বেগম জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিতে হবে- ময়মনসিংহে নজরুল ইসলাম খান

image

You must need to login..!

Description

মতিউল আলম, বিএমটিভি নিউজঃ, বিএনপির কেন্দ্রীয় জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি ও চিকিৎসার বিদেশে যেতে দিতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া যাবে না। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেয়া যাবে না। আইনের দোহাই দেন । এদেশে দন্ডপ্রাপ্তদের চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর একাধিক উদাহরন রয়েছে। বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে শুধু আইনে বাধা। তিনি আরো বলেন দেশের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিবে বিএনপি ও গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে  । এজন্য আন্দোলন ও সংগ্রাম করতে হবে। অন্যায়ভাবে ও মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে দেয়া হয়েছে বেগম খালেদা জিয়াকে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিএনপির মরা গাঙে নাকি জোয়ার আসবে না। দেখে যান ময়মনসিংহে। রাস্তায় রাস্তায় মানুষের স্রোত চলছে, জোয়ার চলছে। বাংলাদেশের নয়টি বিভাগীয় সদরে এমন বড় বড় সভা হচ্ছে। আগামী দিনে প্রত্যেক জেলায় জেলায় এ রকম সভা হবে। দরকার হলে প্রত্যেক উপজেলায় হবে, প্রতি হাটে-বাজারে হবে। আর সেই জোয়ারে ভেসে যাবেন আপনারা।

মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে ময়মনসিংহ নগরীর নতুন বাজারস্থ দলটির কার্যালয়ের সামনে  মহানগর বিএনপি আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, কারও যদি সুচিকিৎসার প্রয়োজন হয় আর যদি তাতে বাধা দেওয়া হয় তাহলে কি তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয় না? সমস্ত ডাক্তাররা বলছে খালেদা জিয়ার যে বয়স আর যে সব রোগ, সব মিলিয়ে তার যে অবস্থা সে অবস্থা থেকে তাকে সুস্থ করতে হলে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা দরকার। যেটা বাংলাদেশে সম্ভব না।

সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে দলটির কেন্দ্রীয় এ নেতা বলেন, কয়েকদিন পরপর রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী বিদেশ চলে যান চিকিৎসার জন্য। যে সেতুমন্ত্রী এত বক্তৃতা করেন উনাকেও দেখলাম কয়েকদিন আগে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে গিয়ে চিকিৎসা করে আসলেন। অনেক নেতারা যাচ্ছেন। তারা যেতে পারবে। তাদের কোনো দোষ নাই। বেগম খালেদা জিয়ার মতো এত অসুস্থ একটা রোগী যেতে পারেন না। তার বেলায় প্রশ্ন আসবে কেনো। তার কি অবদান বাংলাদেশের জন্য কম?

তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবেন না। আইন বলে কেউ দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তাকে জেলে গিয়ে আবেদন করতে হয়। দেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনদের বিদেশে থাকা লোককে মাফ করে দিয়েছেন। আপনাদের দলের ও সরকারের অনেক ব্যক্তির সন্তানদের জেলে যেতে হয়নি। তাদের দণ্ড মওকুফ করে দেওয়া হয়েছে।

নেতাকর্মীদের কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহবান জানিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের নেত্রী না শুধু, তিনি আমাদের মা। আমাদের সেই মায়ের মুক্তি কি আমরা চাই? উন্নত চিকিৎসা চাই? আমরা কি এদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই? সে জন্য কি যে কোনো আন্দোলনে রাজি আছি? যখন যে সিদ্ধান্ত আসে সেই সিদ্ধান্ত পালন করবেন?

এসব প্রশ্নের জবাবে উপস্থিত সকল নেতাকর্মীই হাত উচিয়ে দলের সকল সিদ্ধান্ত পালনের প্রতিজ্ঞা করেন। পরে তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি আপনারা কথা রাখবেন। আমার বয়স ৭৫ বছর। আমি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছি। তারপরও আপনাদের কথা দিচ্ছি আপনাদের সেই আন্দোলনে সেই ময়দানে আপনাদের সামনেই থাকব। বিজয় আমাদের হয়েছে অতীতে। আবারও আগামীতে বিজয় আমাদেরই হবে।

বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে দেশের সব বিভাগীয় সদরে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। কেন্দ্রীয় এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ময়মনসিংহের বিভাগীয় সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল নগরীর রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে। সেখানে পুলিশের অনুমতি না পেয়ে নগরীর নতুন বাজারস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সমাবেশ করে বিএনপি।

মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) দুপুর সোয়া ২টায় ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির অফিসের সামনে কোরআন তেলাওয়াতের মধ‍্য দিয়ে এ সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশে ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম, ওয়ারেস আলী মামুন ও নির্বাহী সদস্য ডা: মাহাবুবুর রহমান লিটন, আ: বারী ড‍্যানী, সাবেক এমপি শাহ শহীদ সারোয়ার, জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি ডা: রুবেল, সাধারণ সম্পাদক শামীম তালুকদার, নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহবায়ক ডা: আনোয়ারুল হক, সদস্য সচিব ডা: রফিকুল ইসলাম হেলালী, ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, কাজী রানা, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম, ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চু, উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবুল বাসার আকন্দ, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজার ইসলাম, শেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি আ: খালেক হাওলাদার প্রমূখ।জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ।

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন বাবলু ও উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার।

বেলা ১২টা থেকে সমাবেশ স্থলে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে এসে উপস্থিত হয়েছেন স্থানীয় বিএনপি ও তাদের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিপুল নেতাকর্মী। বিএনপির ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকমীদের মিছিলে নগরীর যানবাহন চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। কয়েক ঘন্টা নগরীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিগত ২বছর পর ময়মনসিংহে বিএনপি সবচেয়ে বড় সমাবেশ হয়েছে বলে নেতাকর্মী জানান।