
You must need to login..!
Description
মতিউল আলম,বিএমটিভি নিউজ ঃ ময়মনসিংহে মাত্র ১৩৩ টাকায় ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ১০৭ জন চুড়ান্তভাবে উর্ত্তীণ হয়েছেন। ৭টি ধাপ পেরিয়ে উর্ত্তীণরা এখন বাকী শুধু মেডিকেল পরীক্ষা।
গরীব কৃষকের মেয়ে সানজিদা আক্তার। স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকুরি করার। কিভাবে চাকুরী এই নিয়ে দুঃচিন্তায় ছিল। হঠাৎ একদিন জানতে পারলেন পুলিশে চাকুরি পেতে কোনো টাকা-পয়সা লাগে না। পরে আবেদন ফরম পূরণ করে লাইনে দাঁড়ালেন। যাচাই বাছাইয়ে মেধা ও যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হলেন। বিনা টাকায় চাকুরী হওয়ায় সে অনেক খুশী।
পড়াশোনা করছেন ময়মনসিংহ নগরীর মুসলিম গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে। দরিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে এতদূর এসে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হয় টিউশনি করে।
আজ তার সেই কষ্ট ঘোচানোর দিন। চূড়ান্ত নিয়োগ তালিকায় এসেছে তার নাম। বৃহস্পতিবার (০৪ নভেম্বর) চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার নিজের নামটি শোনার পর চোখ অশ্রুতে ভরে যায় সানজিদা ও তার বাবা নজরুলের।
শুক্রবার (৪ নভেম্বর) রাত ১২ টায় ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন্সে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ফলাফল ঘোষণার পর আনন্দে কেঁদে ফেললেন এ তরুণী। পাশে এসে দাঁড়ালেন বাবা কৃষক নজরুল ইসলাম (৪৫)। তিনি বলেন, আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন আইজক্যা (আজকে)। বিনা পয়সায় আমার মাইয়ার (মেয়ের) চাকরি হইছে। মাগনা (টাকা ছাড়া) চাকরি হয় এইড্যা (এটি) আইজই (আজ) দেখলাম। সানজিদার বাড়ি ময়মনসিংহ গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারি গ্রামে। বাবার ৭সদস্যের সংসারে বড় মেয়ে সানজিদা। সানজিদা বলেন, চাকুরিটা হওয়াতে সংসারের হাল ধরতে পারব।
কনস্টেবল পদে উত্তীর্ণ ফুলবাড়ীয়ার বিদ্যানন্দ গ্রামের লাভলী আক্তার। তার বাবা আবদুল হামিদ একজন অটোভ্যান চালক। বিনা টাকায় মেয়ের চাকুরী হওয়ার খবরে সে মহাখুশী। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। লাভলী আক্তার বলেন, ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকুরী করব। চাকরী হবে কিনা এই নিয়ে টেনসনে ছিলাম। পুলিশ লাইন মাঠে এসে পুলিশ সুপারের বক্তব্য থেকে বুঝতে পেরেছি। টাকা পয়সা লাগবে না। যোগ্যতার ভিত্তিতেই চাকরী হবে। দুইভোই-বোনের সে বড়। পুলিশ সুপার একজন সৎ মানুষ বলেই আমার চাকরীটা হয়েছে। আমি বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য হতে পেরেছি। দেশের জন্য নিজের জীবন বাজি রাখবো।
শুক্রবার রাত ১২টায় ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন্সে ফল ঘোষণার পর পুলিশ কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ এসব প্রার্থীরা এভাবেই সাংবাদিকদের কাছে নিজেদের অনুভূতির কথা জানান। চূড়ান্ত এ ফলাফল ঘোষণা করেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আহমার উজ্জামান।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আহমার উজ্জামান জানান, টিআরসি পদে অনলাইনে ৪ হাজার ২৮০ জন আবেদন করে। এরমধ্যে ২ হাজার পরীক্ষার্থী শারীরিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ৭১৬ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরে লিখিত পরীক্ষায় পাস করে ১৮৫ জন। এর মধ্যে থেকে ১০৭ জন চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ নজিরবিহীন ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আইজিপির শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে এ নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য কড়া নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমরা পেশাদারিত্ব, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি।
দেখা যায়, এবারের পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি প্রাপ্তদের বেশিরভাগই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। অনেকের বাবা নেই। জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে কোন মতে পড়াশুনার খরচ চালিয়ে চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করেছে। ফলে চাকরি হওয়ায় অনেকের চোখেই ছিল আনন্দাশ্রু।
ফুলপুরের অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী দুলাল মিয়ার (৫০) মেয়ে তানিয়া সুনতানা জুই। বর্তমান যুগে ঘুষ ছাড়া চাকুরী হওয়াটা বড় একটি পাওয়া। ঘুষ দিয়ে চাকুরীটা শুরু হলে সারা জীবন অনুসূচনায় ভোগতাম। মা নেই। মা বেঁচে থাকলে চাকুরীর খবরে অনেক ভাল লাগত। ৪ ভাইবোনের সে সবার ছোট। বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য হতে পেরে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করবো উল্লেখ করে ছোটবেলা থেকেই গল্প শুনেছি টাকা ছাড়া পুলিশে চাকরি হয় না। পুলিশ বদলে যাচ্ছে। আমরা এ বদলে যাওয়ার যুগের অগ্নি সাক্ষী। আমরা দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই কাজ করতে চাই। ###
ময়মনসিংহ সদরের দাপুনিয়া গ্রামের দিনমজুরের ছেলে আলমগীর হোসেন। পুলিশে চাকরি করা স্বপ্ন ছিল তার। তবে স্বপ্নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল দরিদ্রতা। বাবা বিল্লাল হোসেনের যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা সেখানে চাকরি যেন ছিল সোনার হরিণ।
তবে আলমগীর জানতে পারেন পুলিশে চাকরি পেতে লাগে না কোনো বাড়তি টাকা। মেধা যোগ্যতা হলেই মোট ১৩৩ টাকা খরচ করেই মিলবে পুলিশের চাকরি। পরে আবেদন ফরম পূরণ করে লাইনে দাঁড়ালেন। এরপর সব বাছাইয়ে মেধা ও যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হলেন আলমগীর। এখন তিনি বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত একজন সদস্য।
ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর বাবাকে ধরে কেঁদে ফেলেন আলমগীর। অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। দিনমজুর বাবার দরিদ্র পরিবারে ছেলে আমি। তিনবেলা ঠিকমতো খেতে পারি না। আমার তো লোক ধরার কোনো সুযোগ নাই। সেখানে আমি টিকে গেছি। নিয়োগে স্বচ্ছতা না থাকলে এটা সম্ভব হত না।
আলমগীরের বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমি খুব গরিব। পরনের লুঙ্গিটাও দেহুইন ছিড়া। কাম কইরা কোনোরহমে খাই। কিন্তু আমার পুলাফানরে আমি কাম করাইছি না, লেহাপড়া করাইছি। আমি কইছি তোমরা লেহাপড়া করো আর আমি কাম করি। আমার পুলা পুলিশে টিকছে। আমি খুশিতে বেহুঁশ অইয়া যাইতাছি। আমার জীবনে এত খুশি আর কোনোদিন অই নাই।’