You must need to login..!
Description
আশরাফুল ইসলাম,
আনতারা মোকারমা আনিকা। যেন ঝলমলে তারুণ্যের প্রতীক। গানপাগল ১৮ বছরের এই তরুণী সরব ছিল কিশোরগঞ্জের সংস্কৃতি অঙ্গণে। ফেসবুকে তার ইন্ট্রোও ছিল গানকেন্দ্রীক- ‘আমি গান গাইতে ভালোবাসি, গান দিয়ে জীবনের সব কষ্ট-দুঃখ ভুলতে চাই’।
জেলা শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম যেখান থেকেই আমন্ত্রণ আসতো, পাগলের মতোই সেখানে ছুটে যেতো। অনুষ্ঠান-কনসার্ট মাতাতো তার দরদী কণ্ঠের গান দিয়ে।হালের ক্রেজ ফেসবুক লাইভেও গাইতে দেখা যেতো তাকে। নিজের গাওয়া গান দিয়ে সাজিয়েছিল একটি ইউটিউব চ্যানেল। এসব কারণে কিশোরগঞ্জের শিল্প-সংস্কৃতির ভুবনে আনতারা মোকারমা ছিল এক পরিচিত ও প্রিয় নাম।
শুক্রবার (৯ অক্টোবর) সকালে এক দুর্ঘটনায় গানপাগল এই তরুণীর কণ্ঠ থেমে গেছে চির দিনের জন্য। পাখির মতো উড়াল দিয়ে সে চলে গেছে দূর-বহুদূর, যেখান থেকে ইচ্ছে করলেই আর ফিরে আসা যায় না। কষ্ট-দুঃখ ভুলতে আর গান গাইবে না আনতারা!
পারিবারিক প্রয়োজনে মা-খালার সাথে ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল আনতারা মোকারমার। মা আসমা বেগমকে সাথে নিয়ে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে যখন কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনে পৌঁছে তখন আন্তঃনগর এগারোসিন্দুর এক্সপ্রেস হুইসেল বাজিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলতে শুরু করেছে।মাকে নিয়ে ট্রেনটিতে ওঠতে দৌড় শুরু করে আনতারা। এক পর্যায়ে ট্রেনটির নির্ধারিত কম্পার্টমেন্টের নাগাল পেলেও ওঠতে গিয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে চলে যায় আনতারার দু’পা। মুহুর্তেই আনতারা দেহ ছিন্ন-ভিন্ন হয় ট্রেনের চাকায়। ঘটনাস্থলেই ছিন্ন-ভিন্ন নিথর দেহ ফেলে রেখে প্রাণপাখি উড়ে যায় তার।
উদীয়মান কণ্ঠশিল্পী আনতারা মোকারমার এমন মৃত্যুতে কাঁদছে তার বন্ধু-স্বজন। ফেসবুকের ওয়ালে ওয়ালে তার জন্য শোকগাঁথা।
নিহত আনতারা মোকারমা আনিকা কিশোরগঞ্জ শহরের বত্রিশ পানির ট্যাংকি এলাকার মোকাম্মেল হকের মেয়ে। লেখাপড়া আর গানচর্চার জন্য বসবাস করতো শহরের খরমপট্টি এলাকায়।
শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে এবছর বাণিজ্য বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল তার। করোনার কারণে অটোপাসের সরকারি ঘোষণা আসার পর এলএলবিতে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমনই সময় ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি।
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানার ওসি আব্দুর রহমান বিশ্বাস জানান, শুক্রবার (৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টায় কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনের প্লাটফরম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে আন্তঃনগর এগারোসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যাচ্ছিল।
প্লাটফরম অতিক্রম করার মুহূর্তে চলন্ত ট্রেনটিতে মাকে নিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিল আনতারা। কিন্তু ওঠতে গিয়ে ট্রেনের গতির সাথে তাল মেলাতে না পারায় তার দু’পা ট্রেনের নিচে চলে যায়। এতে তার পুরো শরীর কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নিজের সামনে মেয়ের এমন মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন মা আসমা বেগম।
শহরের বত্রিশ পানির ট্যাংকি এলাকার বাসায় লাশ নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে কান্নার রোল পড়ে যায়। স্বজন আর বন্ধুবান্ধবদের কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে পরিবেশ।