স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ
ময়মনসিংহে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শাহাদাত হোসেন খান হিলু মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি এক কন্যা ও স্ত্রী আত্মীয়স্বজনসহ অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুর খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ সর্ব স্তরে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাকে একনজর দেখার জন্য আত্মীয়-স্বজনসহ শতশত হাসপাতাল ও বাসায় মানুষ ভীড় জমায়।
শাহাদাত হোসেন খান হিলু নগরীর আকুয়া এলাকার মরহুম অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন খানের ছেলে। তিনি ময়মনসিংহ সদর-৪ আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান দুলুর বড় ভাই।ময়মনসিংহ সংগীত বিদ্যালয়ের পরিচালক সাংবাদিক নজীব আশরাফ বলেন, শাহাদাত হোসেন খান হিলু কিডনি সমস্যাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। সম্প্রতি তিনি বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে মারা যান। বৃহস্পতিবার বাদ এশা ময়মনসিংহ জিলা স্কুল মাঠে জানাজা শেষে তাকে গোলকিবাড়ি গোরস্থানে দাফন করা হয়।শাহাদাত হোসেন খান হিলু বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য, আইটিআই বাংলাদেশের প্রতিনিধি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির সভাপতি, ময়মনসিংহ থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক, নাট্যকার, কবি, অভিনেতা, নির্দেশক, সংগঠক ও ময়মনসিংহ বহুরূপী নাট্য সংস্থার সদস্যসচিব ছিলেন। সাংস্কৃতিক সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শোক প্রকাশ করে মরহুমের আত্মার জন্য মাগফেরাত কামনা করেন।মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মরহুম হীলুকে বেহেশতের সর্বোচ্চ আসনে আসীন করুন। ময়মনসিংহ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের পরিচালক নজীব আশরাফ বলেন, নাট্যজন হিলু ভাইয়ের মৃত্যুতে ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে পূরণ হবে না।
নাট্যকার. নির্দেশক সারেং থিয়েটার ও লেখক নিজাম মল্লিক নিঝু তার ফেইসবুকে লিখেছেন, শাহাদাত হোসেন খান হীলু। একটি দেশবরেণ্য নাম। আজ থেকে নামটা বুকের ভেতর চলে গেলো। সবকিছু ছাপিয়েও তিনি ছিলেন একজন গিটারিস্ট এবং চিত্রশিল্পী। অনেক অর্জনের পরও আমি মনে করি তার একটি বিশাল অর্জন ছিলো বিশাল ক্যানভাসে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে মঞ্চায়িত শাহাদাত হোসেন খান হীলুর মঞ্চনাটক ব্রহ্মপুত্র কাঁদে নাটকটি। আজ থেকে তিনি নেই। সবাই তাকে নীড নামের সাথে ভাই যোগ করে বলতেন হীলু ভাই। হীলু ভাই কি ওপার থেকে দেখছেন ? আজ তো ব্রহ্মপুত্রই কাঁদছেনা। সকল নাট্যকর্মি থেকে নাট্যবোদ্ধা নাট্যপিপাসু নাট্যদর্শকরাও কাঁদছেন। কেউ লুকিয়ে- চাপিয়ে কেউ আড়লে-আবডালে আর কারোর হ্নদপিন্জরে সৃষ্টি হয়েছে গভীর ক্ষত।মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হীলু ভাইকে বেহেশতের সর্বোচ্চ আসনে আসীন করুন।
সিরাজুল ইসলাম তার ফেসবুকে লিখেছেন শাহাদাত হোসেন খান হিলু ছিলেন নাটক পাগল মানুষ বলতে যা বুঝায়।ময়মনসিংহ শহরের প্রাচীনতম নাট্য সংস্থার মধ্যে অন্যতম বহুরুপী নাট্য সংস্থা এই প্রতিষ্ঠানের সচিব হিসেবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন।উনার লেখা ও নির্দেশনায় বহু নাটক দেশে বিদেশে প্রচারিত হয়েছে।সর্বজনের কাছে গ্রহনযোগ্য একজন মানুষ ছিলেন। কোন অহংকার ছিল না উনার ভিতর।আপাদমস্তক একজন সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বের অধিকারি কিংবদন্তি মানুষ ছিলেন। উনার মৃত্যুতে ময়মনসিংহ বাসী তথা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অংগনে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।ময়মনসিংহ বাসি আরেকজন হিলু ভাই পাবে কিনা সন্দেহ আছে। স্বাধীনতার পর ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক অংগনের যে কয়জন ময়মনসিংহ কে সাংস্কৃতিক নগরীতে পরিনত করেছেন তাহাদের মধ্যে হিলু ভাই অন্যতম।বছর দুইয়েক আগে গুটিকয়েক সাংস্কৃতিক নামধারী উনাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সাংস্কৃতিক অংগন থেকে দুরে রাখতে চেয়েছিল রাখে আল্লাহ মারে কে সাংস্কৃতিক অংগনের সাধারণ মানুষই উনার অবস্থান ঠিক করে দিয়েছেন।হিলু ভাই যে সাধারণ মানুষের কত আপন ছিলেন জিলাস্কুল মাঠে আজকের জানাজা তার প্রমাণ। আল্লাহ আমাদের হিলুভাইকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মর্যাদা দান করুন পরিবারের তথা ময়মনসিংহ বাসিকে এই শোক সহিবার শক্তি দান করুণ আমিন।
মতিউল আলম