You must need to login..!
Description
স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ ব্রহ্মপুত্র আমাদের সহায়। দু’বছরের অধিক সময় নদটি খনন চলার পরে এখন নদীর মাঝে বিশাল বিশাল চর জেগেছে। নদীতে পানির প্রবাহ বাড়েনি। ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে নদীর যেখানে একাধিক ধারা ছিল সেখানে একটি ধারা রেখে বাকি ধারাগুলো বন্ধ করা হয়েছে। কোথাও কোথাও নদীর স্বতঃস্ফূর্ত গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে, কার্যত, ব্রহ্মপুত্রকে খননের নামে সরু খালে পরিণত করা হয়েছে। খননের নামে বালুর ব্যবসা হয়েছে। শুক্রবার (৫ নভেম্বর) বেলা ১১টায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলন ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। ময়মনসিংহে ‘ব্রহ্মপুত্র প্রবাহের সংকট ও ভবিষ্যত’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনা সভায় এক লিখিত বক্তব্যে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
ব্রহ্মপুত্রকে ঘিরে নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পাশাপাশি এ আলোচনায় উঠে আসে- খননের পরও কেনো ব্রহ্মপুত্র নদে চর জাগছে তার কারণ চিহ্নিত করার বিষয়টি।
ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা ফেরাতে অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে খননকাজ। ২০১৯ সালের শেষ দিকে শুরু হওয়া কাজে অন্তত ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদের ২২৭ কিলোমিটার খনন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ)। যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের সংযোগস্থল জামালপুরের কুলকান্দি থেকে কিশোরগঞ্জের টোক পর্যন্ত নদটি আগামী ২০২৪ সালের জুনে খনন কাজ শেষ হওয়ার কথা।
কিন্তু একদিকে খনন হচ্ছে নদ, অন্যদিকে নদের মাঝে জেগে উঠছে চর। খননের পরও কেনো নদে চর জাগছে তা সকলের প্রশ্নের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চর জাগার কারণ শনাক্ত না করে খনন করলে শুধু অর্থের অপচয়ই নয়, সুফল পাবে না ব্রহ্মপুত্র- এমন শঙ্কার কথা জানান বক্তারা।
ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কবি ও সংগীতশিল্পী কফিল আহমেদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সিপিবির সভাপতি এমদাদুল হক মিল্লাত, পরিবেশ রক্ষা উন্নয়ন আন্দোলনের সভাপতি অধ্যক্ষ ড. মো. শিহাব উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শিব্বির আহমেদ লিটন প্রমুখ।
একই সঙ্গে সাত দফা দাবিও জানিয়েছেন তারা। দাবিগুলো হচ্ছে- ১৯৫০ সনের ‘প্রজাস্বত্ব আইন’ মোতাবেক সকল নদী চিহ্নিত করে দখলমুক্ত করা, সমস্ত নদী-জলাশয়, হাওর-বাওড় খাল উদ্ধার করা, কলকারখানা এবং নগরের দূষিত বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের খনন দুর্নীতিমুক্ত করা, চীন ও ভারত ব্রহ্মপুত্রে যেসব রাবার ড্যাম ও বাঁধ তৈরির প্রক্রিয়া চালাচ্ছে ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেন তার যৌক্তিক বিরোধীতা করে, প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে, ‘নদীর কোনো মালিকানা নাই, নদীকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না’- এই শাশ্বত ও সর্বজনীন নীতি সর্বত্র কার্যকর করা, সব ধরনের প্লাস্টিক ও প্লাস্টিক জাতীয় সব সামগ্রী নিষিদ্ধ করা।
আলোচনায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, খনন করার পরেও চর জাগলে তো কোনো সুফল আসবে না। চর জাগার কারণ জানতে পেয়ে প্রশাসনের কাছে চিঠি দেওয়া হবে। কারণ শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত ড্রেজিং কাজ বন্ধ রাখতে হবে। একটি গণশুনানির আয়োজন করে খননের নতুন পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
কবি ও সংগীতশিল্পী কফিল আহমেদ বলেন, ব্রহ্মপুত্র প্রবাহের যে সংকট তৈরি হয়েছে তাতে সবাই আতঙ্কগ্রস্থ। আমরা আর প্রতিশ্রুতি চাই না। আমরা প্রতিজ্ঞা চাই, আমরা আমাদের নিজেদের জীবন-দৃষ্টি দিয়ে যেন নদীকে বাঁচাতে পারি।
বিআইডব্লিউটিএ’র ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদার এ আলম জানান, খনন কাজের পরও কেনো নদে চার জাগছে সে বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তারা আলাপ করে করণীয় ঠিক করবেন।