কর্মসংস্থানের অভাবেও দুর্যোগগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ–প্রফেসর ড.হোসনে আরা বেগম

image

You must need to login..!

Description

স্টাফ রির্পোটার,বিএমটিভি নিউজঃ  আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষ্যে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়, দৈনিক যুগান্তর এবং উত্তর জনপদের শীর্ষ এনজিও বগুড়ার টিএমএসএসের যৌথ উদ্যোগে ঢাকায় গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা বলেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে রোল মডেল হিসাবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। তবে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ এবং ভূমিকম্প মোকাবিলার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এখনো ঘাটতি আছে। মাটির নিচে সেবা সংস্থাগুলোর সরবরাহ লাইন কোথায় কীভাবে রয়েছে-সেটির ম্যাপিং নেই। বেজমেন্ট লাইনের ডাটা সংগ্রহ করতে হবে। অন্যথায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হচ্ছে। একইসঙ্গে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। গত মঙ্গলবার দৈনিক যুগান্তর কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস-২০২২ উপলক্ষ্যে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। ১০ মার্চ জাতীয় দুর্যোগ প্রশমন দিবসকে সামনে রেখে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
এ বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন যুগান্তরের উপসম্পাদক এহসানুল হক বাবু। এতে বক্তব্য রাখেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন ড. মো. জিল্লুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন, দেশের শীর্ষ স্থানীয় এনজিও টিএমএসএস’র প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক ও আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের পরিচালক প্রফেসর ড.হোসনে আরা বেগম। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যুগান্তরের সিনিয়র জিএম আবুল খায়ের চৌধুরী,দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব সুব্রত পাল চৌধুরী, টিএমএসএস উপদেষ্টা সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, পরামর্শক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বলেন সারা বিশ্বকে দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে শিক্ষক মানার পরামর্শ দিয়েছেন বান কি মুন। অপরদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ যা করে তা সারা বিশ্বে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।তিনি আরও বলেন,দুর্যোগ হিসাবে ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড প্রণয়ন করা হয়েছে। এই কোড অনুযায়ী সাড়ে ৭ রিকটার স্কেল স্ট্যান্ডার্ড ধরে এখনকার ভবনগুলো নির্মিত হবে। প্রধান অতিথি বলেন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহনীয় হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাদের ডেল্টা প্ল্যান দিয়েছেন। এটা হলে বাংলাদেশ সব দুর্যোগে সহনীয় রাষ্ট্র হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে যাবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের বার্তা আমরা আগ থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে পেয়ে থাকি। কিন্তু মানবসৃষ্ট দুর্যোগের বার্তা আমরা আগে জানতে পারি না। এ কারণে ওই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হিমশিম খেতে হয়। মানবসৃষ্ট দুর্যোগের পূর্ব প্রস্তুতি হচ্ছে জনসচেতনতা। আমরা সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি। ড.এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন,সঠিক তথ্য না থাকলে দুর্যোগ মোকাবিলার যে কোনো পরিকল্পনা স্বাভাবিকভাবে ব্যহত হবে।
আমরা এখন বলছি, দুর্যোগ প্রশমন করব। এটি করতে হলে বেজমেন্ট ডাটাগুলো সংগ্রহ করতে হবে এবং ঝুঁকিগুলো কি আছে তা বের করে তা কমানোর পথ খুঁজব। এজন্য বেজলাইন ডাটাবেজ থাকা প্রয়োজন। প্রস্তুতি না থাকলে সব দুর্যোগই মানবসৃষ্ট। বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় পৃথিবীর মধ্যে সমাদৃত। এর মূল কারণ হচ্ছে,ধনী বা গরিব দেশের তুলনায় আমাদের প্রস্তুতি অনেক ভালো। এ কারণেই বন্যা ও জলোচ্ছাসের মতো দুর্যোগে মানুষের মৃত্যুর হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসতে পেরেছি। পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে আমাদের প্রস্তুতি অনেক বেশি। তিনি বলেন, প্রস্তুতির শেষ বলে কিছু নেই। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিটি দুর্যোগই আমাদের নতুন করে নতুন নতুন কিছু শিখিয়ে দেয়। প্রতিটি দুর্যোগের ধরন ও মাত্রা ভিন্ন হয়। তাই সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় সব সংস্থারই প্রস্তুতি সময়ে সময়ে আপডেট করতে হবে। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।
মো. আতিকুল হক বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় ত্রাণকেন্দ্রিক চিন্তার থেকে মানুষকে সক্ষম করার বিষয়টি বেশি কার্যকর। তাই সরকার দুর্যোগ ঘটে যাওয়ার পর ত্রাণ দিয়ে সহায়তার বদলে দুর্যোগ ঘটার আগেই যাতে মানুষের সক্ষমতা ও সচেতনতা বাড়ে সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ত্রাণ কার্যক্রমও চলবে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিধস মোকাবিলায় আমাদের সফলতা আছে। প্রস্তুতির পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর কারণে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রফেসর ড.হোসনে আরা বেগম বলেন, মানুষের কর্মসংস্থানের অভাবেও দুর্যোগগ্রস্ত হচ্ছে। এই দুর্যোগ মোকাবিলায় আমি ২৪টির মতো প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছি। এক লাখের মতো সমিতি করেছি। এ সমিতির মাধ্যমে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছি, তাদের মধ্যে ঋণ দিচ্ছি। এর মাধ্যমে দুর্যোগ প্রশমনে আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, মানবসৃষ্ট দুর্যোগের বেশি শিকার হয় জ্ঞানহীন মানুষেরা। মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি,কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং প্রযুক্তি জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়লে দুর্যোগ থাকবে না। সার্বিক উন্নয়ন ও দুর্যোগ প্রশমন করতে নারীদের উন্নয়ন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, রাজধানীর যানজট কমাতে অফিসের বিকেন্দ্রীকরণ করাকে দুর্যোগের আওতায় আনা হোক।