে প্রধান শিক্ষক। এক পর্যায়ে বিদ্যালয় থেকে টিসি চাইলেতার জন্যও টাকা চাওয়া হয়। একই সঙ্গে ধর্ষণ মামলাটি তুলে নিতে চাপ দেন প্রধান শিক্ষক। ওই অবস্থায় ছাত্রীটি বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে মামলায় ত্রিশাল থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে কোর্টে প্রেরণ করলে আদালত
প্রধান শিক্ষক মেজবাহ উদ্দিনকে হাজতে প্রেরণ করেন। প্রধান শিক্ষক গ্রেপ্তার হওয়ায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এক চিঠিতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মামলায় জেলে প্রেরিত হওয়ায় মেজবাহের স্থলে সিনিয়র শিক্ষক মো. আতিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। তিনি অবসরে যাওয়ায় বর্তমানে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন এ.কে.এম কামরুল ইসলাম। তবে গত অন্তত ৫ মাস আগে শিক্ষক মেজবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ওই মামলাটি আদালতে খারিজ হয়ে যায়। এরপর বাদি উচ্চ আদালতে আপীল করেছেন বলে জানায়।
নারী নির্যাতন মামলাটির বাদি বলেন, তার বোন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়ে অসুস্থ্য থাকায় পরীক্ষায় বসতে পারেনি। সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হতে গেলে প্রধান শিক্ষক খারাপ প্রস্তাব দেয়। সেই লজ্জা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। তিনি মামলা করলেও কি কারণে মামলাটি খারিজ হয়ে যায় বুঝতে পারেন নি। ন্যায় বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে আপীল করেছেন।
গত ২ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিপ্তর থেকে মো. মেজবাহ উদ্দিনকে বহালের একটি অফিস আদেশ জারি হয়েছে। মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত আদেশের একটি জায়গায় অভিযুক্ত ‘শিক্ষক পুলিশ হেফাজতে যাননি’ কথাটি উল্লেখ করা হয়। মো. মেজবাহ উদ্দিনকে বহালের ওই চিঠির প্রেক্ষিতে গত ১৩ ডিসেম্বর ত্রিশাল সরকারি নজরুল একাডেমীর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এ.কে.এম কামরুল হাসান মামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি চিঠির মাধ্যমে পাঠান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিপ্তরের। এর প্রেক্ষিতে গত ৩ জানুয়ারি সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-১) মো. আমিনুল ইসলাম টুকু স্বাক্ষরিত এক পত্রে বলা হয়- মেজবাহ উদ্দিন ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক
কর্তৃক প্রদত্ত মামলার তথ্যে অসঙ্গতি থাকায় প্রয়োজনীয় তথ্যসহ আগামী ৯ জানুয়ারি গণশুনানিতে অংশ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
শুধু ওই ঘটনাটিই নয়, শিক্ষক মো. মেজবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও ছিলো। ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরশাদ উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে তার সত্যতা মেলে। বিপুল আর্থিক অনিয়মের সত্যতা পাওয়ায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থারও সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।
তবে শিক্ষক মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমার তথ্য গোপন করার সুযোগ নেই। মামলার কারণে তিনদিন হাজতে ছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তদন্ত শেষে তাকে বহালের আদেশ দিয়েছে।’
ময়মনসিংহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলায় কোনো শিক্ষক গ্রেপ্তার হলে তিনি সয়ংক্রীয় ভাবে সাময়িক বরখাস্ত হন। আপাতত ওই শিক্ষকের বহাল আদেশ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
নজরুল একাডেমী পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ও সাবেক শিক্ষক, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সর্বজন শ্রদ্বেয় মোঃ খলিলুর রহমান বিএসসি বলেন, জাতীয় কবি নজরুল ইসলামসহ দেশ বরেণ্য বহু মনিষী যে স্কুলে পড়েছেন সেই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের চেক জালিয়াতি, নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িত এবং নারীকে যৌন হয়রানিকারী প্রধান শিক্ষক শিক্ষক মো. মেজবাহ উদ্দিন পুনরায় প্রধান শিক্ষক শিক্ষকের চেয়ারে বসার খবর শুনে এলাকার মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকার মানুষ তীব্র আন্দোলন করার প্রস্তুতি নিয়েছে আমরা মুরুব্বীরা তা থামিয়ে রাখছি। আমরা ওদের বলেছি নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই সে প্রধান শিক্ষক শিক্ষকের চেয়ারে বসতে পারবে না। আমরা কর্তৃপক্ষে সুষ্ঠু পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছি।