ময়মনসিংহে লাগেজ বন্দি লাশের রহস্য উম্মোচন ॥ গৃহকর্তা ইঞ্জিঃ জাকির ও গৃহকত্রী জেসি গ্রেফতার

image

You must need to login..!

Description

বিএমটিভি নিউজ ডেস্কঃ  লাগেজের আইডেন্টিটি সুত্র ধরে ময়মনসিংহে সাবিনা হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পিবিআই। গৃহকর্তা ও গৃহকত্রীর বেদম প্রহারে গৃহকর্মী সাবিনার (২০) মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় দীর্ঘ আড়াই মাসেরও বেশী সময় পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ময়মনসিংহ গৃহকর্তা ও গৃহকর্তীকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত গৃহকর্তা ইঞ্জিনিয়ার আবুল খায়ের মোঃ জাকির হোসেন ওরফে সোহাগ বৃহস্পতিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে। নগরীর গঙ্গাদাস গুহরোডের তৈমুর টাওয়ারে এই হত্যাকান্ড ঘটে। এর আগে পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক আবুল কাশেম গৃহকর্তা ইঞ্জিনিয়ার আবুল খায়ের মোঃ জাকির হোসেন ওরফে সোহাগ ও তার স্ত্রী রিফাত জেসমিন জেসিকে মধ্য বাড়েরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস শুক্রবার সকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। এরই মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর কুলেস লাগেজ বন্দি লাশের হত্যা রহস্য উম্মোচন হলো।


পুলিশ সুপার আরো জানান, গত ৯ নভেম্বর ভোরে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের গঙ্গাশ্রম গ্রামের জোড়া ব্রিজের নীচে সন্দেহজনক একটি লাগেজের সন্ধান পায় কৃষক আবুল হোসেন। কিছুক্ষণের মধ্যে লাগেজটি নিয়ে কৌতুহল সৃষ্টি হলে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে গৌরীপুর থানা পুলিশ, সিআইডি ও পিবিআই দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। লাগেজে অজ্ঞাতনামা মহিলার মৃতদেহ পেয়ে ময়না তদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। এ নিয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে গৌরীপুর থানায় মামলা নং-০৮, তারিখ-০৯/১১/২০২০ রুজু হয়। থানা পুলিশ মামলাটি তদন্তকালে পিবিআই ময়মনসিংহ ১৫ নভেম্বর স্বউদ্যোগে মামলাটি অধিগ্রহণ করে।


লাশের পরিচয়, খুনী কারা তা নিয়ে তদন্তের পাশাপাশি নিহতকে সনাক্তে তার ছবি সোশাল মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়ার প্রচার করা হয়। ময়মনসিংহসহ আশপাশের জেলা সমূহে লাশের ছবি দিয়ে পোষ্টারিং করা হয়। এছাড়াও ময়মনসিংহ থেকে চলাচলকারী বাসের পিছনে পোষ্টারিং করা হয়। জব্দকৃত আলামত বারবার পরীক্ষা করা হয়।
পিবিআই আরো জানায়, পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস পুলিশ সুপারের তত্ত্বাবধানে ও দিক নির্দেশনায় তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আবুল কাশেম লাশভর্তি লাগেজটির মাঝে থাকা একটি আইডিন্টিটি চিহেৃর সুত্র ধরে নানা পর্যালোচনা ও তদন্ত শুরু করে। এরই সুত্র ধরে বুধবার রাতে মধ্য বারেরা এলাকা হতে আবুল খায়ের মোঃ জাকির হোসেন ওরফে সোহাগ এবং তার স্ত্রী রিফাত জেসমিন জেসিকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃতরা পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে গৌরীপুরের গঙ্গাশ্রম এলাকার জোড়া ব্রীজের নীচে পাওয়া লাগেজ বন্দি অজ্ঞাত লাশের পরিচয় প্রকাশ করে। তার নাম সাবিনা(২০) তার বাড়ি উজান ঘাগড়া। তার পিতার নাম সিরাজুল ইসলাম সিরু।
নিহতের পরিবারের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ জানায়, সিরাজুল ইসলাম সিরু উন্নত জীবনের আশায় তার মেয়ে সাবিনাকে নগরীর গঙ্গাদাস গুহ রোডের তৈমুর টাওয়ারে বসবাসরত মেরিন ইঞ্জিনিয়ার আবুল খায়ের মোঃ জাকির হোসেন ওরফে সোহাগ ও স্ত্রী রিফাত জেসমিন জেসি দম্পতির বাসায় ২০১৭ সালে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে দেন।
সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতিতে সাবিনার নেমে আসত শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন। বন্ধ করে দেয় বাবা মায়ের সাথে দেখা ও কথা বলার সুযোগ। গৃহকত্রীর অমানষিক নির্যাতনে তিলে তিলে শরীর শীর্ণকায় হয়ে যায় সাবিনার। গ্রেফতারকৃত ইঞ্জিনিয়ার আবুল খায়ের মোঃ জাকির হোসেন ওরফে সোহাগ ও স্ত্রী রিফাত জেসমিন জেসির বরাত দিয়ে পুলিশ আরো জানায়, গত ৮ নভেম্বর গৃহকর্তা জাকির হোসেন ও তার স্ত্রী জেসি’র অমানষিক শারীরিক নির্যাতনে সাবিনার জীবন প্রদীপ নিভে যায়। পরে সাবিনার মৃতদেহ লুকানোর পরিকল্পনা করতে থাকে ঐ দম্পতি। পরিকল্পনা মোতাবেক জাকির হোসেন ঐ দিন সন্ধ্যায় তার ফ্লাটের স্টোর রুম থেকে চটের বস্তা এবং তার মালিকানাধীন পাশ্ববর্তী নির্মাণাধীন প্লাট থেকে ৫ টি ইট সংগ্রহ করে। এছাড়া বেডরুমের বারান্দা ব্যবহৃত পুরাতন ১টি বড় লাগেজ বের করে। এ দম্পতি প্রথমে বস্তার ভিতরে সাবিনার মৃতদেহ ও ৫ টি ইট ভরে বস্তার মুখ বন্ধ করে লাশ ভর্তি বস্তাটি লাগেজে ঢুকান। পরে ঐ দম্পতি মিলে সাবিনার মৃতদেহ তাদের গাড়ীর পিছনের ডালাতে ভরে রাত পৌনে ১০টার দিকে গৌরীপুরের গঙ্গাশ্রম এলাকার জোড়া ব্রীজের নীচে পানিতে ফেলে দেয়।
গ্রেফতারকৃত জাকির হোসেন ও তার স্ত্রী জেসিকে বৃহস্পতিবার ২৮ জানুয়ারী আদালতে পাঠিয়েছে পিবিআই। এর মধ্যে জাকির হোসেন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এরই মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর কুলেস লাগেজ বন্দি লাশের হত্যা রহস্য উম্মোচন হলো। গ্রেফতারকৃত ইঞ্জিনিয়ার জাকির ও স্ত্রী জেসি দম্পতির বিরুদ্ধে কাজের মেয়েকে নানাভাবে শারিরীক ও মানষিক নির্যাতনে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
নিহতের পিতা সিরাজুল ইসলাম সিরু বলেন, অভাবের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে মেয়ে সাবিনার লেখাপড়াবন্ধ করে দেন। সামান্য সুখ শান্তির  আশায় ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়া আমার মেয়ে সাবিনাকে তৈমুর টাওয়ারের ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন ও তার স্ত্রী জেসির বাসায় ২০১৭ সালে কাজে দেই। এর পর আমার মেয়ের সাথে একবার মাত্র কথা হয়েছে। মেয়ের সাথে দেখা করতেও দিত না। বার বার আকুতি করেও মেয়ের দেখা পাইনি। গত ১০/১২দিন আগে ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন আমাকে ফোনে বলে আপনি নাকি অসুস্থ্য তাই একটু দেখা করে কিছু টাকা নিয়ে চিকিৎসা করুন। আমি টাকা নেইনি। তিনি আরো বলেন, বৃহস্পতিবার আমার বাড়িতে পুলিশ যায় এবং আপনার মেয়ে সাবিনাকে হত্যা করা হয়েছে। খুনীচক্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে আমি জানতাম না আমার মেয়ে সাবিনাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তিনি তার মেয়ে হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি দাবী করেছেন। নিহতের মা অহিদা অনেকটা ভারসাম্যহীন। তিনি হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আবুল কাশেম বলেন, নিহতের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। এছাড়া এ হত্যাকান্ডের সাথে আরো কেউ জড়িত রয়েছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে। জড়িত অন্যান্যদের সনাক্তকরণসহ তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্ঠা চলছে।

প্রধান সম্পাদকঃ
মতিউল আলম

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
মাকসুদা আক্তার