You must need to login..!
Description
মতিউল আলম, বিএমটিভি নিউজঃ , বিভাগীয় নগরী ময়মনসিংহ এখন বড় দুঃখ অসহনীয় যানজট। ফলে প্রতিদিন নগরবাসীর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে এখন আর কেউ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। এর উল্লেখ্য কারণগুলোর মধ্যে নগরীর বুক ছিড়ে চলে যাওয়া বিশাল রেলপথ ও প্রায় এক ডজন রেল ক্রসিংয়ে প্রতিদিন ৮ঘন্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। জনসংখ্যা ও যানবাহন বেড়েছে বাড়েনি সড়ক। এছাড়া অপ্রশস্ত রাস্তা। রাস্তার পাশে অপরিকল্পিত বিদ্যুত ও টিএন্ডটির খুটি। আরকে মিশন রোড ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড, ফুটপাত দখল করে হকার বসা ও দোকানীরা রাস্তা দখল করে মালপত্র রাখা অন্যতম। মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করলে কিছুদিন পর আবার যেইসেই। যানজট নিরসনে নগর থেকে রেলপথ সরানো অথবা নগরীর বাইরে থেকে স্টেশন পর্যন্ত আন্ডার গ্রাউন্ড রেলপথ স্থাপন, অপ্রশস্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো দ্রুত প্রশস্তকরণ। যে হারে শহরে বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে নগারায়ন না করলে আগামী দিনে অচল নগরীতে পরিণত হবে ময়মনসিংহ। এই মূহুর্তে দুরদর্শী চিন্তা না করলে সরকারের অবকাঠামো উন্নয়ন বিফলে যাবে। বিশিস্ট জনসহ নগরবাসী এমনটাই বলেছেন।
বর্তমানে নগরীর গাঙ্গিনারপাড়, নতুন বাজার মোড়, স্বদেশী বাজার আমপট্টি মোড়, চড়পাড়া মোড়, ব্রীজের মোড়, জিলাস্কুল মোড়, জুবলীঘাট মোড়, রাজবাড়ি সংলগ্ন গঙ্গাদাশ গুহ রোড মোড়, টাউন হল মোড়, কাঁচিঝুলি মোড়, সানকিপাড়া বাজার রেলক্রসিং, নাসিরাবাদ স্কুল রেলক্রসিং, নতুন বাজার রেলক্রসিং, সি,কে ঘোষ রোড রেলক্রসিং, মেডিকেল কলেজ হোস্টেল গেইট রেলক্রসিং, কৃষ্টপুর-পাটগুদাম রেলক্রসিং, খাগডহর ঘুন্টি রেলক্রসিং।
এই সকল জায়গাগুলোতে যানজট নিত্য নৈমত্তিকি ব্যাপার। সারা নগর জুড়ে নির্ধারিত সময়ে কোথাও পৌছানো যাবে এই গ্যারান্টি এখন আর দেওয়া যায় না। ময়মনসিংহ বিভাগ শহরবাসী এবং ময়মনসিংহ সদরবাসী এটা অনুভব করছেন। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের একেবারে মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া রেল পথটি প্রধান কারণ মনে করেন অনেকেই। সারাদিন ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৮ ঘন্টারও বেশী সময় লাগে রেল যাতায়াতের কারনে।
সুতরাং সকল ময়মনসিংহ শহরবাসী ময়মনসিংহের সদরবাসী সোচ্চার কন্ঠে উচ্চারণ করতে হবে ময়মনসিংহ নগরীর ভেতর দিয়ে চলমান রেলপথটি অপসারণ করে বেগুনবাড়ি থেকে দাপুনিয়া চুরখাই হয়ে কালীবাজার দিয়ে ঢাকায় চলে যাবে। অথবা নগরী এলাকায় আন্ডার গ্রাউন্ড স্টেশনসহ রেললাইন স্থাপন করে উপর দিয়ে প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ করে এসমস্যা স্থানীয়ভাবে সমাধান সম্ভব। তা না হলে যানজটের কারনে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠতে বাধ্য হবে। ঢাকা নগরীর মতো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
ময়মনসিংহ জেলা ট্রাফিক বিভাগের টিআই(প্রাশসন) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ময়মনসিংহ নগরীতে ১১টি রেলক্রসিং রয়েছে। সারাদিনে ৪৮বার ট্রেন আসা যাওয়া করে। প্রত্যকেটি রেলক্রসিং ৮/১০ মিনিট ট্রেন পারাপারে বন্ধ থাকে। অনেক সময় লম্বা মালবাহী ট্রেন চলাচলে ১৫/২০ মিনিট সময় লাগে। এইভাবে সারাদিনে ৮ ঘন্টা শহরে যানবাহন চলাচল স্থবির হয়ে যায়। সারা নগরের যানজটের উপর রেলক্রসিং এর বিষয়টি মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলে। যার ফলে ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, রেল পথ বা রেলক্রসিংয়ের কারণে এখন সারা নগর জুড়েই যানজট লেগে থাকে। আগামী কয়েক বছরে বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে