
You must need to login..!
Description
এনামুল হক, প্রতিবেদকঃ
নানা প্রজাতির, নানা নামের দেশি ও বিদেশি বিড়ালের ব্যতিক্রমী মেলা বসেছিল শনিবার সকালে ময়মনসিংহ নগরের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে জয়নুল আবেদিন বৈশাখী মঞ্চে। কোনটির চোখে চশমা, কোনটির মুখে মেকআপ, আবার কোনটির কপালে টিপ, শরীরে রঙ্গীন পোশাক পড়ে নানা ঢঙ্গে হাটছিলো তারা মঞ্চের লাল গালিচায়। আর এদের এ রঙ্গ ঢঙ্গ দেখতে বিড়াল প্রেমিদের পাশাপাশি মেলায় ভিড় করেছিলো অসংখ্য দর্শক।‘প্রফেসরস পেট কেয়ার’ নামের একটি সংগঠন এ মেলার আয়োজন করে। মেলার নাম দেন ‘ক্যাট শো’।
প্রফেসরস পেট কেয়ারের পরিচালক এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. মাহমুদুল আলম সাংবাদিকদের জানান, বিড়ালের সংখ্যা দেশে দিন দিন বাড়ছে। বিড়াল শুধু প্রাণীই না, এটি পরিবারের সদস্যও। এই সদস্যকে নিয়ে এখন মানুষ সময় কাটায়।বিড়াল প্রেমিকদের এক ছাতার নিচে আনার জন্যই আমাদের এই আয়োজনের উদ্দেশ্য।
তিনি আরও জানান, এখানে বিড়ালের ভ্যাকসিনেশন, বিড়ালকে নিয়ে বিভিন্ন ইভেন্ট, তার মধ্যে ক্যাটওয়াক, বেস্ট ক্যাট সিলেকশন, বিড়ালের ফ্রি হেলথ চেকআপ, বিড়ালের লালন পালন ও রোগবালাই ইত্যাদি সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয়।
মাহমুদুল আলম আরও বলেন, বর্তমানে ময়মনসিংহ শহরে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বিড়াল লালন পালন করেন। শুধু লালনপালন করলেই হবে না, এর যত্ন, রোগবালাই ও ঝুঁকি সম্পর্কে জানানোর জন্যই আমাদের এ আয়োজন।
মেলা শুরুর অনেক আগেই নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাজানো বিড়াল নিয়ে হাজির হন বিড়ালপ্রেমীরা। বিড়ালগুলো নিয়ে মালিকেরা চেয়ারে বসে থাকেন, আদর করেন৷ ২০২৩ সালে প্রথমবার একটি সংগঠন ক্যাট শো করেছিল একই স্থানে। দ্বিতীয়বারের এই আয়োজনে কোকো, মিমি, মুলু, প্রিটি, ব্রাউনি, সিম্বি, জ্যাকসো, জোজো, পরী, মারলী, মিঠি, ইমু, লিও, জলিসহ নানা নামের বিড়াল অংশ নেয়। যেমন খুশি তেমন সাজ, প্রদর্শনী ও র্যাম্প শোতে অংশ নেয় ১৩০টি বিড়াল।
নগরের নতুন বাজার এলাকার গৃহিণী শাহানাজ মাইফুল নিজের ছেলে আফিদ আমিন চৌধুরীকে নিয়ে মেলায় আসেন। পার্সিয়ান জাতের দুটি বিড়াল ছিল তাদের দুজনের হাতে। বিড়ালের শরীরে ছিল বর্ণিল পোশাক, চোখে ছিল চশমা। একটির নাম মুলু ও অন্যটি প্রিটি।
আফিদ আমিন চৌধুরী বলেন, বাসায় বিড়ালগুলো আমাদের ভাইবোনের মতো। বাবা-মা আমাদের যেমন কেয়ার করে, তাদেরও তেমনি কেয়ার করে। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে সময় কাটাই বিড়ালের সঙ্গে। মুঠোফোনে গেম খেলার চেয়ে বিড়ালের সঙ্গে খেলা করা অনেক ভালো। মুরগির মাংস, মাছ ও ক্যাট ফুড খেতে দেওয়া হয়।শাহানাজ মাইফুল বলেন, ‘বিড়ালকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসি। নাম ধরে ডাকলেই সাড়া দেয়। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিড়ালের জন্মদিন উদ্যাপন করি। জন্মদিন উপলক্ষে আলাদা করে মাছ বা মুরগি কাটা হয়। বিড়াল বাসায় থাকলে সুন্দর সময় কাটে, ডিপ্রেশন লাগে না। বিড়ালকে রোগমুক্ত রাখতে নিয়মিত চেকআপ করা হয়।’
শিক্ষক মাহমুদা হোসেন তার মেয়ে মাধুর্য মাহজাবিনকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের দুটি শখের বিড়াল নিয়ে এসেছেন। একটির নাম ব্রাউনি, অপরটির সিম্বি। দুটিই পার্সিয়ান প্রজাতির। মাহমুদা হোসেন বলেন, ‘আমার দুটি বিড়ালের একটি নারী ও একটি পুরুষ। বিড়ালগুলোর যখন দুই মাস বয়স, তখন থেকে লালন-পালন করছি। সংসার ও চাকরির পাশাপাশি বিড়ালের সঙ্গে আমার খুব ভালো সময় কাটে।
নগরীর কালীবাড়ি রোডের এই তরুণী আফরিন একটি মিক্সড জাতের বিড়াল ৯ মাস ধরে লালন পালন করছেন। নাম দিয়েছেন লিও। তিনি বলেন, ‘বিড়াল কাছে থাকলে মন খারাপ হয় না। বিড়ালটা এখন পরিবারের অংশ হয়ে গেছে।’
সিম্বা নামের একটি বিড়াল রয়েছে স্বর্ণালী সরকারের। কপালে লাল টিপ পরা। স্বর্ণালী সরকার বলেন, ‘প্রায় সময় আমি একা থাকি। সঙ্গে বিড়াল থাকলে খুব ভালো লাগে, একাকিত্ব দূর হয়। তিনি বলেন, এ ধরনের আয়োজন বিড়ালপ্রেমীদের উৎসাহিত করবে।
দর্শনার্থী কামাল হোসেন বলেন, জয়নুল আবেদিন উদ্যানে ঘুরতে এসে ক্যাট শোর ব্যানার দেখে এখানে এসে দেখি নানা জাতের বিড়াল। সত্যি মুগ্ধ হওয়ার মতো।