You must need to login..!
Description
অসাধারণ সবগুলো কবিতা । না পড়লে অনুভব করা সম্ভব না। কবি পেশায় একজন চিকিৎসক হয়েও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৮টি অতুলনীয় কবিতা রচনা করেছেন ডাঃ তারা গোলন্দাজ । বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার ভালবাসার অনুভুতিগুলো প্রকাশ করেছে হৃদয়ের গভীর থেকে।
মধুমতীর পাড়ে জমজ জন্ম
################এইচ এ গোলন্দাজ তারা
শতবর্ষ আগে মধুমতি নদীর পাড়ে
একটি গোলাপ ফুটে ছিল
রাতের প্রথম প্রহরের শুভক্ষণে
জন্ম নেয়া গোলাপের প্রথম চিৎকারে
কেঁপে ওঠে বিষকাটালীর ঝুপ
আনন্দে আত্মহারা উদ্বাস্তু পাখি সব,
শেখ বাড়ির জায়নামাজে বসা সুফির
চিবুকের জলে জন্ম নেয়া গোলাপের সুবাস
ছড়িয়ে যায় ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে।
মধুমতি পাড়ের লকলকে কিশোরের দুঃসাহসিক সাঁতার
প্রমত্তা পদ্মার ঢেউ হাসে
খিলখিল হেসে ওঠে ধলেশ্বরী বুড়িগঙ্গা যমুনা।
কৃষকের দাঁত পড়া কাঁচিতে দাঁত উঠে
ভাটিয়ালি সুর তুলে মাঝির পুরনো নাও,
একটু একটু করে পাঁপড়ি মেলে সেই গোলাপ
যার সুবাসে আন্দোলিত মন প্রতিবাদী সুর তোলে
বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে উঠে একটি
মানচিত্র-
লাল সবুজের বাংলাদেশ।
যে আঙুল ছুঁতে ইচ্ছে করে বারবার
############# এইচ এ গোলন্দাজ তারা
হিমালয় ছুঁয়ে দেখার সাধ জাগেনি কখনো
একাত্তরে রেসকোর্স কাঁপানো সেই আঙুল
ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছা জেগেছিল মনে,
কত শক্তি ছিল সেই আঙুলের অস্থি মজ্জায় পেশিতে !
যে অঙুলি হেলনে লক্ষ-কোটি মানুষের বুকে জলোচ্ছ্বাস ডাকে সোনামি উঠে
বঙ্গোপসাগরের শান্ত নোনা জলে
বানের জলের মতো ভেসে যায় পঁচিশ বছরের বঞ্চনার ক্লেদাক্ত ইতিহাস,
সেই আঙুল ছুঁতে কার না ইচ্ছা জাগে ?
সেই ইচ্ছার মৃত্যু হয় না কোনো কালে
তাইতো মধুমতির বুকে সাঁতার দেয়ার ইচ্ছা পুষে রেখেছে মন
যেখানে সাঁতার কেটে কেটে সাহসী চোখ খুঁজে পেয়েছিল স্বাধীনতার বন্দরে নোঙর ফেলার নির্ভুল ঠিকানা,
যে আঙুলের অস্থিমজ্জার অমিয় শক্তি শোষিত মানুষের শোণির গভীরে প্রোথিত বেদনার পাহাড় খুড়ে খুড়ে জাগিয়েছিলো স্বাধীনতার মানচিত্র ;
সেই আঙুল ছুঁতে কার না ইচ্ছা জাগে ??
গোলাপ ফোটানোর দিন
##############এইচ এ গোলন্দাজ তারা
আজ কোন বিদ্বেষ নয়, নয় কোনো প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসা
আজকের দিন শুধুই ভালবাসার
শুধুই নির্ভেজাল ভালোবাসা।
আজ কারো রক্ত চাইবার দিন নয়
কাউকে অভিশাপ দেবার দিন নয়
আজকের দিনে শুধুই আনন্দ উৎসব।
মোশতাককে কাছে পেলেও আমি আজ তার টুঁটি চেপে ধরবো না
তার গায়ে জ্বালাবোনা প্রতিশোধের আগুন,
আজ এই গোলাপ ফোটার দিনে ;
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মহাকবির জন্মদিনে পাখিরা গাইবে সম্প্রীতির গান
বাংলার ঘরে ঘরে আজ একটি মুজিব থেকে লক্ষ মুজিবের মুখ
কৃষাণীর ভাতের ফেনার মতো উপচে উপচে পড়া সুখ।
একটি তর্জনী
#########এইচ এ গোলন্দাজ তারা
একটি তর্জনীর দূরন্ত আহবানে
বাংলার বুকে জাগে প্রাণহীন প্রাণ
মানুষের মুখে মুখে মুক্তির গান,
ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি জাগে ফুটন্ত লাভা
চোখের কোনে স্বপ্ন পারিজাত আভা।
একটি তর্জনীর বিকট বিস্ফোরণে
লক্ষ-কোটি চোখের জলে, জ্বলে অনল
শহর-বন্দর গায়ে মাঠে দাবানল
রণ হুংকারে মাটি কাঁপে আকাশ বাতাস
মৃত্যুপুরীতে গোলাপ ফুটে মুক্তির উল্লাস।
একটি তর্জনীর শাণিত আঘাতে
দোআঁশ মাটির বুকে বারুদের ঘাস
লক্ষ আত্মাহুতি রাত্রির অন্তিম শ্বাস
বিষন্ন বাতাস চিরে দোয়েলের শিস আসে
মায়ের চোখেমুখে লাল সবুজ সূর্য হাসে।
শোষিত মানুষের স্বপ্নপুরুষ হাজার বছরের অনুভব
অনন্ত-বেদনার মহাসাগরে বয়ে আনে মুক্তির সৌরভ
কৃষকের মুখের হাসি সোনালী ধানের ঘ্রাণ
সে তো আর কেউ নয়
মুক্তির মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান।
বিষাদময় আগস্ট
############এইচ এ গোলন্দাজ তারা
আগস্ট এলেই আমার অনুভূতির বাগানে রক্ত জবা ফুটে
বিষন্নতার পাজরে রক্তাক্ত পাখিদের ছটফটানি
বুকের বধ্যভূমিতে ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বর
হাহাকার তুলে কেঁদে উঠে বিষাদে আছন্ন সকাল
বিষন্ন নীলাচল টকটকে লাল চোখে শ্রাবণের বিলাপ।
হায় পিতা !
কাকে ভালোবেসে উজার করলে সোনালী যৌবন !
বিশ্বাসের মূল্য চুকালো বুলেটের উদ্যত চুম্বন !
যে চোখ পোড়া মাটির বুকে জন্ম দিল
সহস্র বছরের আরাধ্য সবুজ
লোবানের গন্ধে দমবদ্ধ নিঃশ্বাসে এনে দিল
পৃথিবীর সুগন্ধি বিশ্বাস
তোমার সেই বিশ্বাসী চোখের জমিনে জন্ম
নেয়া বিশ্বাসঘাতক
দোআঁশ মাটি কে আবার মনে করিয়ে দেয়
পলাশির মর্মন্তুদ ।
পিতা-
তুমি নক্ষত্রের কাছে জেনে নাও সঙ্গোপনে
তোমার উত্তরসূরীর কান্নার জল মহাসমুদ্র গর্জনে
শতসহস্র ফুল ফোটায় আজ শকুন আক্রান্ত জমিনে
কৃষক-কৃষাণী হাসে চোখে সোনালি ধানের ঘ্রাণ
মজুর কুলির কন্ঠ পাখি দোয়েল পাখির গান
খুনিদের অট্টহাসির উদ্ধত গলায় মহাকালের রেষ
তোমার স্বপ্নের বাংলা আজ বাস্তবতার বাংলাদেশ।
জাতির পিতার হাত
############এইচ এ গোলন্দাজ তারা
শরতের শুভ্র কাশবন বাতাসে দুলে
আনন্দে আত্মহারা নীলাকাশ
খন্ড খন্ড মেঘের ভেলায় অভিসার ব্রহ্মপুত্রের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস
মমতাময়ী মায়ের জন্মদিন আজ।