না উঠলে ময়মনসিংহ নামক বিভাগীয় শহরটি অচল হয়ে পড়বে। বহুতল ভবনের আধিক্য এই বিভাগীয় শহরে বিদ্যমান। এই শহরের ব্যবসা, বাণিজ্য, তথা কর্মসংস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অগ্রসরমান বিশালতা আরও অনেক বেশি বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তথা মার্কেট গড়ে উঠছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন যাত্রার মানকে সহজ করার লক্ষ্যে ময়মনসিংহ নগরের ভেতর দিয়ে চলমান রেলপথটি দ্রুত সরিয়ে নিয়ে ময়মনসিংহ নগর থেকে ১০/১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। আশাকরি ময়মনসিংহ তথা সদরবাসী এগিয়ে আসবেন। এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে আনা প্রয়োজন। তাহলেই বিভাগ অর্জনের মত রেললাইন সরে ব্রহ্মপুত্র তীরে শহরটি হবে অর্পুব নৈর্সগকি সৌর্ন্দয মন্ডিত একটি শহর।
যানজট নিরসনে সবাই উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়নে কেউ উদ্যোগ নেয় না। এজন্য নগরবাসী হতাশ। ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নূরুল আমীন কালাম বলেন, নগরীর অসহনীয় যানজটে নগরবাসী অতিষ্ট। যানজট নিরসনে ও শহরের কেন্দ্র স্থল থেকে রেল লাইন অপসারণসহ ৩দফা দাবীতে আমরা জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান করব ও মানববন্ধন কর্মসূচী ঘোষনা করব অচিরেই।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ডাঃ তারা গোলন্দাজ নগরীতে অসহনীয় যানজটের জন্য মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি সম্প্রতি টাউনহলে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের করোনা টিকাদানের সুপারভাইজার, টিকাদানকারী, স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মাননা ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি শংকর সাহা যানজট নিরসনে বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজি দৃষ্টি কামনা করেছেন। শহরে এখন অসহনীয় যানজট।
যানজটের অন্যতম আরেকটি কারণ ময়মনসিংহ নগরীর ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড। নগরীর ঠিক মাঝখানে আর.কে মিশন রোডে অবস্থিত এই বাসস্ট্যান্ডের কারণে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নগরবাসীকে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়। ময়মনসিংহ নগরীর আর.কে মিশন রোড যা ত্রিশাল বাসন্ট্যান্ড হিসেবে পরিচিত। এই বাসস্ট্যান্ড থেকে শালবন সুপার নামে একটি সার্ভিসের প্রতিদিন ৫২টি বাস ত্রিশাল হয়ে ভালুকা ও নান্দাইল উপজেলার কানুরামপুর পর্যন্ত যাওয়া আসা করে। আয়তনে ছোট এই বাসন্ট্যান্ডে সবসময় ৮ থেকে ১০টি বাস থাকে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত পাঁচ মিনিট পরপর বাস যাওয়া আসা করে। প্রতিটি বাস কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ বারের বেশি বিভিন্ন রুটে যাওয়া আসা করে। প্রতিদিন সাড়ে ৩০০ বার যাত্রীবাহী ৪০ সিটের বাসগুলো যাতায়াত করায় যানজট লেগেই থাকে শহরের ভেতরে।
নগরীর আরকে মিশন রোডে এলাকার বাসিন্দা সেলিম। তিনি প্রতিদিন সকাল ১০ টার মধ্যে তার ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যান। তিনি বলেন, ‘একেতো শহর জুড়ে অটোরিকশা তারপর আবার বাসের চাপ রাস্তায় বের হলে অসহ্য লাগে।’ বদরের মোড় এলাকার ব্যবসায়ী হারুন বলেন, ‘এই ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডের শালবন সুপার বাস সার্ভিসের কারণে আর.কে মিশন রোড ও মেডিক্যাল কলেজ গেইট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। একটার পর আরেকটা শালবন সুপার আসছে যাচ্ছে। যানজটের কারণে মনে হচ্ছে শহরটা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। শহরে ভেতরে বাসস্ট্যান্ড থাকে তা ভাবতেও অবাক লাগে। কর্তৃপক্ষ এগুলো দেখেও না দেখার মতো থাকেন কি কারণে তা আমাদের জানা নেই।’
