চিকিৎসকের অবহেলায় শিশু সাজ্জাদের মৃত্যুর সাড়ে ৪মাস পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন

image

You must need to login..!

Description

বিএমটিভি নিউজ ডেস্কঃ ময়মনসিংহ নগরীর রেজিয়া ক্লিনিকে চিকিৎসকের অবহেলায় সাত বছরের শিশু সাজ্জাদ হোসেন মৃত্যুর সাড়ে চারমাস পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়েছে।

সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারী) বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার ৬ নম্বর চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নের চর লক্ষীপুর গ্রামের চর লক্ষীপুর কাছিমুল উলুম মাদ্রাসার কবরস্থান থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাত হোসেনের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করা হয়।

এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর আবুল কাশেমসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
লাশ দেখতে স্থানীয় এলাকাবাসী জড়ো হয়। নিহত শিশুর মায়ের কান্নাকাটিতে হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর আবুল কাশেম, গত বছরের ১ অক্টোবর সাজ্জাদের এপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা হলে নগরীর চরপাড়ার ব্রাহ্মপল্লী এলাকার রেজিয়া ক্লিনিকে অপারেশ হয়। পরদিন সকালে সাজ্জাদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। সেখানে সাজ্জাদকে ভর্তি করা হলে কিছুক্ষণ পরেই সে মারা যায়।

এ ঘটনায় রেজিয়া ক্লিনিকের পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান ও তার স্ত্রী ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাবিনা ইয়াসমিন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জন ডিসি বর্মণ ও এনেসথেসিয়ার চিকিৎসক টিকে সাহা এবং প্রীতি রঞ্জন রায়কে আসামী করে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ দাখিল করেন নিহতের মা আনোয়ারা বেগম।

আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে ১৫ ডিসেম্বর লাশ উত্তোলনের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের নির্দেশ দেন। ২ ফেব্রুয়ারী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ হলে আজ সোমবার লাশ উত্তোলন করা হয় ময়নাতদন্তের জন্য। অচিরেই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আদালতে জমা দেয়া হবে।

সুষ্ঠ বিচার থেকে যেন কোন ভাবেই শিশুটির পরিবার বঞ্চিত না সে বিষয়টি মাথায় রেখে মামলার তদন্ত কাজ সম্পূর্ণ করার কথা জানিয়েছেন আবুল কাশেম।

এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাত হোসেন বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেই নির্দেশেই লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। পরবর্তীতে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ধারন করে পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন পেশ করবেন। ময়নাতদন্ত শেষ হলে পুনরায় লাশ একই জায়গাতে দাফন করা হবে।

নিহত শিশুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ১ অক্টোবর সাজ্জাদের এপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা উঠলে নগরীর চরপাড়ার ব্রাহ্মপল্লী ক্লিনিকের মালিক হাসানুজ্জামান তার ক্লিনিকে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। ভর্তি হওয়ার পরপরেই রাতে অপারেশন করতে ১৩ হাজার টাকা লাগবে বলে জানায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। পরে ৯ হাজার টাকা জমা দিলে তাড়াহুড়া করে ডাক্তাররা অপারেশন করে চলে যায়।

মধ্যরাতে ছেলের শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তখন ক্লিনিকের লোকজনের সহযোগিতা চাইলে কেউ তাদের সহযোগিতা করেনি। ছেলের খারাপ অবস্থার জন্য তারা কোন দায়ভার নিবে না বলে ভোররাতে কর্তৃপক্ষ তাদের ক্লিনিক থেকে বের করে দেয়। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাজ্জাদকে ভর্তি করার কিছুক্ষণ পরেই সে মারা যায়।

সাজ্জাদ জন্মের কিছুদিন পরেই তার বাবা মারা গেছে। দুই সন্তান নিয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চলতো। চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলায় সাজ্জাদ মারা গেলেও এখনি কোন বিচার পায়নি। আল্লাই ভালো যানে কোনদিন বিচার পাব কিনা।

স্থানীয় আবুল কালাম বলেন, নিহত শিশু সাজ্জাদ চর লক্ষীপুর গ্রামের মৃত চান মিয়ার ছেলে। গরীবের কেউ নেই এর বড় প্রমাণ হলো সাজ্জাদ মারা যাওয়ার পর। যাদের অবহেলায় ছেলেটা মারা গেল তারা শান্তনার বদলে হুমকী দিচ্ছে মামলা তুলে নিতে। এতো বড় অন্যায় কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমাদের দাবি ঘটনার সুষ্ঠ বিচার হোক।

রেজিয়া ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, অপারেশন করলে রোগী মারা যেতেই পারে। এ নিয়ে কারো সাথে আপোস নয়। আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই মোকাবিলা করা হবে।

প্রধান সম্পাদকঃ
মতিউল আলম

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
মাকসুদা আক্তার