চলে গেলেন দেশবরেণ্য সংগীত শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী

image

You must need to login..!

Description

: মিয়া সালাহউদ্দিন,

মানুষের চলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। জন্মালে মৃত্যু হবেই। কবির ভাষায় ‘প্রতিদিন মৃত্যু মৃত্যু খেলা করে। সবাই চলে যাবো এই প্রকৃতি ছেড়ে। মানুষের কোলাহল আর শুনতে পাবো না। শুধু পড়ে থাকবে স্মৃতিমাখা জীবন।’ আজ ভোরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে বরেণ্য শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্নাহ লিল্লাহি ওয়া ইন্নাহ ইলাইহি রাজিউন) মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। ১৯৩৬ সালে ভারতের কুচবিহারে বলরামপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তারপর পিতা বরেণ্য শিল্পী আব্বাসউদ্দিন আহমেদের পরম স্নেহ-মমতায় বেড়ে ওঠেন। গান শিখিয়েছেন বাবা। ১৯৫৬ সালে টেলিভিশনে ও ১৯৬৪ সালে বেতারে গান গাওয়া শুরু করেন। বিটিভিতে “আমার ঠিকানা” ও বাংলাদেশ বেতার ঢাকা কেন্দ্রের জনপ্রিয় দর্পণ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে দীর্ঘদিন “প্রাণের গীত” নামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন। আমার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল শ্রদ্ধা, স্নেহ ও ভালোবাসার। বেতারে তিনি অনুষ্ঠানের পর আমার কাছে আসতেন। একান্ত অনেক কথা হতো ডিউটি রুমে। আমি তাঁর কাছে বসে বসে সেই কথাগুলো প্রাণভরে শুনতাম। গান গেয়ে বেড়ে ওঠা, পরিবারের কথা, শিল্পী জীবনের কথা। একদিন বললেন, ভিওএর আবদুল হাই খানের কথা মনে আছে তোমার? হাই খানের টেলিফোন নম্বরটি দাও। আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলবো। আমি একসময় ভিওএর ঢাকায় আমেরিকান কালচারাল সেন্টারের ভিওএর স্টুডিওতে কাজ করতাম। তখন ভিওএতে তাঁর অনেক গান ও অনুষ্ঠান রেকর্ড করা হয়। এখানে একটি কথা না বললেই নয়। ৫০-এর দশকের দিকে ভিওএর বাংলা বিভাগের প্রচার কার্যক্রম চালু হয়। তখন বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ। ঢাকায় ছিলেন রেডিও ব্যক্তিত্ব সাইদ সিদ্দিকী ও আবদুল হাই খান। ওই সময়ে আমাদের দেশে রেডিও ছাড়া প্রচারের কিছুই ছিল না। বিটিভি থাকলেও এ দেশের শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদদের একমাত্র ভরসা ছিল রেডিও। ঠিক তখনই ভিওএ রেকর্ড করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ওয়াশিংটনে প্রচারের জন্য পাঠাত। বাংলা ভাষা প্রচারে এই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের সাফল্যের পর ঢাকায় আদমজী কোর্টের আমেরিকান দূতাবাসের বাঙালি কর্মকর্তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ শুরু করেন। আমাদের স্বাধীনতার জন্য আমেরিকার জনগণের অবদান আছে তা আমরা জানি। রংপুর অঞ্চলের পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া ও পালাগান, কবিগান অত্যন্ত জনপ্রিয়। এসব অঞ্চলের মানুষ এই গানগুলো তাদের শ্রোতা মন নিয়ে শুনে থাকেন। শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী সেখানে ভাওয়াইয়া গানের জন্য একাডেমি খুলেছিলেন। বহু ছাত্র-ছাত্রী এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগ্রহণ করছে। আর একটি কথা বলে রাখা ভালো, ৮০-এর দশকের মাঝামাঝি নাগাদ বাংলাদেশে এসেছিলেন আমেরিকার কান্ট্রি মিউজিকের অত্যন্ত জনপ্রিয় শিল্পী বাক হোয়াইট। তিনি আমাকে বলেছিলেন, আমেরিকায় কান্ট্রি মিউজিক অত্যন্ত জনপ্রিয় সংগীত। আপনি হয়তো দূরপাল্লার বাসে যাচ্ছেন, ক্যাফেতে কফি খাচ্ছেন অথবা খাবার বাড়ি পরিদর্শন করছেন সেখানে আপনি রেডিওতে কান্ট্রি মিউজিক শুনতে পারবেন। আমেরিকান রেডিওগুলো বিজ্ঞাপনের সাথে সাথে কান্ট্রি মিউজিক ব্যাপকভাবে প্রচার করে। এই শিল্পীর ইচ্ছা ছিলো জাতীয় পর্যায়ে লোকসংগীতের একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার। যাতে আমাদের দেশের মানুষ নিজস্ব সংস্কৃতিতে উদ্বুদ্ধ হয়। মুস্তাফা জামান আব্বাসীর ছয় দশকের বেশি সময় ধরে এ দেশের সংগীত জগতে সফলভাবে বিচরণ করেছেন। তিনি চিরকাল, চিরদিন বেঁচে থাকবেন আমাদের অন্তরে। আমি মহান আল্লাহ পাকের কাছে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করি।

লেখক: মিয়া সালাহউদ্দিন, কবি লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী।