মিজানুর রহমান খান ছিলেন বিচারপতিদেরও বিচারক !

image

You must need to login..!

Description

বিএমটিভি নিউজঃ  শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে সংবিধানবিশেষজ্ঞ সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানকে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে দোয়া-মোনাজাত ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাঁকে নিয়ে জাতীয় পত্রিকায় নিবন্ধ লিখেছেন অধ্যাপক আলী রিয়াজ, সাংবাদিক ও কলামিস্ট সোহরাব হাসান, মনজুরুল হক ও সাজিদুল হক। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে স্মরণ করেছেন তাঁর অগণিত ভক্ত, বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, এই ক্ষণজন্মা পুরুষ তাঁর কর্মজীবনে দেশে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অপরিসীম ধৈর্য ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তার কৃতিত্ব রেখে গেছেন। মরহুমের অবদানকে জাতি চিরকাল কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে।

স্মরণসভায় বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারবিভাগ পৃথককরণ মামলা-খ্যাত বিচারপতি মাসদার হোসেন বলেন, ‘মিজানুর রহমান খান ছিলেন বিচারপতিদেরও বিচারক এ কথা হয়তো অনেকে ভাবতে পারেন আমি সীমা অতিক্রম করে বলছি, আসলে মোটেই বেশি বলছি না। আমার প্রায় ৩৭ বছরের বিচারক জীবনে অনেক বিচারক দেখেছি, মিশেছি এবং তাদের বিষয়ে আমার ধারণা রয়েছে। ’ বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, আইন অঙ্গনে মিজানুর রহমান খানের অবদান জাতি স্মরণ রাখবে। বিচারক ও বিচারপতি সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়েই মিজান সরব থাকলেও তাঁর মৃত্যুর পর বিচারপতিগণ তাঁর মৃত্যুতে প্রচণ্ড শোকাহত হয়েছিলেন। তিনিই একমাত্র সাংবাদিক যার মৃত্যুর পর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে নামাজে জানাযা হয় ।

আইন অঙ্গনের সাহসী সাংবাদিক হিসেবে মিজানুর রহমান খানকে অভিহিত করেন বিচারপতি মতিন বলেন, মিজানের আইনের ডিগ্রি থাকুক বা না থাকুক, তিনি আইনজীবীদের আইনজীবী এবং বিচারকদের বিচারক। মাথার ওপর যদি কয়েকজন মিজানুর রহমান থাকেন, বিচারকরা চিন্তা করে কলম ধরবেন।

‘যে কথা আইনের কারণে, ভয়ের কারণে প্রকাশ করতে মানুষ সাহস পান না, সে কথা মিজানুর রহমান নানাভাবে ইঙ্গিত দিয়ে প্রকাশ করতেন। কখনো তা আলোচনা করতেন।’ —এভাবেই মিজানুর রহমান খানের কাজকে তুলে ধরেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান। তিনি বলেন, ‘গত এক বা দুই যুগে গুম ও ক্রসফায়ারের কারণে অনেক মায়ের কোল খালি হয়েছে। অনেক সাংবাদিক ক্ষণে ক্ষণে তা প্রচার করেন। তবে তা নিয়ে বেশি এগোতে গেলে কোথায় যেন একটি বাধা। কিন্তু মিজান ভাই লেখার মাধ্যমে সেই বাধা অতিক্রম করার চেষ্টা করতেন।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন বলেন, আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই কেবল আইন নিয়ে ভাববেন, তা নিয়ম নয়। মিজানুর রহমান খান এ কথাটি প্রমাণ করে গেছেন। আইনের ভাষাকে মিজানুর রহমান খান সাধারণ জনগণের ভাষাতে পরিণত করতে নিরলস কাজ করেছেন।

অসুস্থ হওয়ার কিছু দিন আগেও মিজানুর রহমানের খানের সঙ্গে একটি আলোচনায় অংশ নেন—সেই স্মৃতিচারণা করেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’–এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আইনের বিষয়ে মিজানুর রহমান সুন্দর ব্যাখ্যা দিতেন এবং কীভাবে ভুক্তভোগী বিচার পাবেন, সেসব কথা বলতেন।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আমার সাথে তাঁর সম্পর্ক ২০০৬ থেকে। তিনি আইন বিষয়ে যতটা বুঝতেন, বাংলাদেশের আইনজ্ঞদেরও আমি ততটা বুঝতে দেখিনি।

আইনজীবী ড. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আইনজ্ঞ হিসাবে মিজানুর রহমান খান বিভিন্ন তথ্যের জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। কিন্তু তাঁর চাহিদামত তথ্য সরবরাহে আমাকে আইনজীবী হওয়া সত্ত্বেও হিমশিম খেতে হতো। তাঁর জ্ঞানের সীমা ও আকাঙ্ক্ষা আমাকে সব সময় মোহিত করত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আইন বিষয়ক অনেক সাংবাদিক প্রশ্নই করতে জানেন না। আমার পরামর্শ মিজানুর রহমান খানকে চর্চা করুন, তাহলে ভালো সাংবাদিক হতে পারবেন।’

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, মিজানুর রহমান খান জানার জন্য সব সময়ই উদগ্রীব থাকতেন। তাঁর সাংবাদিকতা জীবনে জ্ঞানার্জন ছাড়া অন্য কোনও দিকে তাঁর তেমন কোনা আগ্রহ ছিল না।

আবু সাইদ খান বলেন, মিজানুর রহমান খান সাংবাদিক হিসাবে এই অঙ্গনে সর্বজনগ্রাহ্য ও সর্বজনস্বীকৃত ছিলেন।

কলামিস্ট ফারুক ওয়াসিফ বলেন, মিজানুর রহমান খান নিরাপত্তার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও দেশের স্বার্থে ছিলেন সম্পূর্ণ আপসহীন। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, জাতীয় উন্নতির স্বার্থে তার সক্রিয় অবদান ছিল অনস্বীকার্য।

হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের পথচলা শুরুই মিজানুর রহমান খানের হাত ধরে।

স্মরণসভায় মিজানুর রহমানের সহোদর ও দৈনিক শিক্ষাডটকম-এর সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান খান, দৈনিক সমকালের সিনিয়র সাংবাদিক মসিউর রহমান খান এবং পুত্র শাদমান মিজানুর খান উপস্থিত ছিলেন। সুত্র দৈনিক শিক্ষা