পাখিদের গানের সুরে উদ্বেলিত আকাশ বাতাস,
হাসিতে উদ্ভাসিত অনাহারীর চোখ
বাস্তুহীন বৃদ্ধার শতছিন্ন শাড়ি;
যার আঁচলের শীতল ছায়ায় আশ্রয় খুঁজে
পায় অবুঝ রোহিঙ্গা শিশুদের সকাল
দুরন্ত গোল্লাছুট,
যার অমিয় স্পর্শে বঞ্চিত চোখে লবণাক্ত জল হাসে,
সোনালী রোদের আলো আরো বেশি
আলোর মিছিল।
পিতা মাতা ভাই হারানো বেদনার জমিনে
অপার দক্ষতায় ফোটায় ফুল সম্প্রীতির বন্ধন,
যার সুদক্ষ জাদুর ছোঁয়ায়-
পদ্মার দুই পাড়ের মানুষের কান্নার জলে
জেগে উঠে সেতু,
ঝুলন্ত বাসে ঠান্ডায় শিথিল হাতের তালুতে
ফিরে পায় উত্তাপ,
বাংলার সৌরভ জাতির জনকের হাত
ডিজিটাল বাংলার জননী বাঙ্গালীর অহংকার।
আগস্ট-রক্তে বিষাদ সিন্ধু
################এইচ এ গোলন্দাজ তারা
আগষ্ট আমার বুকের বিষাদ শোকের শিশির বিন্দু
আগস্ট আমার চোখের জল রক্তে বিষাদ সিন্ধু ।
আগষ্ট এলেই রক্তজবায় ছেয়ে যায় বাংলার আঙিনা
পাথরের কান্নায় ফুলে ফেঁপে উঠে
পদ্মা মেঘনা যমুনা
মধুমতীর উত্তাল ঢেউ এখনও খোঁজে দূরন্ত বালক বন্ধু
বিষাদের কালো ছায়ায় ম্রিয়মাণ তাই গোমতী গঙ্গা সিন্ধু।
আগষ্ট এলেই মেঘের ছায়ায় ঢেকে যায় রোদ জোছনা
ব্রহ্মপুত্রের তীরে কেঁদে কেঁদে উড়ে সোনালী চিলের ডানা
বাংলা মা’র চোখে অশ্রু ঝরে কেঁদে উঠে রক্তবিন্দু
দুখিনী বাংলার মুখ হারিয়ে তোমায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু।
পদ্মার সরোবরে পদ্ম
********************এইচ এ গোলন্দাজ তারা
তারপরও মানুষ ভুলে যায় অতীত অনাবাদী মাঠের কষ্ট
পলাশী যুদ্ধের করুণ ইতিহাস
খাকি উর্দির বর্বরোচিত নয় মাস।
ছাইপাঁশ গেলা মানুষের কথা কেউ বিশ্বাস করে না
তবে বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের বৃত্তান্ত কিন্তু একদিন বেড়িয়েই আসে
সময়ের সারাংশ ব্যবচ্ছেদ করলেই বেড়িয়ে আসে মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ
হলুদ পাতায় বা সেলুলয়েডে কতটুকু সত্য নিসৃত হয় সময়ই তা বলে দেয়
যেমনটি কালো বিড়ালের আচঁড়ে ক্ষতবিক্ষত লাল-সবুজ ঠিকই মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়
বিশ্ব মোড়লের গালে চপেটাঘাত
প্রমত্তা পদ্মার ঢেউয়ের উপর সদম্ভে দাঁড়িয়ে ডাইনোসর
পদ্মার সরোবরে এক পদ্ম
খুশিতে হুইসেল বাজায় মেট্রোর মর্ডান হর্ণ
আকাশে সোনালী চিলের হাসি ।
যুগে যুগে কালে কালে জন্ম নেয় মীরজাফর মোশতাক
জন্ম নেয় কিছু বেজন্মা বেহায়া বেশরম
বাঙালির ভাতের কষ্টের দিনে নোনাজলে ভাসে ভাতের হাঁড়ি
সাম্রাজ্যবাদীর সেকি উল্লাস !
সেইদিন আর এইদিন !
জিঞ্জিরার মেশিন বানায় কিসিঞ্জারের দম্ভোক্তির দস্তানা
লাল সবুজ ব্র্যান্ডের প্যান্ট শার্ট এপ্রোন ঢেকে রাখে পৃথিবীর মাংসপেশি
কৃষকের ধানের গোলায় বিড়ালের বাচ্চা ওম নেয়
সুন্দর সুললিত আখ্যানে বিভোর হয়না মানুষ
আপন সরোবরে ফুল ফোটায়নতুন প্রজন্মের অপেক্ষায় থাকে আগামীর অনাবাদী অনন্য সূর্যোদয়
পাথরে পাথর না ঘষে বাঙালি আজ দিয়াশলাই জ্বালায়
বঙ্গবন্ধুর মার্চের মুক্তি সংগ্রামের আইল বেয়ে হেঁটে আসে অপরূপ বাংলার
হারানো প্রায় গৌরবের সৌরভ ।