এনায়েতুর রহমান, ফুলবাড়ীয়া থেকে : অভাবে যাদের দু’বেলা ভাত ঠিকমতো জুটছে না, দরিদ্র অসহায় অবস্থা যাদের গাছ তলায় ঠাঁই হয়েছে, অন্নের সংস্থানে তাদের জীবন যখন থমকে দাঁড়াচ্ছে। তখন সেই অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন মিত্র ফাউন্ডেশন ।
স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বলতে ভিটেমাটির পৌনে দুই শতক জমি ছাড়া কিছুই নাই, সংসার জীবনেও নি:সন্তান। পলিথিন মোড়ানো ঘরে রাতের ঘুম তাদের। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে গায়ে। পাঁচ বছর ঘুরেছেন চেয়ারম্যানে মেম্বারের দ্বারে দ্বারে পায়নি সরকারের দেয়া একটি ঘর। শ্রমিকের কাজের পাশাপাশি ফেরি করে আইসক্রিম বিক্রিও করেছে। সরকারী সুবিধা বলতে ১৫ টাকা কেজি দরের চাউলের একটা কার্ড আছে। তাও আবার বাড়ি পর্যন্ত আনতে ভ্যানভাড়া খরচ হয় প্রায় ১শ টাকা। উপজেলার পুটিজানা ইউনিয়নের কালাচর চক বেড়িবাড়ী গ্রামের নিঃসন্তান আ. গফুর (৬০) দম্পত্তি। তিনি আরও জানান, তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৪টি টিউমার হয়েছিল অপারেশন করতে অনেক টাকা লাগে। তাই আর করা হয়নি।
গত রমজান মাসে ‘মিত্র ফাউন্ডেশন’ এর ঈদ সামগ্রী নেয়ার জন্য শিবগঞ্জ বাজারে গিয়েছিলেন আ. গফুর এর স্ত্রী হাজেরা খাতুন। সেখানে তিনি খুপড়ি ঘরে থাকা অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছিলেন উদ্যমী যুবকদের। অসহায় পরিবারের খোঁজ খবর নিয়ে ঘর প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যুবকরা।
স্থানীয় প্রতিবেশী জহির জানান, তারা দু’জন প্রায়ই অসুস্থ্য থাকেন, একজন ভালো হলে অন্যজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। টানাপোড়ার সংসার। খোঁজ খবর রাখার কেউ নেই। স্থায়ী একটা আয়ের উৎস হলে, কোনমতে জীবনটা পার করতে পারতো। যেমন একটা গাভী। সেটা লালন পালন করলে প্রতিদিন দুধ বিক্রি করে আয়ের টাকা পরিবারের ভরন পোষন করা সহজ হতো।
সংগঠনের সকলেই উপস্থিত থেকে মিস্ত্রিদের সাথে কাজে যোগ দেয়। কাজ শেষ করে অসহায় পরিবারের হাতে ঘরের চাবি বুঝিয়ে দেয় সংগঠনের সদস্যরা।
১৬ ফুট টিনসেট ঘরটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নতমানের টিন। দু চালা ঘরের ২টি জানালা রাখা হয়েছে। থাকার জন্য একটি চৌকি প্রদান করা হয়েছে। নতুন ঘর পেয়ে অনেক খুশি আ. গফুর দম্পত্তি। আজকে অনেক আরামে ঘুমানোর কথা জানান তারা।
মিত্র ফাউন্ডেশনের সভাপতি শিবায়ন চক্রবর্তী জানান, ‘মানুষ মানুষের জন্য’ মুল মন্ত্রকে বুকে ধারণ করে সমাজের অসহায়, হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা সমস্যা সমাধানে সমাজের জনহিতৈষি মানবিক মানুষদের সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। হতদরিদ্র, গৃহহীন আঃ গফুরকে একটি ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি। আজ তাঁর ঘরে বৃষ্টির পানি পড়বে না, নির্ঘুম রাত কাটাতে হবেনা। মিত্র ফাউন্ডেশনের প্রত্যেক সদস্য বিশ্বাস করে সমাজের বিত্তবান মানুষেরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে সকলের প্রচেষ্টায় সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ এগিয়ে যাবে দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে আর আমাদের দেশটা সত্যিকারের সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হবে।