অনলাইন জুয়ায় সর্বস্বান্ত যুবকরা, পর্দার আড়ালে জুয়াড়িরা,  মূল হোতারা জিরো থেকে হীরো

অনলাইন জুয়ায় সর্বস্বান্ত যুবকরা, পর্দার আড়ালে জুয়াড়িরা,  মূল হোতারা জিরো থেকে হীরো

July 30, 2025 4 Views

এফ আই সুমন, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

স্টার সেভেন্টি ফাইভসহ বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটে আসক্ত হয়ে সর্বস্বান্ত যুবকেরা। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ জড়িয়ে পরেছে এই নেশায়। জুয়ার ‘ভার্চুয়াল বিষ’ ছড়িয়ে পড়ছে শ্রমজীবী মানুষের মাঝেও। সর্বস্ব খুইয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেকেই। জুয়ার নেশা অশান্তি-কলহের পাশাপাশি অনেক পরিবারকে বিপন্ন করে তুলছে। তবে অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ হলেও এনিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা চোখে পড়ার মতো নয়। ফলে ঝুটঝামেলা ছাড়াই তরুণরা বাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসেই জুয়া চালিয়ে যাচ্ছে। পর্দার আড়ালে বসে গ্রেফতার এড়াতে নতুন কৌশল নিয়েছে জুয়াড়িরা।

জানা যায়, মোবাইল ফোনের বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা জুড়ে অনলাইন জুয়া ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ এতে আসক্ত হচ্ছে। ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহর থেকে শুরু করে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে এই জুয়া বিস্তার লাভ করেছে। সহজে প্রচুর টাকা উপার্জনের লোভে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের অসংখ্য মানুষ এই জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছে। তরুণদের অনেকেই কৌতুহলবশত এই খেলা শুরুর পর নেশায় পড়ে যাচ্ছেন। প্রথমে লাভবান হয়ে পরবর্তী সময়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। আবার মূল হোতারা হচ্ছেন জিরো থেকে হীরো।

জানা যায়, স্টার সেভেন্টি ফাইভ নামে একটি জুয়ার সাইট ঈশ্বরগঞ্জ সহ আশপাশের উপজেলা গুলোতে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষ অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। এসব মানুষেরা স্টার সেভেন্টি ফাইভসহ বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটে নিয়মিত জুয়া খেলে। আর এসব নিয়ন্ত্রণ করা হয় দুবাই থেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনলাইন জুয়ায় সর্বস্বান্ত একজন বলেন, ঈশ্বরগঞ্জের এক ক্যাসিনো সম্রাট দুবাই বসে এসব নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি তার লোকদের গ্রেপ্তার ঠেকাতে স্টার সেভেন্টি ফাইভ’ নামে একটি নতুন সাইট বানিয়েছেন। যা চালাতে কোন লোক লাগে না, অটোমেটিক নিয়ন্ত্রণ হয়। জুয়ার ‘ভার্চুয়াল বিষ’ ঈশ্বরগঞ্জে ওই ক্যাসিনো সম্রাটই ছড়িয়েছেন। সেই ক্যাসিনো সম্রাটেরর নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে এই মুহুর্তে আমি তার নাম বলতে পারবো না। তবে সেই ক্যাসিনো সম্রাটকে নিয়ে শুধু ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নয় বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা জুড়ে চলছে পুরোদমে আলোচনা-সমালোচনা। ওই ক্যাসিনো সম্রাট কয়েক বছর আগে থেকেই ঈশ্বরগঞ্জ সহ আশপাশের এলাকায় অনলাইন জুয়া পরিচালনা করে আসছে। তার পরিচালিত এজেন্টদের দিয়েই জুয়ার ব্যবসা পরিচালনা করতো সে। তার এজেন্টরা বর্তমানে জিরো থেকে হীরো হয়ে গেছে। কোটি কোটি টাকা কামাই করে রাতারাতি চালা ঘর থেকে এখন অট্রালিকার মালিক হয়ে গেছে। তারা এখন বিভিন্ন কৌশলে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়ে অন্য রূপ ধরেছে। তাই বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি দেওয়ার জন্য জোর দাবি আমিসহ ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সকল স্তরের  মানুষের। এই মুহূর্তে যদি আইনশৃংখলা বাহিনী এমন ক্যাসিনো সম্রাট বা তার এজেন্টদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে ঈশ্বরগঞ্জ নয় পুরো ময়মনসিংহ জেলার কিশোর ও যুব সমাজ ধ্বংস করে দিবে। তাই তারা ক্যাসিনো সম্রাটকে সহ তার এজেন্টদের আইনের আওতায় এনে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী এবং যুব সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচার জোর দাবি জানান তিনি।

এবিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ওবায়দুর রহমান বলেন, আমি যোগদানের পর এবিষয়ে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। অনেক জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতেও পাঠানো হয়েছে। অপরাধী যতই চালাক আর নতুন কৌশল অবলম্বন করুক না কেন অনলাইনে জুয়া বন্ধে ঈশ্বরগঞ্জ থানা-পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সাম্প্রতিক