ময়মনসিংহ জেলা মটর মালিক সমিতির মহাসচিব মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘শহর থেকে ৫২ টি শালবন পরিবহণ এবং কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০টির মত বাস চলাচল করে। তবে এগুলো যানজটের প্রধান কারণ না। কারণ হচ্ছে অটোরিকশা। নগরীতে প্রায় ১০ হাজারের মতো অটোরিকশা রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে কোন দিনই যানজট কমবে না। আর এর জন্য কারা দায়ী তা সকলেই জানে।’
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, ‘নগরীতে যানজট নিরসনে আমরা ফুটপাত দখলমুক্ত করছি। অনেক সড়কে ফুটপাত দখলমুক্ত হওয়ায় চলাচলে গতি বেড়েছে। ব্যাপক পরিসরে শহরকে যানজট মুক্ত করতে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানো হবে।’
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘যানজট ময়মনসিংহ শহরের অন্যতম সমস্যা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আশা করা যাচ্ছে যানজট নিরসনের বিষয়ে আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব।’
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো.ইকরামূল হক টিটু বলেন, যানজট নিরসনে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ট্রাফিক বিভাগ, বিআরটিএ, পরিবহন মালিক সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন ও সড়ক ও জনপথ সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যানজটের অন্যতম কারণের মধ্যে নগরের ভেতরে ১১টি রেলক্রসিং, নগরের ভেতর খুবই অপ্রশস্ত সড়ক ও জনপথের ৩৫ কিলোমিটার প্রধান রাস্তা। যানজট নিরসনে শহরের ভেতর সওজের রাস্তাগুলো দ্রুত প্রশস্ত করতে হবে। রেললাইন অপসারণের জন্য বহু আগেই প্রস্তাব পাঠিয়েছি। সিটি করপোরেশনের রাস্তাগুলো প্রশস্থকরণে কাজ চলমান। পাটগুদাম ব্রীজ মোড় বাসষ্ট্যান্ড যানজটের অন্যতম কারণ সরানোর জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম তা মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। একটি ট্রাক টার্মিনাল করার জন্য প্রস্তাব দিয়ে ছিলাম তা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নগরীতে ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ছে এজন্য গাড়ি পার্কিং এরিয়া করতে হবে। ফুটপাত দখল মুক্ত রাখতে হবে। নগরীতে অবৈধ যানবাহন ও লাইসেন্স বিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রন সংশ্লিস্ট বিভাগ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবেই যানমুক্ত নগর গড়ে তোলা সম্ভব হবে। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, নির্মাণ সামগ্রী রাস্তা ফেলে রেখে যানবাহন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি করে। এব্যাপারে নাগরিকদেরকে সচেতন হতে হবে। তিনি আরো বলেন, ৩ বছর আগে মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তারা ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড সরিয়ে মাসকান্দা টার্মিনালে যাবে। সেখানে তাদের জন্য জায়গাও করে দিয়েছিলাম। কিছুদিন তারা সেখানে বাস রাখলেও যাত্রী সংকটে শিক্ষার্থীদের দোহাই দিয়ে আবারও আর. কে মিশন রোড ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড ব্যবহার করছে। এখন দেখা যাক এ বিষয়ে নতুন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কিনা।
ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়াহেদুজ্জামান বলেছেন, ময়মনসিংহ নগরী ভেতর ৩৫ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্থকরণের কোন পরিকল্পনা নেই।
এদিকে পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান এর নির্দেশনায় কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ ও ওসি তদন্ত ফারুক আহমেদ এর নেতৃত্বে ফুটপাত দখলমুক্তকরণে হকার উচ্ছেদ ও অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে।